কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় গ্রাম, সরকারি পরিষেবা নিয়ে প্রথমবার পৌঁছল সরকারি প্রতিনিধি!
২৪ ঘন্টা | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪
নারায়ণ সিংহ রায়: বাসিন্দা ভারতের হলেও বসবাস কাঁটাতারের ওপারে। পৌঁছয় না সরকারি পরিষেবা। পুলিস ও বিএসএফ বাদে এই প্রথম গ্রামে কোনও সরকারি প্রতিনিধি পৌঁছাল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এমন অনেক গ্রাম আজও বর্তমান যারা কাঁটাতারের ওপারে বসবাস করলেও বাসিন্দা ভারতের। কারণ জিরো পয়েন্টের আগে সেই সব গ্রাম। সেই রকমই এক গ্রাম ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা চম্পদগছ গ্রাম। প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের বসবাস সেখানে। ভোটাধিকার থাকলেও সরকারি পরিষেবা থেকে আজও বঞ্চিত। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে শাসন কেন্দ্রীয় বাহিনীর। নিজের পরিচয়পত্র সর্বদা বহন করে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় তাদের। নিত্যদিন বাজার, স্কুল, কলেজ যাওয়ার জন্য বিএসএফের হাতে নথি জমা রেখে অনবরত যাতায়াত করতে হয় সাধারণ গ্রামবাসীদের। রাজ্যের একাধিক পরিষেবা সম্পর্কে অবগত নয় বহু মানুষ। লক্ষীর ভান্ডার বা কন্যাশ্রীর মত পরিষেবা সম্পর্কেও তাদের সম্যক কোন ধারনা নেই। পরিস্থিতির কথা শুনে এলাকার তথা রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন পৌঁছান চম্পদগছ গ্রামে। বিএসএফের সহযোগীতায় কাঁটাতারের ওপারের চম্পদগছ গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষদের সাথে কথা বলে। কথা বলেন বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প নিয়ে। সিংহভাগ মানুষ রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্প সম্পর্কে জানেনই না। গ্রামবাসীরা বিডিওকে অভিযোগ জানান , ভোটের সময় তারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ভোট প্রদান করেন। কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্রের কোন সরকারি পরিষেবাই তাদের কাছে পৌঁছায় না৷ দেশ ভাগ হওয়ার আগে থেকে তাদের এখানে বসবাস। কাঁটাতার ছুঁয়ে গিয়েছে তাদের গ্রাম। জিরো পয়েন্ট থেকে খানিকটা আগে হওয়ায় তারা ভারতের বাসিন্দা হয়েছেন। ব্যাস এইটুকুই। চাষবাসই মূল জীবিকা। তবে নতুন প্রজন্ম খানিকটা বাইরের আলো দেখেছে। কিন্তু পরিষেবা সেই তিমিরেই। রাজগঞ্জ বিডিও প্রশান্ত বর্মন বলেন, "রাজগঞ্জ ব্লকের দু একটি গ্রাম পঞ্চায়েত সীমান্ত লাগোয়া। চম্পদগছ গ্রামটিও সেই রকমই একটি। নিত্যদিন তাদের বিএসেফের হাতে নথি জমা করা কাজে বের হতে হয় , স্কুল কলেজে যেতে হয়। জিরো পয়েন্ট লাগোয়া ১৯০ টি মানুষের কাছে রাজ্য সরকারের পরিষেবা পৌঁছেছে কি না সেটাই সরজমিনে খতিয়ে দেখতে আসা।" বিডিও-র সংযোজন , "সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই ধরনের গ্রাম গুলোকে কাঁটাতারের এপারে নিয়ে আসার কাজ শুরু হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া পিছিয়ে যাচ্ছে। কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হচ্ছে। তখন তাদের এত সমস্যা থাকবে না।" অন্যদিকে পরিষেবা প্রদানকে নিয়ে বিডিও প্রশান্ত বর্মণ বলেন , "গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা লিখে নিয়েছি। তবে দুজন এমনকে পেয়েছি যারা লক্ষীর ভান্ডারের পরিষেবা পাবে। তবে বাকিরাও যাতে সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধা পায় সে বিষয়টি দেখছি। দুয়ারের সরকারের সময় সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে বিএসএফ ক্যাম্প করতে দেয়নি বলে শুনেছি তবে আগামীতে যদি দুয়ারে সরকার হয় তাহলে এখানে ক্যাম্প করব। নাগরিকদের জন্য আমাকে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হলেও আমি দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প করব।"গ্রামবাসী সাফিরান হাসান বলেন, "এই প্রথম কোন সরকারি প্রতিনিধি আমাদের গ্রামে এল। গ্রামের বৃদ্ধদের কাছে শুনেছি ভোটের সময় দলের লোক ও বিএফএফ বা পুলিসের লোক ছাড়া গ্রামে সরকারি লোক আসেনা । এই প্রথম। বিভিন্ন সরকারি পরিষেবার কথা বললেন তিনি। আমরা এত কিছু জানি না। তিনি আশ্বাস দিলেন সরকারি পরিষেবা প্রদানের।" গ্রামবাসী মুস্তাফা হোসেন বলেন, "বিডিও সাহেব এসে সবকিছুর খোঁজখবর নিলেন। দু-একজন সরকারি পরিষেবার পাচ্ছেন বলে জানান, বাকিদের জন্য বিডিও অফিসে দ্রুত যোগাযোগ করতে বললেন। দুয়ারে সরকার যদি হয় তাহলে এখানে ক্যাম্পের আশ্বাস দেন তিনি।"