• আবেগের বিস্ফোরণ, জবাব দিতে পেরে খুশি কুয়াদ্রাত
    আজকাল | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪
  • সম্পূর্ণা চক্রবর্তী, ভুবনেশ্বরআবেগের বিস্ফোরণ। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চেপে রাখা দুঃখের বহির্প্রকাশ। ঠিক যেন আগ্নেয়গিরি। এই সেলিব্রেশন চাক্ষুষ না করলে বিশ্বাস করা যাবে না। ট্রফি নিয়ে গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ কার্লেস কুয়াদ্রাতের। দৌড়ে বেড়ালেন ফুটবলাররা। ট্রফি নিয়ে নাচানাচি। নিখাদ আনন্দ। ট্রফি হাতে পাওয়ার পর সটান ইস্টবেঙ্গলের গ্যালারির দিকে ছুটে যান কোচ এবং ফুটবলাররা। লাল হলুদ গ্যালারির সামনে মাতেন সেলিব্রেশনে। ধাপে ধাপে চলে ফটোসেশন। কুয়াদ্রাতের সঙ্গে পোজ দেন ক্লেইটন, ক্রেসপো, শৌভিক, গিলরা।‌ ফুটবলারদের পরিবারের লোকজনও মাঠেই উপস্থিত ছিল। গ্যালারিতেও উৎসবের আমেজ। উড়ে আসে একটি বিশাল পতাকা। তার সামনে দাঁড়িয়ে ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন চলে গোটা দলের। একইসময় গ্যালারিতে সিংহগর্জন। জ্বলল মশালও। বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে মাতেন কোচ থেকে ফুটবলার। ইস্টবেঙ্গলের মাসিহা কুয়াদ্রাতকে নিয়ে মাঠেই উন্মাদনা তুঙ্গে। লক্ষ লক্ষ সমর্থকের স্বপ্নের সওদাগর তিনি। ১২ বছর ধরে যা কেউ করতে পারেনি, দায়িত্ব নিয়েই সেটা করে দেখিয়েছেন। সমর্থকদের বহু আকাঙ্খিত ট্রফি দিতে পেরে খুশি ইস্টবেঙ্গল কোচ। তাঁর দলকে কেন্দ্র করে একটি নেতিবাচক ভাবনা গড়ে উঠেছিল। তার অবসান ঘটাতে পেরে তৃপ্ত। কুয়াদ্রাত বলেন, "প্রচুর কঠোর পরিশ্রমের ফল। শুরুটা মসৃণ ছিল না। অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক কাটাছেঁড়া হয়েছে। একটা নেতিবাচক মনোভাব ঢুকে পড়েছিল। অনেক সমালোচনা হচ্ছিল। ক্রিসমাসে ছুটি দিয়েছিলাম বলে অনেকে অনেক কথা বলেছে। কিন্তু এবার বুঝতে পারবে। আশা করছি এবার যাবতীয় নেতিবাচক জিনিস মুছে যাবে, এবং পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করবে। তবে সমর্থকদের বলব একটু ধৈর্য ধরতে।" কোচিং কেরিয়ারের অন্যতম সাফল্য। বেঙ্গালুরুর কোচ হিসেবে ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু এবারের ট্রফি জয় কুয়াদ্রাতের কাছে স্পেশাল। এএফসিতে খেলার সুযোগ পেয়েও খুশি। কুয়াদ্রাত বলেন, "আমার কোচিং জীবনের অন্যতম বড় সাফল্য। অনেক আবেগ জড়িয়ে ছিল। ক্লাবের জন্য এটা খুব দরকার ছিল। ম্যাচে এত ঘটনা ঘটল। প্রথমে আমরা গোল খেলাম। শেষ মিনিটে গোল হজম করলাম। লালকার্ড হল। ম্যাচটা খুবই কঠিন ছিল। ওড়িশা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। বিপক্ষে লোবেরার মতো কোচ ছিল। তবে ম্যাচে উত্তেজনা থাকলেও সেটা মাঠের বাইরে ছড়ায়নি। সার্বিকভাবে আমার কাছে দারুণ মুহূর্ত। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারব বলে আরও ভাল লাগছে।" একসময় সার্জিও লোবেরাকে কোচ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু শেষমুহূর্তে ওড়িশাতে যোগ দেন। তাঁকে হারানো কি ব্যক্তিগত সাফল্য? এমন মনে করছেন না তাঁর দেশওয়ালি ভাই। অতীত ঘাটতে চান না। কুয়াদ্রাত বলেন, "আগের কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। এখন এটা আমার ক্লাব।" এদিন ছন্দে থাকা নন্দকুমারকে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি তুলে নেন। যা অবাকই করে সবাইকে। এই প্রসঙ্গে কুয়াদ্রাত বলেন, "নন্দকুমার দারুণ খেলছিল। গোটা সুপার কাপেই ও নজর কেড়েছে। তবে তখন একজন তরতাজা ফুটবলারকে নামানোর প্রয়োজন ছিল। ওদের শারীরিক ক্ষমতায় সঙ্গে টক্কর দেওয়ার দরকার ছিল।" মাত্র পাঁচদিন পর ডার্বি। ফোকাস ফেরাতে হবে আইএসএলে।‌ কুয়াদ্রাতের আশা, সুপার কাপ জয় আইএসএলে দলের মোটিভেশন বাড়াবে। একই সঙ্গে আরও সমর্থকদের মাঠে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে। কুয়াদ্রাত বলেন, "এক সপ্তাহও বাকি নেই। পাঁচদিনের মধ্যে দলকে তৈরি করতে হবে। খুব কঠিন কাজ। ডার্বি জেতা সহজ হবে না। তবে আশা করব আরও সমর্থক মাঠে আসবে।" ইস্টবেঙ্গল দল স্টেডিয়াম ছাড়া পর্যন্ত সমর্থকরা অপেক্ষা করছিল। রাত বারোটায়ও স্টেডিয়াম চত্বরে সমর্থকদের ভিড়। গানে, ছড়ায় কুয়াদ্রাতকে ভালবাসা, শ্রদ্ধা উজাড় করে দেয় লাল হলুদ সাপোর্টাররা। কাল দুপুর সাড়ে তিনটেয় কলকাতায় পৌঁছবে ইস্টবেঙ্গল দল। ভিন রাজ্যের অনেক ফুটবলার ভুবনেশ্বর থেকে সরাসরি বাড়ি চলে যাবে। প্লেয়ারদের দু"দিন বিশ্রাম দিয়েছেন কুয়াদ্রাত।‌ বুধবার থেকে শুরু হয়ে যাবে ডার্বির প্রস্তুতি। 
  • Link to this news (আজকাল)