বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র নিয়ে ৪০ বছরের একাগ্র কাজই নিয়ে এল পদ্মসম্মান...
২৪ ঘন্টা | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪
নারায়ণ সিংহরায়: ৪০ বছর ধরে পার্বত্য এলাকায় বাস্তুতন্ত্র ও জীব বৈচিত্রর উপর গবেষণা চালিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা একলব্য শর্মা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিকাশ ঘটানো যায়, তা নিয়েই গবেষণা চালিয়েছেন তিনি। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ পেলেন পদ্মসম্মান।
কালিম্পং থেকে কর্মজীবন শুরু একলব্য শর্মার। তারপর হিন্দুকুশ পর্বতকে ঘিরে দেশ-বিদেশ জুড়ে তাঁর গবেষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ডক্টর একলব্য শর্মা পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। এই সম্মানপ্রাপ্তির গৌরব তাঁর কর্মজীবনের একেবারে প্রথম লগ্ন থেকে যাঁরা তাঁর সঙ্গে থেকেছেন তাঁদের সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছেন একলব্য শর্মা। আজ, শনিবার সকালে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ একলব্য শর্মার শিলিগুড়ির বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানান।পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির চড়িদা গ্রামের বাসিন্দা নেপাল সূত্রধর পেশায় মুখোশশিল্পী। পাশাপাশি ছৌ-শিল্পীও ছিলেন তিনি। এবার 'পদ্মশ্রী' পুরস্কার পাচ্ছেন তিনিও। মুখোশশিল্পী হিসেবেই মরণোত্তর এই পুরস্কার পাচ্ছেন নেপাল সূত্রধর। গত বছরের নভেম্বর মাসে নেপাল সূত্রধরের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বৎসর। তাঁর ছেলে কাঞ্চন সূত্রধর বলেন, বাবা বেঁচে থাকলে আজ আমরা বেশি আনন্দ পেতাম। তাঁর পরিবারের সূত্রেই জানা গেল, নেপাল সূত্রধর ১৫ বছর বয়স থেকেই মুখোশ তৈরি করতেন। মুখোশশিল্পী ছাড়াও তিনি একজন ছৌ-নৃত্যশিল্পীও ছিলেন। ছৌ-নৃত্যশিল্পী হিসেবে পাঁচবারেরও বেশি বিদেশে গিয়েছিলেন তিনি। আমেরিকা, অকল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে ছৌ-কর্মশালাতে যোগও দিয়েছিলেন তিনি। কর্মময়, শিল্পীজীবন কেটেছে তাঁর। তাঁর মত্যু তাঁর পরিবারের কাছে বড় ক্ষতি সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর শিল্পীসম্প্রদায়ের কাছেও বড় ক্ষতি।'পদ্মশ্রী' পাচ্ছেন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থানার সিন্দ্রি গ্রামের বাসিন্দা দুখু মাঝিও। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আত্মোপলদ্ধি ঘটেছিল তাঁর। অনুভব করেছিলেন, গাছ মানুষের জীবনে কতটা উপকারী। তাঁর বাকি জীবনটা সেই অনুভবকে সত্য করে তোলার কঠিন লড়াই। প্রথম কৈশোর থেকেই তিনি মাঠে-ঘাটে-শ্মশানে গাছ লাগাতে শুরু করেছিলেন। যেখানেই ফাঁকা জায়গা দেখতেন, সেখানেই চারাগাছ পুঁতে পরিচর্যা করতেন। আজ তাঁর ৮০ বছর বয়স। লেখাপড়া জানেন না। কিন্তু লেখাপড়া করে যা শেখা যায়, না-করেও গাছপালা পরিবেশপ্রকৃতি নিয়ে তিনি তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু শিখে নিয়েছেন। মানবজীবনে গাছের প্রয়োজনীয়তা বোঝেন। পরিবেশে অক্সিজেনের জন্য গাছের প্রয়োজন বোঝেন। প্রকৃতি ধ্বংস করা উচিত নয় বোঝেন। সবুজকে বাঁচিয়ে রাখলে সবুজই মানুষকে বাঁচাবে, বোঝেন। এই সব অনুভূতিগুলি, সত্যগুলি নিজের জীবনে অনুশীলন করারই আর এক নাম দুখু মাঝি। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি তাঁর কর্তব্য থেকে এতটুকু সরেননি। এখনও একইভাবে গাছ লাগিয়ে চলেছেন অযোধ্যা পাহাড়-লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায়। বর্তমানে তিনি ৫ হাজারেরও বেশি গাছের অভিভাবক! দুখু মাঝির জীবনের লক্ষ্য প্রকৃতিকে সবুজ করে তোলা।