• ১৮ বছর বয়সে পাচার, সমাজে ফিরে এসে সামলাচ্ছেন সংসার
    আজকাল | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
  • তীর্থঙ্কর দাস: কাজ, পয়সার লোভ দেখিয়ে নাবালক–নাবালিকাদের ভিন রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হয়ে থাকে। কেউ হয়তো সমাজে ফিরে আসে, কেউ হয়তো পারে না। আজকাল ডট ইনের পাঠকদের জন্য রইল এমনই এক নারীর গল্প যার জেদ সমাজে তাঁকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছে। ২০০৮ সালে ১৮ বছর বয়সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মালতী পাত্রকে (নাম পরিবর্তিত) কাজের লোভ দেখিয়ে মহারাষ্ট্রের পুনেতে পাচার করে দেওয়া হয়। ভাগ্য ভাল, বছর না গড়াতেই মালতী সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পেরেছেন। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিল মালতী। বাবা না থাকায় আর্থিক অনটনে পড়েছিল গোটা পরিবার। মায়ের সঙ্গে জরির কাজে হাত লাগিয়েছিল অষ্টাদশী মালতী। হঠাৎই একদিন মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশেরই রেল স্টেশনে চলে যায় মালতী। স্টেশনে বসে থাকতে থাকতেই তাঁর আলাপ হয় এক অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার সঙ্গে। সেই মহিলা মালতীকে কাজ দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কাউকে কিছু না বলেই রাতের অন্ধকারে ট্রেনে উঠে পড়ে মালতী পাত্র।  ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়ার সময় জলের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে বিস্কুট খাওয়ানো হয়েছিল যার ফলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে মালতী। পর দিন সকালে নিজেকে পুনে শহরের অজানা একটি গলিতে খুঁজে পান। আশেপাশে কম পোশাক পরা মেয়ে দেখে তিনি রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়েন। মালতী জানতে পারেন যে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে । বাড়ি ফেরার কথা বললেই জানানো হয় যে আর বাড়ি ফেরা হবে না, দেহ ব্যবসা করতে হবে বাঁচতে গেলে। কোনও উপায় না পেয়ে নিজের ইচ্ছের বাইরে গিয়ে মালতী অন্ধকারে ডুবে যায়। বেধড়ক মারধর, মানসিক অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল বাংলার মালতীকে। এক বছর মেয়ের কোনও খোঁজ না পাওয়ায় পরিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক থানায় নিখোঁজ হওয়ার লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে যায় বাংলার পুলিশ। ২০০৯ সালের প্রথমদিকে মালতীকে পুনে থেকে উদ্ধার করে বাংলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘‌বন্ধন মুক্তি’‌–র সহযোগিতায় মালতী সমাজে পুরনো ছন্দে ফিরে আসে। বিভিন্ন কাউন্সেলিং সেশনে যোগ দিয়ে একসময় পরিবারের কাছে ফিরে যায় মালতী। আজকাল ডট ইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মালতী জানালেন, তাঁর মা এবং পরিবারের লোক পাশে ছিলেন প্রত্যেক মুহূর্তে। ২০০৯ সালের শেষ দিকে মালতী বিয়ে করেন। বর্তমানে দুই সন্তান নিয়ে দাম্পত্য জীবনে খুশি মালতী। পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের পাশে দাঁড়ানোই মূল লক্ষ্য মালতীর। ইতিমধ্যেই পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের সমাজে ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আইনি লড়াই লড়ছেন মালতী। পাচার হয়ে সমাজে ফিরে আসা মানুষগুলির হাত ধরে তৈরি ‘‌ইলফত’‌ ভারতের প্রথম প্যান–ন্যাশনাল সারভাইভার ফোরাম। বর্তমানে ৭টি রাজ্যে ১২টি শাখা আছে এই সংস্থার। এর সদস্য হয়েছেন মালতী পাচারমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
  • Link to this news (আজকাল)