• টালমাটাল বিহারের রাজনীতি, নীতীশের জোট বদলের জল্পনা  নীতীশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ খাড়গে 
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪
  • পাটনা, ২৭ জানুয়ারি  ? ফের বিজেপির সঙ্গ নিতে চলেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে আবার বিজেপির সহযোগী  বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। জেডিইউর একটি সূত্র জানাচ্ছে, শনিবার রাতে জেডিইউ বিধায়কদের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে। বিজেপির সঙ্গে নতুন সরকার গড়ারও দাবি জানাবেন তিনি।
    জোট বদলে আবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নীতীশ কুমার। গত এক দশকে এই নিয়ে চতুর্থ বার! সোমবার নীতীশের পাশাপাশি বিহারের নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন বিজেপি নেতা সুশীল মোদি । বিহার রাজনীতিতে যিনি, ‘নীতীশ ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত।
    নীতীশে কুমারের জোট বদলের জল্পনার মধ্যেই বিহারে ক্ষমতাসীন জোট ‘মহাগঠবন্ধন’-এর অন্তর্বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে শুক্রবার রাত থেকে।  নীতীশের দল জেডিইউর বিধায়ক গোপাল মণ্ডল অভিযোগ করেন, জোটে প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন , আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সঙ্গ ছেড়ে তাঁরা বিজেপির সহযোগী হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সামনে অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাই  যে কোনও পদক্ষেপ করা হতে পারে ।’’
    ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি মোদিকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করার পরে প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএ জোট ছেড়েছিলেন নীতীশ। লোকসভা ভোটে একা লড়ে হার হয় জেডিইউ-র। এর পর ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোট গড়ে জয়ী হন তিনি। কিন্তু লালুপ্রসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফের ২০১৭-য় ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান তিনি ।
    ২০২০-র বিধানসভা ভোটে তুলনায় কম আসন পেয়েও নীতীশের ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া অবধি বিজেপি-জেডিইউ জোটে সমস্যা বাড়ছিল। কখনও জাতপাত-ভিত্তিক জনগণনা, কখনও সিএএ, কখনও ‘বিহারের সন্ত্রাসের রমরমা’ নিয়ে প্রকাশ্য সমালোচনায় মেতেছেন দু’দলের নেতারা।  ২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের আগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। এ বার ফের এক দশকের মধ্যে চতুর্থ বার তাঁর জোট বদলের সম্ভাবনা। 
    এদিকে বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে ফোন করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কিন্তু নীতীশের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জোট বদলের জল্পনার মধ্যেই শনিবার এই দাবি করেন  কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, ‘‘আমি আনুষ্ঠানিক ভাবে বলতে পারি যে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত থাকায় তা সম্ভব হয়নি।’’
    এরই মধ্যে জল্পনা, বিহারের ‘মহাগঠবন্ধন’  বাঁচানোর জন্য দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল তৎপর হয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ‘হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা’ -র নেতা জিতনরাম মাঝিঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন শনিবার। প্রসঙ্গত, আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ শুক্রবার জিতনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বলে আরজেডি সূত্রের খবর। হাম-এর চার বিধায়কের সমর্থনের বিনিময়ে জিতনের ছেলে সন্তোষ কুমার সুমনকে উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেন লালু। ‘ইন্ডিয়া’র এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হলে বিহার বিধানসভায় বিজেপি-জেডিইউ জোটকে বাদ দিয়েই সরকার গড়ার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে ‘মহাগঠবন্ধন’।
    বিজেপির একটি সূত্রে খবর , লোকসভা নির্বাচনের আগে নীতীশের এনডিএতে যোগদান নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তেমন কোনও আপত্তি নেই। এতে ওই রাজ্যে দলের ফল ভাল হবে বলে মনে করেন মোদি-অমিত শাহেরা। যদিও বিহার বিজেপির কিছু নেতা নীতীশের আগের  বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাঁকে এনডিএ-তে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানান। কিন্তু লোকসভা ভোট ‘পাখির চোখ’ হওয়ায়  এ বিষয়ে আমল দেননি মোদি-শাহরা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই মনোভাব বিহারের নীতীশ- বিরোধী বিজেপি নেতাদের কাছেও পৌঁছেছে তার প্রমান মিলেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজের মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘নীতীশ কুমারের বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা  শিরোধার্য।’’ যদিও গত সপ্তাহেই তিনি  মন্তব্য করেন — ‘‘নীতীশের জন্য এনডিএ-র দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।’’
    জানা গিয়েছে, শুক্রবার ৭৯ জন আইপিএস ও ৪৫ জন বিহার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের আমলাকে বদলির নির্দেশ জারি করেছে বিহার সরকার।এই রদবদলে অনেকেই রাজনৈতিক কারণ দেখছেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জেডিইউ প্রধান তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তাঁর  চাল সাজাচ্ছেন এমন প্রশ্নও উঠছে ।
    সবকিছু ঠিক থাকলে রবিবারই বিহারে আবার জেডিইউ-বিজেপি জোট সরকারের ছবি দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা। বর্তমান আরজেডি-র সঙ্গে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসে নীতীশ বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন- তা  বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডার বৈঠকে নিশ্চিত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে, ‘মহাগঠবন্ধন’ নিশ্চিত ভাঙছে জেনেও হাল ছাড়তে নারাজ আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। হ্যাম নেতা জিতনরাম মাঝি যদি মহাগঠবন্ধনে যোগ দেন, তাহলে তাঁর পুত্র সন্তোষ মাঝিকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে। লালুপ্রসাদের তরফে এমনই বার্তা জিতন মাঝিকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
    লোকসভা ভোটের মুখে জোট বদলে নীতীশ কুমারের ভাবমূর্তি খারাপ হলেও, বিজেপির জেতার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল। লোকসভা আসন সবথেকে বেশি উত্তর প্রদেশে। এই কারণেই বলা হয়, উত্তর প্রদেশ যার, দিল্লিও তাঁর। তবে বিহারেও লোকসভা আসন সংখ্যা কম নয়। ৪০টি লোকসভা আসন রয়েছে বিহারে। নীতীশ কুমার এনডিএ জোটে যোগ দিলে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।
    নীতীশের জোট বদলে সবথেকে বড় লাভ হল ইন্ডিয়া জোটে ধাক্কা। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতেই তৈরি হয়েছিল বিরোধী জোট। ইন্ডিয়া জোটে নেতৃত্ব দেন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারই। এমনিতেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে জোটের শরিকিদের। দিল্লিতেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নীতীশ কুমার জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেলে বিরোধী জোট ভেঙে যাবে, আখেরে লাভবান হবে বিজেপি।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)