বড় দায়িত্বে সৃজন-প্রতীকউর, ৬ বছর পর নেতৃত্বে বদল এসএফআই-এর!
২৪ ঘন্টা | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
মৌমিতা চক্রবর্তী: সামনে বড় কাজ, ৬ বছর পর এবার নেতৃত্বে বদল হতে চলেছে এসএফআই-এর। সৃজন, প্রতীক উর জুটি ৬ বছর এসএফআই-এর কাজ সামলেছেন। এবার এই যুগলকে আরও বড় দায়িত্ব দিতে চায় আলিমুদ্দিন। লোকসভা ভোটের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তাদের। সূত্রের খবর, দুজনেই আলিমুদ্দিনকে জানিয়েছেন তাঁরা আর এসএফআই-এর কাজ করতে আগ্রহী নন। এখন দুজনের পারফরম্যানসেই খুশি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তাই নতুন কাজের দায়িত্ব দিতে চলেছে এই ২ জনকে।আগামী ২২-২৪ জানুয়ারি মালদা শহরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর ৩৮ তম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন। ২৪ তারিখ মালদায় প্রকাশ্য সমাবেশে প্রতীক উর রহমান, সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধর, ময়ূখ বিশ্বাসদের পাশাপাশি বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী প্রমুখের। প্রবল শীতেও ওই দিন মালদা শহরে বিশাল জনসমাবেশ করার উদ্যোগ নিচ্ছে বামেরা। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এসএফআই স্লোগান দিয়েছে - স্কুল কলেজে শপথ করো, বিভেদ রুখে স্বদেশ গড়ো। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মালদা তো বটেই, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও বিভিন্ন অভিনব কর্মসূচীর উদ্যোগ নিচ্ছে এসএফআই। হুগলির উত্তরপাড়ায় ১৯ জানুয়ারি তাদের আয়োজিত মিউজিক্যাল ফেস্টে দেবদীপ মুখার্জির পাশাপাশি সলিল চৌধুরীর প্রাক-শতবর্ষ পালনে সঙ্গীতানুষ্ঠান করবেন প্রখ্যাত দেবজ্যোতি মিশ্র। প্রসঙ্গত, দেবজ্যোতির সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে সলিল চৌধুরীর সাথে কাজ করার। তাই তাঁকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত আয়োজকরা। পরদিন, অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি বোলপুরে 'মন্টু ও মার্কস' নাটকটি মঞ্চস্থ করবে সৌরভ পালোধি-তূর্ণা দাসদের 'ইচ্ছেমতো'। এছাড়াও আলিপুরদুয়ারের চা-বাগানে আদিবাসী ছাত্রীদের নিয়ে ফুটবল ম্যাচ, লড়াই-আন্দোলনের বিভিন্ন ছবির সমাহার নিয়ে জলপাইগুড়িতে ফটোগ্রাফি এগজিবিশন, উত্তর ২৪ পরগনায় স্ট্যান্ড আপ কমেডি ও ফ্ল্যাশ মব, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মৃণাল সেন শতবর্ষে ফিল্ম স্ক্রিনিং বা প্যালেস্তাইনের সংহতিতে লাইভ পেইন্টিং - বিভিন্ন চোখে পড়ার মতো প্রচার কর্মসূচী এসএফআই সংগঠিত করছে রাজ্যজুড়ে।ওদিকে মহানগরীর বুকে কলেজ স্ট্রিটে রাস্তার উপরেই একটি বইমেলা আয়োজন করেছে এসএফআই, যা উদ্বোধন করেছেন বিমান বসু। কোচবিহারে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জনজাতির মানুষকে নিয়ে 'ঐক্যের ম্যারাথন' বা পশ্চিম মেদিনীপুরে ভগৎ সিং বা মাস্টারদা সূর্য সেনের জীবন অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা প্রদর্শনের মত রাজনৈতিক বার্তাবহ কর্মসূচিও রয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করা এসএফআই'এর প্রচলন। সাধারণত সেখানে বাম নেতারাই বক্তা হন। এবার এক্ষেত্রে ছক ভাঙছে এসএফআই। উলুবেড়িয়াতে তাদের সেমিনারে বক্তা হিসেবে থাকছেন পরিযায়ী শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, বন্ধ কারখানার কর্মচারী প্রভৃতি পরিবারের সন্তানরা। সৃজন-প্রতীক উরদের বক্তব্য, সরকারি দুর্নীতি-অব্যবস্থায় আদতে যে অংশের লেখাপড়ায় ক্ষতি হয়েছে, তাদের মুখ দিয়েই তাদের ভাষ্য তুলে আনতে চান তাঁরা। বিগত কয়েক বছরে জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে হোক, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হোক বা ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে - বারবার বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, আন্দোলনের মাধ্যমে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এসএফআই। বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়ের পর এবছরই প্রথমবার তারা ৮ লক্ষ সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে রাজ্যজুড়ে।ছাত্রনেতারা জানাচ্ছেন, শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে টানা রাস্তায় থাকার সুফল পাচ্ছে সংগঠন। সৃজন-প্রতীক উর মনে করছেন, মিড ডে মিলে বেনিয়ম থেকে গবেষণার ফেলোশিপ বন্ধ হয়ে যাওয়া, ছাত্রদের সমস্যা প্রচুর। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হাজার হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া, কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ড্রপআউট হয়ে যাওয়া আসলে শিক্ষাব্যবস্থার ভেঙে পড়া পরিকাঠামোকেই দিকনির্দেশ করে। ছাত্রদের এই সমস্যাগুলিকে তুলে ধরার কারণেই ছাত্রসমাজ তাঁদের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে বলে সৃজন-প্রতীক উরদের দাবি। তবে তাঁরা মানছেন, শুধু যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি নয়, রাজ্যের অন্যান্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও টিএমসিপি'র সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে নতুনভাবে সংগঠন গড়ে তোলার যে কাজে তাঁরা হাত দিয়েছেন, তা সম্পন্ন করতে এখনও বেশ কিছুদূর যেতে হবে এসএফআই-কে। আসন্ন সম্মেলনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠনের শক্তিসঞ্চয়, ও আরএসএস-এর বিরুদ্ধে আদর্শগত প্রস্তুতিকেই মূল পাখির চোখ করছেন তাঁরা।সম্প্রতি ব্রিগেড সমাবেশ উদ্দীপনা যুগিয়েছে তরুণ প্রজন্মের বাম কর্মীদের। অগ্রগতির আবহেই এসএফআই-এর সম্মেলন নতুন করে অক্সিজেন দেবে বাম শিবিরকে, আশাবাদী ছাত্রনেতারা। এখন এসএফআই-এর অন্দরে নেতৃত্বের দাবিদার হিসেবে একাধিক নতুন নাম ঘোরাফেরা করছে। এপ্রসঙ্গে এসএফআই নেতৃত্বের বক্তব্য, এটাই এসএফআই-এর সাফল্য যে তারা নতুন একটা টিম তৈরি করতে পেরেছেন।