• সিনিয়রদের অত্যাচারে আত্মঘাতী যাদবপুরের দৃষ্টিহীন ছাত্রী, তদন্ত কমিটি গঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের ...
    আজকাল | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪
  • অতীশ সেন, ডুয়ার্স: মালবাজারের মেধাবী দৃষ্টিহীন ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করল। মৃতা ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি মেধাবী ছাত্রীকে জোর করে নেশা করানো হত। অভিযোগের তীর দুই সিনিয়র ছাত্রের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাতেই মেধাবী ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ছাত্রীটিকে বাড়িতে নিয়ে আসার পরও ওই দুই ছাত্র তাঁকে নিয়মিত ফোনে হুমকি দিত ও ব্ল্যাকমেল করত বলে অভিযোগ। এর জেরেই ছাত্রীটি আত্মহত্যা করেন বলে পরিবারের অভিযোগ।জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার শহরের রামকৃষ্ণ কলোনির বাসিন্দা - মেধাবী দৃষ্টিহীন ছাত্রী রেনেসাঁ দাস গত ১৮ জানুয়ারি আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃতা ছাত্রী তাঁর দাদু মদন দাসের বাড়িতেই থাকতেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাবা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়িতে কেউ ছিলেন না। মৃতার দিদা বাড়িতে ফিরে রেনেসাঁ"কে গ্রিলের সাথে ফাঁস লাগানো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান। পরে বাড়ির লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান। অত্যন্ত মেধাবী রেনেসাঁ জন্মগত দৃষ্টিহীন। অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে মাল সুভাষিণী বালিকা বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করা রেনেসাঁ মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকে ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যাদবপুরে পড়তে যান। সেখানে হস্টেলে থাকতেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হস্টেলে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হত। তা সহ্য করতে না পেরে বিষয়টি বাড়িতে জানালে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর পরই রেনেসাঁ আত্মহত্যা করেন। ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরবর্তীতে বিগত ২৫ জানুয়ারি রেনেসাঁর বাবা বিশ্বজিৎ দাস ও মা বর্নালী দাস মাল থানা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তাঁদের অভিযোগের আঙুল ছিল স্নাতকোত্তরের বিভাগের দৃষ্টিহীন ছাত্র সুরজ ঝাঁ এবং গবেষক দৃষ্টিহীন ছাত্র পাপ্পুসোনা গান্ধীর বিরুদ্ধে। রেনেসাঁ দাসের মা বর্নালী দাস জানান, প্রথম দিকে রেনেসাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় ওই দুই সিনিয়রের কাছে তাঁরা টাকা পাঠাতেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন - তাঁদের পাঠানো টাকা সব সময় মেয়ের কাছে যেত না। এছাড়াও ওই দুই সিনিয়র রেনেসাঁ"র উপর মানসিকও শারীরিকভাবে অত্যাচার করত বলেও তাঁদের অভিযোগ। এই সিনিয়র ছাত্ররাই রেনেসাঁকে নানাভাবে প্ররোচিত করত এবং ফোনে হুমকি দিত বলে পরিবারের অভিযোগ। রেনেসাঁ"র বাবা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "আমার মেয়ে আত্মহননের বেছে নিল। অভিযুক্তরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কঠোর শাস্তি চাই। ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা না ঘটে।"জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মৃতা ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার, ডিন অফ স্টুডেন্ট। বৈঠক শেষে রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু জানান, তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। আগামিকাল থেকে কাজ শুরু করবে তদন্ত কমিটি। তিনি নিজেও এই কমিটিতে রয়েছেন। তদন্তের পর কী ফলাফল হয় পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
  • Link to this news (আজকাল)