আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি: ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মতামত জানতে চেয়েছিল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধী উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। তারপরে বিরোধী দলগুলি তাদের মতামত জানিয়েছে। সিংহভাগই বিরোধীতা করেছে "এক দেশ, এক ভোট" নীতির। তাঁদের আশঙ্কা, এই নীতি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এরই মধ্যেই খবর আসছে, "এক দেশ, এক ভোট" নিয়ে আগামী সপ্তাহেই ২২ তম আইন কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়তে চলেছে। লোকসভার সঙ্গে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন করাতে ‘এক দেশ, এক ভোট’- নীতি নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছে জমা দিতে চলেছে আইন কমিশন। সূত্রের খবর, কমিশনের মাথায় থাকা বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থির নেতৃত্বাধীন আইন কমিশন ২০২৯ সালের মধ্যে একযোগে নির্বাচনের একটি সুপারিশ করতে চলেছে। এই নীতি কার্যকর করতে গেলে কিছু সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলিও খতিয়ে দেখেই রিপোর্ট তৈরি করছে কমিশন। এদিকে, বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতির সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদি সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতন্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ। এই নীতির বিরোধীতা করে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের গঠন করা উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে চিঠি দিয়েছে বিরোধী দলগুলি। তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম, ডিএমকে-র পরে আম আদমি পার্টিও "এক দেশ, এক ভোট" নীতির বিরোধিতা করেছে। শনিবার তারা এবিষয়ে মতামত জানিয়েছে কমিটিকে। আপের বক্তব্য, বিজেপি গোটা দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাদের মতে, ইন্ডিয়া জোটকে ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই তারা এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচন দুটি একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির। "এক দেশ, এক ভোট" নীতির বিরোধীতা করে আপ বলছে, এরফলে খোলাখুলিভাবে সাংসদ এবং বিধায়ক কেনাবেচা হবে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রের মোদি সরকার ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছিল। কমিটি সব রাজনৈতিক দলের কাছেই মতামত জানতে চেয়েছিল। শুক্রবারই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ওই কমিটিকে চিঠি লিখে তীব্র বিরোধীতা করেন কেন্দ্রের প্রস্তাবিত এক দেশ এক ভোট নীতির। লোকসভা ভোট ও রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব ‘অগণতান্ত্রিক’ ও ‘সংবিধানের মূল কাঠামোর বিরোধী’ বলে মনে করেন খাড়গে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে চিঠি লিখে খাড়গে জানান, গণতন্ত্র বাঁচাতে "এক দেশ, এক ভোটের" ভাবনা আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে, এই কমিটিই তুলে দেওয়া হোক।