• একসঙ্গে সব আধিকারিক রদবদল নিয়ে চিন্তায় নাগরিক মহল
    আজকাল | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪
  • মিল্টন সেন, ‌হুগলি:‌ আমূল পরিবর্তন ঘটেছে গঙ্গার তীরবর্তী চন্দননগর কমিশনারেট এলাকার। ৩০ জুন ২০১৭ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে হুগলি জেলাকে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ করে তৈরি হয় দুটি পুলিশ জেলা। ডানকুনি থেকে উত্তরপাড়া হয়ে গঙ্গার তীরবর্তী চুঁচুড়া পর্যন্ত ৮টি থানা এবং দুটি মহিলা থানা নিয়ে তৈরি হয় চন্দননগর কমিশনারেট। অপরটি হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলা। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের প্রথম পুলিশ কমিশনার হন ১৯৯৩ ব্যাচের আইপিএস পীযূষ পান্ডে। একইসঙ্গে তিনটি ডিসি, এডিসিপি ডিডি, এডিসিপি ট্রাফিক সহ নানা পদে যোগ দেন একাধিক দুঁদে আইপিএস অফিসার। একাধিকবার পুলিশ কমিশনার বদল হয়েছে। এসেছেন অজয় কুমার, অখিলেশ চতুর্বেদি, গৌরব শর্মা, হুমায়ূন কবির, অর্ণব ঘোষের মত দাপুটে আইপিএসরা। বর্তমানে পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি। তবে শুরু থেকেই প্রত্যেক পুলিশ কমিশনারের লক্ষ্য ছিল গদে বাঁধা পুরনো পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসা। মানুষের মনে থাকা ভয় দূর করা। জনসংযোগ বাড়ানো এবং সকল বাসিন্দার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। সেই লক্ষে অবিচল কমিশনারেটে তৈরি হয়েছে পরিকল্পিত ট্রাফিক বিভাগ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, গোয়েন্দা বিভাগ, এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ, উইনার্স টিম, সাইবার সেল। দ্রুততার সঙ্গে কমিশনারেট এলকার অধিকাংশ জায়গাকে সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হয়। খোলা হয় মনিটরিং সেল। বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পুলিশের তরফে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের পরিধি বড় করা হয়। অধিকাংশ মানুষের কাছেই পৌঁছেছে পুলিশের ছোট বড় সব আধিকারিকের ফোন নম্বর। তার সুফল মিলেছে হাতে নাতে, কোথাও কোনও রকম অনিয়ম নজরে পড়লেই খবর পেয়েছে পুলিশ। এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাবস্থা নিয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে খোলা হয় স্পর্শ। কমিশনারেট এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবীণ নাগরিকদের কোনও রকম অসুবিধের খবর পেলেই সেই প্রবীণের পাশে দাঁড়িয়েছে স্পর্শ। পাড়ায় পাড়ায় আর জি পার্টি তৈরি করা থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান সর্বত্রই পুলিশ আধিকারিকদের উপস্থিতি নজরে পড়েছে। গত ৬ বছরে পাঁচটি বড় নির্বাচন হয়েছে। দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত, একটি বিধানসভা, একটি লোকসভা ও একটি পুরসভা নির্বাচন। দায়িত্ব নিয়ে সেই নির্বাচনগুলি পরিচালনা করেছে কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকেরা। অপ্রীতিকর কোনও নূন্যতম ঘটনা কোথাও ঘটেনি। এভাবেই দীর্ঘ ৬ বছরে ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনের আগে একসঙ্গে কমিশনারেটের সব থানার আইসি এবং পুলিশ আধিকারিকদের জেলার বাইরে বদলি এই পুলিশ জেলার বাসিন্দাদের কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছে। কারণ গত ৬ বছরে মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছিল এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের নাম। অনেক আগেই পুলিশের দাপটে বন্ধ হয়েছে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট রাজ, দাদাগিরি। বাড়ি হোক বা ফ্ল্যাট তৈরি বা জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এখন আর মোটা টাকা ভেট দিতে হয় না। গুলি বোমা বা খুনের মত বড় অপরাধ দূরের কথা চুরি ডাকাতি ছিনতাই ইত্যাদির খবর কমেছে কয়েকগুণ। ইতিমধ্যেই ডাকাতির ঘটনায় সাজা হয়েছে। একাধিক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতী সাজা পাওয়ার মুখে দাড়িয়ে। একশো শতাংশ আইনের শাসন কায়েম হয়েছে। ঠাণ্ডা হয়েছে দুষ্কৃতী অধ্যুষিত চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগর, চন্দননগর, রিষড়া, চাপদানি, ভদ্রেশ্বর, কোন্নগড় ইত্যাদি জায়গা। একদা নামীদামী দাদাদের আর আগের মত ঘোরাফেরা করার অনুমতি নেই। পুলিশি তৎপরতায় কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা প্রায় সবাই জেলে। আর যারা জেলের বাইরে, তাঁরা এলাকা ছাড়া। কমিশনারেট এলাকায় তাদের ঢোকার কোনও অনুমতি নেই। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর কোনও দিনই তারা কমিশনারেট এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। গত কয়েক বছরে পুলিশের সঙ্গে এক অদ্ভুত মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন স্থানীয়রা। এবার তাদের চলে যাওয়ার খবরে একদিকে যেমন ভার হয়েছে মন। তেমনই নাগরিকদের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করছে, আবার আগের মত অবস্থা হবে না তো? তবে পুলিশ কমিশনার আশাবাদী, তিনি থাকছেন, কোনও অবস্থাতেই আগের পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না। 
  • Link to this news (আজকাল)