১০০ বছরের স্কুল, ক্লাসরুম না থাকায় খোলা আকাশের নীচেই পঠনপাঠন!
২৪ ঘন্টা | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪
চম্পক দত্ত: ১০০ বছর পূর্ণ করতে চলেছে স্কুল! অথচ পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়ে দীর্ঘ বেশ কয়েকবছর যাবৎ স্কুল চত্বরে খোলা আকাশের নীচে গাছের তলায় চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়াদের ক্লাস। শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর জন্য, নতুন স্কুল ভবনের দাবি নিয়ে প্রশাসনে জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি বলে দাবি শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে অভিভাবকদের। খোলা আকাশের নীচে এভাবে পঠনপাঠনে চরম ভোগান্তির শিকার ছাত্র-ছাত্রী থেকে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের মনোহরপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ১৯২৫ সালে স্থাপিত এই চাঁদুর প্রাথমিক বিদ্যালয়,সামনের বছর ২০২৫ সালে ১০০ বছরে পা দেবে এই বিদ্যালয়।স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা বর্তমানে ৫ জন আর ছাত্রছাত্রী বর্তমানে প্রি প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২০০ জন।চাঁদুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ছোটো আকারের ৩ টি শ্রেণিকক্ষ,১ টি অফিস কক্ষ।৩ টি শ্রেণিকক্ষের বেহাল অবস্থা,কক্ষের ভিতরে কোথাও দেওয়ালে ফাটল ধরেছে আবার ছাদের চাঙড় খসে পড়ে মাঝে মধ্যে।এদিকে স্কুল ভবনটিরও ভগ্নদশা,স্কুল ভবনের পেছনের দিকের দেওয়াল থেকে মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে,দেওয়াল যাতে হেলে না পড়ে তারজন্য দেওয়ালের পেছনের দিকে ঠেক হিসাবে একাধিক কংক্রিটের পিলার দেওয়া হয়েছে।এককথায় স্কুলের পরিকাঠামোর এমন ভগ্নদশায় রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে ছোটছোট ছেলেমেয়েদের পঠনপাঠন চলছে শ্রেণিকক্ষের ভিতরে ও বাইরেও।ছাত্রছাত্রীর তুলনায় স্কুলে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বেহাল অবস্থায় থাকা তিনটি শ্রেণিকক্ষে তিনটি ক্লাস নেওয়া হয় বাকি দুটি ক্লাসের জন্য স্কুল চত্বরেই খোলা আকাশের নিচে গাছের তলায় ত্রিপল পেতে ক্লাস করতে হয় বলে জানাচ্ছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।
এসমস্যা এক দু দিনের নই,স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন এসমস্যা দীর্ঘ ৬ বছরের। শ্রেণিকক্ষের অভাবে বছরের পর বছর গাছের তলায় এভাবেই খুদে পড়ুয়াদের ক্লাস নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তি তো রয়েছেই পাশাপাশি পড়ুয়াদের পঠনপাঠনেও ব্যাঘাত ঘটে বলে জানাচ্ছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।ক্লাস নিতে গিয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় বর্ষার মরসুমে,এছাড়াও আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনায় গাছতলা থেকে কখনও কখনও ক্লাস হয় স্কুলের বারান্দায়।স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারী শিক্ষক শিক্ষিকা,এমনকি এলাকাবাসী ও অভিভাবকরাও জানাচ্ছেন,স্কুলের তরফে এমনকি গ্রামবাসীদের থেকেও স্কুলে শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর জন্য নতুন ভবন তৈরির দাবি জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও আজও কোনো সুরাহা হয়নি।এমনকি গ্রামের এক বাসিন্দা কৌশিক ঘোষ জানান,তিনি স্কুলের এহেন পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গ্রিভেন্স সেলেও অভিযোগ করেছেন,তার কোনো সদুত্তর পাননি।স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকাবাসী থেকে অভিভাবকরা চাইছেন দ্রুত স্কুলের বেহাল অবস্থার হাল ফেরাক প্রশাসন,এহেন পরিবেশে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাদের।এবিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমরজিত খাঁন ও স্কুলের অন্যান্য সহকারী শিক্ষক শিক্ষিকারা বলেন,আমাদের চন্দ্রকোনা-১ সার্কেলের সাব ইন্সপেক্টর অফ স্কুল তথা এসআই কৌশিক ঘোষ স্কুলের বেহাল পরিকাঠামো উন্নয়নে সবরকমভাবে চেষ্টা করছেন তা অস্বীকার করা যাবে না,কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করছেনা।"এবিষয়ে চন্দ্রকোনা-১ সার্কেলের এসআই কৌশিক ঘোষ অবশ্য জানান,"চাঁদুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবারে হটাৎ করে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেছে,কারণ নিকটবর্তী একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই কেন্দ্র থেকে ৫০-৬০ জনের অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রীর চাপ এই প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বহন করতে হচ্ছে।ফলে শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে,আমরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি প্লান এস্টিমেট ও ভেটিং করে,সমস্ত লেবেলই জানানো হয়েছে আশাকরি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।"সামনের বছর এই প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০০ বছর পূর্ণ করতে চলেছে,এখন দেখার তার আগে চাঁদুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের গাছতলা ছেড়ে নতুন শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠনের জন্য ঠাঁই হয় কিনা।