'কয়েক শতাব্দী দেরির জন্য প্রভুর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী', রামের কাছে নতমস্তকে নমো...
২৪ ঘন্টা | ২২ জানুয়ারি ২০২৪
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কালচক্রে বদল হচ্ছে। এক নতুন ভারতের সূচনা পর্ব শুরু হল এই রাম মন্দির চত্বর থেকে। যারা বলেছিলেন রাম মন্দির তৈরি হলে দেশে আগুন জ্বলবে তাঁরা নতুন করে ভাবুন এবার। তবে আজকের এই মূহূর্তের জন্য কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়েছে রামলালাকে। তার জন্য প্রভু রামের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। অযোধ্যায় রাম মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মন্দির চত্বরে আগত অতিধি, সাধুসন্তদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক শতাব্দীর অপেক্ষার পর আমাদের রাম এসে গিয়েছেন। বহু শতাব্দীর ধৈর্য, অসংখ্য বলিদানের পর আমরা প্রভু রামকে পেয়েছি। এই শুভ মুহূর্তে দেশবাসীকে অনেক ধন্যবাদ। আজ একটু আগেই ঈশ্বরীয় চেতনার সাক্ষী থেকে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। আমাদের রামলালা আর তাঁবুতে থাকবেন না। এখন থেকে তিনি মন্দিরে থাকবেন। এই অলৌকিক মুহূর্তের চেতনা গোটা বিশ্বের রামভক্তদের মধ্যে শিহরিত হচ্ছে। ২২ জানুয়ারি ২০২৪ একটা তারিখ নয় বরং একটি নতুন কালচক্রের শুভারম্ভ। রাম মন্দিরের ভূমি পুজোর পর থেকে দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছিল। আজ সেই বিশাল ধৈর্যের ফল মিলেছে। আজ রামের মন্দির পেয়েছি আমার। গোলামির মানসিকতা ভেঙে উঠে দাঁড়ানো একটি দেশ এরকমই ইতিহাস রচনা করে। হাজার বছর পরেও আজকের এই দিন নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা সেই মূহুর্তের সাক্ষী। এটা কোনও সাধারণ দিন নয়। কালচক্রে এই দিন একটা স্মৃতিরেখা হয়ে থাকবে। যেখানে রামের কাজ হয় সেখানে পবনপুত্র হনুমানও থাকে। তাই আমি পবনপুত্রেকেও প্রণাম করি।রাম মন্দিরের জন্য দীর্ঘ ৫০০ বছর লড়াই করতে হয়েছে বলে দাবি করে বিজেপি ও সংঘ পরিবার। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রভু রামের কাছে আজ আমি ক্ষমাও চাইছি। আমাদের ত্যাগ, তপস্যায় কিছু একটা খামতি ছিল। তাই আমরা এত শতাব্দী ধরে এই কাজ করতে পারিনি। আজ সেই খামতি পূর্ণ হয়েছে। আমার বিশ্বাস, প্রভু রাম আজ আমাদের অবশ্যই ক্ষমা করবেন। ত্রেতা কালে রামের আগমন নিয়ে তুলসিদাস লিখেছিলেন, প্রভুর আগমন দেখে অযোধ্যার মানুষ খুশিতে ফেটে পড়েছিলেন। ভারতের সংবিধানে রামের অস্তিত্ব বিরাজমান। তাই প্রভু শ্রীরামের অস্তিত্ব নিয়ে আইনি লড়াই চলেছে কয়েক দশক ধরে। ভারতের বিচারব্যবস্থার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা ভারতের বিচারব্যবস্থার সম্মান রেখেছেন। প্রভু রামের মন্দির ন্যায়ের পথেই তৈরি হয়েছে। আজ দেশের প্রতি গ্রামে উত্সব হচ্ছে। গোটা দেশ আজ দীপাবলী পালন করছে। গত ১১ দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় রামায়ণ শুনেছি। রাম মানুষের মনে গেঁথে আছে। প্রতিটি যুগে মানুষ রামকে সঙ্গে নিয়েই চলেছে। নিজের মতো করে ব্যাক্যা করেছে। প্রাচীন কাল থেকে দেশের মানুষ রামায়ণকে নিয়ে চলেছে। তার আদর্শ, মূল্য সব জায়গায় সমান। এই ঐতিহাসিক সময়ে সেইসব মানুষকে স্মরণ করছে যাদের জন্য আজকের দিন তৈরি হয়েছে। সেইসব অগণিত করসেবক, সাধুদের আজ আমরা স্মরণ করছি। আজ এই ক্ষণ ভারতীয় সমাজের পরিপক্কতার ক্ষণ।বিরোদঈদের নিশানা করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, একটা সময় ছিল যখন কিছু লোক বলতো, রাম মন্দির তৈরি হলে দেশে আগুন লেগে যাবে। এমন লোকজন ভারতের সামাজিক সামাজিক সদ্ভাবকে জানেন না। এই মন্দির ভারতের মানুষের পারস্পরিক সদ্ভাব, সম্প্রীতির প্রতীক। আমরা দেখছি, এই মন্দির কোনও আগুন নয় মানুষের উত্সাহের জন্ম দিচ্ছে। ওইসব লোকজনকে আজ বলব আপনাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে বিচার করুন। রাম আগুন নয়, রাম হল শক্তি। রাম বিবাদ নয়, রাম সমাধান। রাম সবার। রাম বর্তমানই শুধু নয়। রাম অনন্তকাল। এই মন্দির নিয়ে আজ দেশে যেমন উত্সব হচ্ছে তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও হচ্ছে। অযোধ্যায় আজ শুধু রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা নয় বরং আজ ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি মানুষের যে বিশ্বাস তারও প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল। মানবিক মূল্যেরও প্রাণপ্রতিষ্ঠা। অযোধ্য ভূমি আজ প্রতিটি ভারতবাসীকে একটা প্রশ্ন করেছে। মন্দির তো হয়ে গেল। এর পরে কী? আমি আজ অনুভব করছি, কালচক্র বদল হচ্ছে। আমাদের এই প্রজন্মকে এক কালজয়ী কাণ্ডের রূপকার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। হাজার বছর পরের প্রজন্ম রাজ্য চালনার ক্ষেত্রে আমাদের এই কাজকে মনে করবে। এই জন্ই আমি বলি, এটাই সময়, এটাই উপযুক্ত সময়। আজ থেকে পরবর্তী এক হাজার সালের ভিত স্থাপন করতে হবে। রামের আদর্শ জনমানসেও ছড়িয়ে পড়ুক। এটাই আদর্শ হওয়া উচিত। আমাদের আদর্শ রাম থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত হতে হবে।