রিয়া পাত্রলিটল ম্যাগাজিনকে বলা হয় সাহিত্যের আঁতুড় ঘর। নবীন লেখকদের বড় হওয়ার ভরসা দেয় তারা, তৈরি করে ভিত্তিভূমি। বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট জনেদের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তাঁদের অনেকেই শুরুর দিকে দীর্ঘ সময় লিটল ম্যাগাজিনে লেখালিখি করেছেন। ছেলে চেয়েছিলেন একটা লিটল ম্যাগাজিন তৈরি করবেন। কুড়িয়ে বাড়িয়ে মা ছেলের সে স্বপ্ন পূরণের পাশে দাঁড়িয়েছিলেনও। মাঝপথে দুরারোগ্য ব্যাধি কেড়েছে ছেলেকে। কিন্তু যেভাবে প্রথম দিনে দাঁড়িয়েছিলেন, সেভাবেই আজও ছেলের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখছেন শংকরী দাস। ছেলে সোমনাথ দাসের মৃত্যুর পর থেকে ছেলের ভালবাসার "সময় তোমাকে" পত্রিকাটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বছরে একটি করে সংখ্যা বার করেন। এবারেও এসেছেন বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের ২১৪ নম্বর স্টলে। ছেলের কথা বলতে গিয়ে গলা ভারাক্রান্ত। জানালেন, ২০০৬ -এর কথা। ছেলে একদিন আবদার করে বলেছিল লিটল ম্যাগাজিন বার করবে। তখন টানাটানির সংসার, চাকরি ছেড়েছেন স্বামী। সেই সময়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন তিনি। গয়না বিক্রি করে ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই ছেলে ছোট থেকে অসুস্থ। লিটল ম্যাগাজিন, প্রুফ দেখা, প্রেসে যাওয়া, সব সময়ই ছেলের পাশে ছিলেন তিনি। তবে বেশিদিন চলেনি সেসব। মাইলো ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন সোমনাথ। হাসপাতালের বিছানায়, শেষ শয্যায় মাকে প্রশ্ন করেছিলেন, এরপর কী হবে তাঁর ম্যাগাজিনের? মা বলেছিলেন, আছেন তিনি। সোমনাথের মৃত্যু হয় ২০১২ সালে। তারপর থেকেই শংকরী দাস "সময় তোমাকে" ভালবাসছেন ছেলের মত। আগে ছেলে বছরে তিনটে সংখ্যা বার করতেন, এখন তিনি একটা সংখ্যা বার করেন। ১৮ বছর ধরে চলছে এই পত্রিকা। জানা গেল, এটি মূলত তথ্যভিত্তিক। এখন শংকরী একটি হোসিয়ারি দোকানে কাজ করেন। বাড়িতে অসুস্থ স্বামী, প্রতিবন্ধী আর এক ছেলে, তবু সুহৃদ কয়েকজনের সাহায্যে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ছেলের স্বপ্নের পত্রিকা। তিনি এখন মুখে মুখে "লিটল ম্যাগাজিনের মা" বলেই পরিচিত।