• বাংলার তাঁতিদের উপহার রামলালাকে, কৃত্তিবাস আর অযোধ্যাকে মেলালেন নদিয়ার বীরেন 
    আজ তক | ২২ জানুয়ারি ২০২৪
  • ঝড়-জল মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি ফেরি করতেন শাড়ি। আর বুকে একরাশ স্বপ্ন এই তরুণের। দারুণ এক শাড়ি নিজে তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেবেন তামাম দুনিয়াকে। নিজের হাতের কাজ ফুটিয়ে তুলবেন শাড়িতে। কে জানত সেই যুবকই কৃত্তিবাস আর অযোধ্য়াকে এ ভাবে মিলিয়ে দেবেন!

    ওই যুবক শুরু করলেন কাজ। সিল্কের ওপর যেন আঁকলেন গোটা রামায়ণ। এক জামদানি শাড়িতে। সেটা ১৯৯৫ সালের কথা। সে সময় রামায়ণের ছবি সেভাবে মানুষের কাছে এমন সহজলভ্য ছিল না। ফুলিয়ার কবি কৃত্তিবাসের রামায়ণ ফুটিয়ে তুলবেন কীভাবে? কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে করে ফেললেন প্রায় অসাধ্য সাধন। পেলেন একাধিক পুরস্কার। সেই যুবক এখন পৌঢ় নদিয়ার ফুলিয়ার সেই বিখ্যাত বর্ষীয়ান শিল্পী পদ্মশ্রী বীরেন কুমার বসাকের শাড়ি যাচ্ছে রামমন্দিরে। 

    বাংলার তাঁতিদের তরফে রামলালার উপহার হিসেবেই ওই শাড়ি যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বীরেনবাবুর ছেলে অভিনব। ইতিমধ্যেই মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একদফা কথাবার্তাও হয়ে গিয়েছে। রামমন্দিরের তরফে বাংলার তাঁতিদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের দু'একদিন পরই বীরেনকুমার বসাক নিজে যাবেন ওই শাড়ি উপহার দিতে। 

    বীরেনবাবুর ছেলে অভিনব 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন'কে বললেন, ওই সময় রামায়ণ সিরিয়াল দূরদর্শনে দেখতেন বাবা। তা দেখেই বাবার ইচ্ছে ছিল রামায়ণকেই শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা। এর পাশাপাশি ফুলিয়ার কবি কৃত্তিবাস লাইব্রেরিতে যেতেন বাবা। এটা এশিয়ার একমাত্র রামায়ণ লাইব্রেরি। সেখান থেকে কিছুটা ধারণা পান। তারপর বাবার কল্পনায় ফুটে ওঠে আদি কাণ্ড থেকে গোটা রামায়ণ। খরচ হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। তারপরই বাবার ওই কাজ নিয়ে প্রশংসা শুরু হয়।'

     

    ২০২১ সালে বীরেন কুমার বসাক পদ্মশ্রী পান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ দিচ্ছেন। আর তা শুনছেন সর্বধর্মের মানুষ। শাড়িতে এমন অলঙ্করণ ফুটিয়ে তুলে সেই শাড়িই উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। পেয়েছেন লিমকা বুক অফ রেকর্ডও।

    শাড়িটি পেয়ে আপ্লুত মোদী টুইটও করেছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার বাসিন্দা বীরেন কুমার বসাক। খ্যাতনামী তাঁতি। শাড়িতে ভারতের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে অপূর্ব ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাকে সেই শাড়ি উপহারও দিয়েছেন তিনি। আসাধারণ। মন ছুঁয়ে গিয়েছে।’

    বীরেনের পুত্র অভিনবর দাবি, তাঁর বাবার শাড়ির গ্রাহকের তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সঙ্গীতজ্ঞ উস্তাদ আমজাদ আলি খান, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকরের মতো ব্যক্তিত্বরা।

    শুরুতে ৮ জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন বীরেন। এখন ৭ হাজার তাঁতি নিয়ে কাজ করেন তিনি। ২০১৩-তে তাঁর হস্তশিল্প এবং দক্ষতার জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন বীরেন। হ্যান্ডলুম শাড়িতে মহাকাব্য রামায়ণের কাহিনি ফুটিয়ে তোলায় ব্রিটেনের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধিও পেয়েছেন বীরেন।

     
  • Link to this news (আজ তক)