৭০ বছর ধরে ৫০০০ চারাগাছ রোপণ! দুখী দুখুর বনসৃজন এনে দিল পদ্মসম্মান...
২৪ ঘন্টা | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪
মনোরঞ্জন মিশ্র: 'পদ্মশ্রী' পাচ্ছেন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থানার সিন্দ্রি গ্রামের বাসিন্দা দুখু মাঝি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আত্মোপলদ্ধি ঘটেছিল তাঁর। অনুভব করেছিলেন, গাছ মানুষের জীবনে কতটা উপকারী। তাঁর বাকি জীবনটা সেই অনুভবকে সত্য করে তোলার কঠিন লড়াই।
সেই প্রথম কৈশোর থেকেই তিনি মাঠে-ঘাটে-শ্মশানে গাছ লাগাতে শুরু করেছিলেন। যেখানেই ফাঁকা জায়গা দেখতেন, সেখানেই চারাগাছ পুঁতে পরিচর্যা করতেন। আজ তাঁর ৮০ বছর বয়স। লেখাপড়া জানেন না। কিন্তু লেখাপড়া করে যা শেখা যায়, না-করেও গাছপালা পরিবেশপ্রকৃতি নিয়ে তিনি তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু শিখে নিয়েছেন। মানবজীবনে গাছের প্রয়োজনীয়তা বোঝেন। পরিবেশে অক্সিজেনের জন্য গাছের প্রয়োজন বোঝেন। প্রকৃতি ধ্বংস করা উচিত নয় বোঝেন। সবুজকে বাঁচিয়ে রাখলে সবুজই মানুষকে বাঁচাবে, বোঝেন। এই সব অনুভূতিগুলি, সত্যগুলি নিজের জীবনে অনুশীলন করারই আর এক নাম দুখু মাঝি। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি তাঁর কর্তব্য থেকে এতটুকু সরেননি। এখনও একইভাবে গাছ লাগিয়ে চলেছেন অযোধ্যা পাহাড়-লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায়। বর্তমানে তিনি ৫ হাজারেরও বেশি গাছের অভিভাবক!দুখু থাকেন ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে। পরনে ধুতি-গেঞ্জি। কোনও রকমে টেনেটুনে চলে তাঁর সংসার। পরিবার বলতে রয়েছে বৃদ্ধা স্ত্রী, এক ছেলে বিকলাঙ্গ, বড়ো ছেলে আলাদা থাকেন। এতদিন সরকারি সাহায্য বলতে মিলেছে বৃদ্ধভাতা, পেনশন আর রেশন।তবে তাতে তাঁর কোনো আক্ষেপ ছিল না। দারিদ্র্য নিয়ে তিনি কখনও ভাবিত হননি। বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে প্রকৃতির কোলে গাছের পরিচর্যা করে বেড়ান সারাদিনই। সকাল হলেই বন দফতর থেকে উপহার পাওয়া সাইকেলে চড়ে একটা বালতি আর চারাগাছ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ফাঁকা জায়গা দেখলেই চারাগাছ লাগিয়ে দেন সেখানে। গাছের পরিচর্যাও করেন নিয়মিত। কাঠ কুড়িয়ে এনে বেড়া দেন। পরিচর্যা করেন চারাগাছের।কোন লক্ষ্যে তাঁর এমন দৌড়ে বেড়ানো? দুখু মাঝির জীবনের লক্ষ্য প্রকৃতিকে সবুজ করে তোলা। এজন্য বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা থেকে নানা উপহারও পেয়েছেন। শুধু নিজে গাছ লাগানো নয়, অন্যদের গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিতও করেন দুখু মাঝি। হয়তো এই লম্বা দৌড়ের স্বীকৃতিই এল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। পদ্মশ্রী প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে দুখু মাঝির।