• রামকে সাক্ষী রেখেই অযোধ্যা থেকে ভোটপ্রচার শুরু মোদির
    আজকাল | ২২ জানুয়ারি ২০২৪
  • দেবব্রত ঠাকুর, অযোধ্যা: অযোধ্যার পথের দু’‌ধারে বিশাল বিশাল হোর্ডিং। প্রতি তিনটি হোর্ডিংয়ের প্রথম দুটি রামের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি। আর প্রতি তিন নম্বর হোর্ডিংয়ে ‘‌মোদি কি গ্যারান্টি’‌র বার্তা। পনেরো ফুট বাই তিরিশ ফুটের বিশাল হোর্ডিং জুড়ে লেখা, ‘‌মোদি কি গ্যারান্টি কা মতলব হ্যায়, হর গ্যারান্টি পুরা হোনে কি গ্যারান্টি’‌। কোনও হোর্ডিং উজ্জ্বলা গ্যাস প্রকল্পের, কোনওটা–‌বা অন্ন যোজনার, আবার কোনওটা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের প্রচার।রামকে উপলক্ষ করে দলিত ভোট টানার একটা মরিয়া প্রয়াসও মোদি করেছেন। প্রথমে অযোধ্যা বিমানবন্দরের নাম রাখা হয়েছিল মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দিন কয়েক আগে সেই বিমানবন্দরের নাম বদলে রাখা হয়েছে মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ ছাড়াও যে নিষাদরাজ গুহক বনবাসের পথে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতাকে নৌকো করে নদী পার করেছিলেন, সেই গুহকেরও মন্দির তৈরি হচ্ছে রামমন্দির চত্বরেই। মন্দির তৈরি হচ্ছে বাল্মীকিরও। নিষাদ এবং বাল্মীকির ভক্তরা মূলত দলিত। আগামী ভোটে উচ্চ বর্ণের সঙ্গে দলিতকেও যুক্ত করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি।পাশাপাশি, দিকে–‌দিকে চলছে রামকে সামনে রেখে ভারতের গত ৫০০ বছরের ইতিহাস মুছে ফেলার বার্তা। শুধু হোর্ডিংই নয়, অযোধ্যার কোণে কোণে এখন বসেছে কথকতার আসর। চলছে অষ্টপ্রহর রাম–‌সঙ্কীর্তন। তারই মাঝে মাঝে কথক ঠাকুরেরা ৫০০ বছরের ইতিহাস মুছে ফেলে রামমন্দির গড়ার জন্য মোদিজির কৃতিত্বের কথা তুলে ধরছেন। দাবি করছেন, রামমন্দির উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই নাকি ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাম‌ই যে মোদির হাতিয়ার, তার জন্য রাজনৈতিক কোনও গনতকার বা পণ্ডিতের দরকার নেই। কিন্তু রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানকে যে নির্লজ্জ ভাবে ভোট–‌প্রচারে ব্যবহার করবেন মোদি, তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মোদি উপস্থিত ৬ হাজার আমন্ত্রিতকে সম্বোধন করবেন। সেখানে তিনি যে লোকসভা ভোটের প্রচারই শুরু করে দেবেন, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। টিভি সম্প্রচারের দৌলতে সারা ভারতের মানুষের কাছেই তাঁর বার্তা পৌঁছে দেবেন তিনি। এমনটাই যে হবে, তা আন্দাজ করেই বিরোধী নেতা–নেত্রীরা এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ এড়িয়ে গিয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় হল, নতুন ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি কি ভারতীয় সমাজকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলছেন না?‌ রবিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বর্তমান প্রধান অলোককুমার ভারতীয় ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনার ওপরেই জোর দিলেন। তাঁর কথায়, হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে এবার লড়াই ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের। কয়েক দিন আগে যে নির্মোহী আখড়া তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছিল, তারাও জানিয়ে দিল, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ তারা গ্রহণ করছে। হনুমানগড়ির অদূরে আখড়ার আশ্রমে বসে প্রধান মোহন্ত দীনেশচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, ‘‌এই অনুষ্ঠানে আমি যাব। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এ এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ কথা ঠিক যে, আমরা দাবি করেছি রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান রামানন্দী মতেই হওয়া উচিত। কারণ রামের অধিকারী রামানন্দীরাই। তবে অনুষ্ঠানে আমরা উপস্থিত থাকব।’‌ গুজরাটের সুরাট–‌নিবাসী দীনেশচন্দ্রের এর বেশি আর কী–‌ই বা বলার থাকতে পারে!‌
  • Link to this news (আজকাল)