জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: শুধু ড্র করলেই চলত ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal)। তবে ড্র করে নয়, মশাল জ্বালিয়ে, পালতোলা নৌকা পুড়িয়ে, লাল-হলুদ চলে গেল কলিঙ্গ সুপার কাপের (Kalinga Super Cup 2024) সেমিফাইনালে। শুক্রবার সন্ধ্য়ায় ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল ভারতীয় ফুটবলের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (East Bengal vs Mohun Bagan Super Giant)। মরসুমের তৃতীয় কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিল মোহনবাগানকে। এবারের মতো সুপার কাপে ডুবে গেল পালতোলা নৌকা। ইস্টবেঙ্গলের শেষচারে খেলবে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে। আগামী ২৪ জানুয়ারি ফাইনালের টিকিট কাটতে এই মাঠেই নামবেন ক্লেটন সিলভা অ্য়ান্ড কোং।
ইস্টবেঙ্গল এদিন যে খেলাটা খেলল, তা দীর্ঘদিন লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে থেকে যাবে। এই লাল-হলুদের ঝাঁজই যেন ছিল আলাদা। প্রতিপক্ষের উপর একেবারে বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যই তো দলটাকে সবাই চেনে, সেটাই আবার করে দেখালেন কুয়াদ্রাত। লেসলি ক্লডিয়াস সরণির শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব আবারও চোখে আঙুল দিয়ে গঙ্গাপাড়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবকে বুঝিয়ে দিল খেলা হবে, ভয়ংকর খেলা হবে...। মোহনাবাগানকে এই ম্য়াচ জিততেই হত, নাহলে তারা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেত, এই চাপটাই যেন কোথাও গ্রাস করে নিল পেত্রাতোস-বুমোসদের। উল্টোদিকে ক্লেটন-নন্দকুমাররা ফুরফুরে মেজাজেই খেলে গেলেন। এদিন কিন্তু ম্য়াচের শুরুটা ছিল মোহনবাগানের নামেই। অসাধারণ আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন ক্লিফোর্ড মিরান্ডার শিষ্য়রা। ১৯ মিনিটে প্রথম গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান। ক্রমাগত আক্রমণাত্মক ফুটবলের ফসল ফলান হেক্টর ইউস্তে। একটা অসাধারণ ফ্লিকে পা ছুঁইয়ে জালে বল ঢুকিয়ে দেন ৩৬ বছরের স্প্যানিশ সেন্ট্রাল ব্য়াক। প্রভসুখন গিলের কিছুই করার ছিল না সেখানে। তবে মোহনবাগান সমর্থকদের হাসির স্থায়ীত্ব হয়েছিল মাত্র পাঁচ মিনিট। আগুন জ্বালানোর জন্য় তৈরিই ছিলেন লাল-হলুদের ক্য়াপ্টেন ফ্য়ান্টাস্টিক ক্লেটন। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড যে দলের জার্সি চাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন, সেই দলটাকে এমনিই সবাই খোঁচা খাওয়া বাঘ নামে চেনে। ক্লেটন সেই নামেরই সুবিচার করলেন। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের বুলেট শটে গোল করলেন তিনি। যেন লিয়োনেল মেসিকে মনে করিয়ে দিলেন ক্লেটন। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে তোলা ছিল চূড়ান্ত নাটক। গোলমুখী কিয়ান নাসিরির শট বক্সের মধ্য়ে হাতে লেগে যায় হিজাজি মাহেরের। জর্ডনের সেন্টার ব্য়াক নিজেও বুঝে উঠতে পারেননি। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি নেন পেত্রাতোস। বুলেট শটে গোলও করে দেন তিনি। তবে রেফারি সেই গোল নাকচ করে দেন। পেত্রাতোস পেনাল্টি নেওয়ার আগেই বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন কয়েকজন। দ্বিতীয়বার পেনাল্টি নেন বাগানের আদরের দিমি। তবে প্রবল চাপে ডানদিকের টপ কর্নারে মেরে বসেন শট। আর্মান্দো সাদিকু রিবাউন্ড শট নেওয়ার সুযোগ পেয়ে মেরেছিলেন। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি।বিরতিতে স্কোরলাইন থাকে ১-১।দ্বিতীয়ার্ধের ৬৩ মিনিটেই ফের নিজের নামের সুনাম করলেন নন্দকুমার। ডার্বি মানেই তাঁর পা থেকে গোল আসবে। এই কথা তিনি প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। রবি রানার একটা ভুলই ইস্টবেঙ্গলের জয় নিশ্চিত করে দেয়। গিলের লম্বা শট ধরে বোরহা এগিয়ে ছিলেন। রবি রানা বলটা ক্লিয়ার না করে বোরহাকে একেবারে বক্সের মাথায় বলটা দিয়ে দেন। বোরহা শটও নেন। তবে সেই শট বারে লেগে ফিরে আগে। রিবাউন্ড শটে নন্দকুমার স্কোরলাইন ২-১ করে বেরিয়ে যান। এরপর ৮০ মিনিটে বাগানের কফিনে শেষ পেরক পুঁতে দেন ক্লেটন। হিজাজিকে ক্রস বাড়িয়ে ছিলেন ক্লেটন। হিজাজি দুর্বল হেড নেন। সেই শট ফসকান বাগান গোলকিপার আর্শ আনোয়ার। ক্লেটন এসে গোল করে খেলা শেষ করে দিয়ে যান। এদিন নির্ধারিত সময়ের পর রেফারি আট মিনিট যোগ করেছিলেন। তবে স্কোরলাইন ৩-১ থেকে যায়।