'পড়িস না কেন বড় হয়ে মস্তান হবি'' ৩৮ খুনের পর সেই শ্যামলই হুব্বা!
২৪ ঘন্টা | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ধর্মডাঙা প্রাথমিক স্কুলে হুব্বার সহপাঠী ছিলেন সীতারাম। তার কথায় পড়াশোনায় মোটেই ভালো ছিল না শ্যামল। দিদিমনি বলতেন পড়িস না কেন বড় হয়ে মস্তান হবি? হুব্বা বলত হ্যাঁ।সত্যি বড় হয়ে মস্তান হয়েছিল শ্যামল দাস ওরফে হুব্বা। পাড়ার ফুটো মস্তান নন এমন মস্তান যে তার মৃত্যুর এক যুগ পর তাকে নিয়ে একটা গোটা সিনেমা তৈরী হয়ে গেল। ব্রাত্য বসুর পরিচালনায় ‘হুব্বা’ সিনেমা তৈরী হয়েছে। তাতে হুব্বার চরিত্রে বাংলাদেশের মুশারফ করিম অভিনয় করেছেন। হুব্বার পাড়ায় এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কোন্নগর ধর্মডাঙার বাসিন্দারা।
কোন্নগর স্টেশন থেকে রেল লাইন বরাবর উত্তর দিক মানে রিষড়ার দিকে যেতে কিছুটা এগোলেই ধর্মডাঙা। সেই ধর্মডাঙার মোরেও মুশারফ করিমের ছবি হুব্বা সিনেমার পোস্টার পরেছে। কোন্নগর স্টেশন রোড সহ হুগলির বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারে ছেয়েছে। কারন পরিবেশকরা মনে করছেন হুব্বার বাড়ি তার নিজের এলাকার মানুষ বেশি করে এই সিনেমা দেখবেন।যেমনটা বলছেন হুব্বার পাড়া প্রতিবেশিরা। অনেকেই বলছেন সিনেমাটা কেমন হয়েছে দেখবেন। তবে হুব্বার ভাইপো সঞ্জয় ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি। তিনি জানান, কাকাকে নিয়ে সিনেমা হোক আমরা চাইনি।হুব্বা বর্ণময় চরিত্র ছিল তাই তাকে নিয়ে সিনেমা। অবশ্যই হুব্বা একটা ধূসর চরিত্র।শ্যামল দাসের বাবা শ্রীদূর্গা কটন মিলের শ্রমিক ছিলেন। ছোটো থেকেই অপরাধ জগতে নাম লেখানো শ্যামল পরবর্তি সময়ে হুগলি হাওড়ার অপরাধ জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন।আরও পড়ুন:২০০৩ সালে কোন্নগরের কংগ্রেস নেতা মানস রায় চৌধুরীকে পঞ্চায়েত ভোটের সময় খুনের অভিযোগ ওঠে হুব্বার বিরুদ্ধে। তার পরে একাধিক খুন, তোলাবাজি, অপহরন; একজন গ্যাংস্টারের বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ হতে পারে তা সবই হুব্বার বিরুদ্ধে হয়। শোনা যায় ৪০টি মামলা ছিল হুব্বার বিরুদ্ধে।২০০৫ সালে সল্টলেকের একটি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে গিয়ে সিআইডি-র হাতে ধরা পরে হুব্বা। একই সঙ্গে ধরা পরে তার খতরনাক সব সঙ্গীরা। রমেশ মাহাত, নেপু গিড়ি, বেনারসি বাপি, চিকুয়া, সরলা সবাইকে ধরে কোন্নগর ক্রাইপার রোড বারুজীবি সহ উত্তরাপারা রিষড়া থানা এলাকায় কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরায় পুলিস।কিছু দিন জেল খাটার পর প্রমানের অভাবে জামিন পেয়ে যায় হুব্বা ও তার দলবল। আসলে হুব্বার ভয়ে এতটাই সন্ত্রস্ত হয়ে থাকত মানুষজন এমনকি ভিক্টিমের পরিবার পর্যন্ত সাক্ষী দিত না। ফলে অপরাধ করলেও সাজা হত না।সেই হুব্বা পরবর্তী সময়ে ঠিকাদারী, নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় টাকা ঢালতে শুরু করে। তোলাবাজির পাশাপাশি চলতে থাকে জমি প্লটিং, প্রমোটিং-এর কাজ। যে হুব্বা এক সময় ছিঁচকে চুরি ছিনতাই করত, কারখানার লোহা বেচে দিত, সেই হয়ে ওঠে হুগলির ত্রাস। আর অপরাধের এলাকা দখল নিয়ে কোন্নগর কানাইপুরের বাঘার সঙ্গে লড়াই ছিল।২০১০ সালে পুরসভা ভোটে কোন্নগর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দলে মনোনয়ন দাখিল করেও পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে হুব্বা। শ্রীরামপুর মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়নের দিন এমন র্যালি করেছিল দক্ষিনী সিনেমায় সেই দৃশ্য দেখা যায়।২০১১ সালে চার দিন নিখোঁজ থাকার পর বৈদ্যবাটি খালে মৃতদেহ মেলে হুব্বার। তদন্তে উঠে এসেছিল হুব্বার সঙ্গীদের নাম। শোনা যায় রমেশ মাহাতর নির্দেশে নেপু গিড়ি হুব্বাকে খুন করেছিল। কারন যে কায়দায় খুন করা হয়েছিল তাকে বলা হত পৈতে কাট।আরও পড়ুন:পেট চিরে একই ভাবে অনেক খুন করেছিল হুব্বা। আর নেপুকে হাতে ধরে সেই কাজ শিখিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। সেই নেপু তার গুরুর উপরই সেই বিদ্যা ফলিয়েছিল কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি।হুব্বার মৃত্যু হয়েছে বারো বছর আগে। তার ভয় এখনও পুরোপুরি কাটেনি। হুব্বার এক দাদা বাচ্চু এখন বাড়ি থেকে প্রায় বেরোন না। পরিবারের কেউ আর সেই সব নিয়ে আলোচনা করতেও চাননা।হুব্বার ছেলেবেলার বন্ধু পলাশ মিত্র বলেন, ‘ছোটো থেকেই এক সঙ্গে বড় হয়েছি। ও আমাদের বাড়িতে আসত। অনেক মানুষের উপকার করেছে। তবে ও ওর জীবন বেছে নিয়েছিল। এখন হুব্বাকে নিয়ে সিনেমা হয়েছে দেখব কেমন হল’।হুব্বার প্রতিবেশী তারাপদ সামন্ত বলেন, ‘দাদা বলে সম্মান করত। এলাকায় কোনও অত্যাচার করত না। একটা মেয়ের বিয়ে আটকে গিয়েছিল। ফেলু মোদকের দোকান থেকে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে বরানগরে বিয়ে দেয়। আমরা তো সিনেমাটা দেখব’।স্থানীয় তৃনমূল নেতা এবং রিষড়ার পঞ্চায়েত সদস্য গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘এলাকায় তাকে নিয়ে ভালো মন্দ মিশিয়ে একটা মিথ ছিল। অনেক বেআইনি কাজ করেছেন, আবার গরীবদের উপকার করেছেন। এলাকার মানুষ তার ভয়ে তটস্থ থাকত। এমন একটা রঙিন চরিত্রকে নিয়ে সিনেমা তৈরী হওয়ায় উৎসাহ বেড়েছে বাসিন্দাদের’।