• শীতের স্লগ ওভারে দাপুটে বৃষ্টির স্পেলে মাথায় হাত পূর্ব বর্ধমানের কৃষকদের...
    ২৪ ঘন্টা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অরূপ লাহা: এ বছর রবি মরশুমে জমিতে আলু বসানোর পর থেকেই খামখেয়ালি আবহাওয়ার জেরে রাজ্য জুড়েই বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের। একই ছবি বর্ধমানের কেতুগ্রামে। জমিতে আলু বীজ রোপণের পরই তুমুল বৃষ্টিতে জমিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। আলু গাছ পচে যায়। ফের কৃষকদের বাজার থেকে চড়া দামে বীজ কিনে নতুন করে আলুচারা বসাতে হয়। ফলে আলু বসানোর খরচ দ্বিগুণ হয়। একদিকে উৎপাদন খরচ বাড়ে। অন্য দিকে আলুর ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। আর এই আশঙ্কার মধ্যেই গত সপ্তাহে ফের একবার বৃষ্টি হয়েছে। যা নিয়ে নতুন করে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন আলুচাষিরা।

    এবার হালকা বৃষ্টিই হয়েছে, কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস পড়তে না পড়তেই যে ভাবে ফের আবহাওয়ার মেজাজের পরিবর্তন ঘটেছে তাতে চাষ নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। শীত উধাও। শুরু ঝিমঝিমে বৃষ্টি। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সকাল-সন্ধে ঘন কুয়াশা। আর এতেই প্রমাদ গুনছেন আলুচাষিরা। আলুর

    ফলন নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট চিন্তিত।আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পূর্ব বর্ধমানের রায়না, খণ্ডঘোষ, গলসি, ভাতার, জামালপুর ও আউশগ্রাম-সহ সর্বত্র বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সঙ্গে দোসর কুয়াশার ঘন পরত।রায়নার বাসিন্দা কৃষক বলরামচন্দ্র বলেন, এবছর দু'বার করে জমিতে আলু বীজ রোপন করতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে। আবার প্রায় প্রতিদিনই কুয়াশা। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি তাতে আলুর ফলন এবার কমবেই। ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হালকা বৃষ্টি হলে তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু কাল-পরশু যদি ভারী বৃষ্টি হয়, আর জমিতে জল দাঁড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আলু গাছ পচে যাবে, আর কোপ পড়বে ফলনে। এত চেষ্টা করে, পরিশ্রম করে, খরচ করেও আদতে কোনও লাভ হবে না। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা দুশ্চিন্তা বেড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের কৃষকদের। চরম উদ্বেগে চন্দ্রকোনা ১ ও ২ নম্বর ব্লক এলাকার কৃষকেরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকেরা মূলত আলু চাষের উপরই নির্ভরশীল। এ জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল আলু। আর চন্দ্রকোনা এ জেলার আলুচাষের গড় হিসেবে পরিচিত। সেই আলুচাষে চলতি বছরের শুরু থেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে কৃষকদের।এবার আলু চাষের শুরুতেই ঘটে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। টানা বৃষ্টিতে সদ্য লাগানো আলুর জমি জলে ডুবে নষ্ট হয়। অনেক জায়গাতেই জমিতে লাগানো আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফের আলু চাষ করতে হয়। যার জেরে এবছর আলু চাষে বিলম্ব হয় এবং খরচও দ্বিগুণ হয়। তবে সেই খরচ সামলেই ফের আলু চাষ শুরুও করেন কৃষকেরা। এখন সেই আলু গাছের বয়স হয়েছে কোথাও দেড় মাস, কোথাও আড়াই মাস। এদিকে আলু গাছের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়ে আলুর ফলন হতে-হতে তিন থেকে সাড়ে তিনমাস সময় লাগার কথা। এর মানে, দ্বিতীয় দফায় রোপণ করা আলু থেকে ফলন পেতে এখনও এক-দেড় মাস দেরি। কিন্তু এরই মাঝে আবার ব্যাঘাত। ফের চাষে বাধা। আবহাওয়ায় হঠাৎ পরিবর্তনের জেরে কয়েকদিন ধরেই টানা কুয়াশার দাপট, সঙ্গে মেঘলা আকাশ, রোদের তেমন দেখা নেই, রয়েছে বৃষ্টির পূর্বাভাসও। এই আবহাওয়া আলুর ফলনের পক্ষে অন্তরায়। এর উপর যদি আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টি হয়, তবে আলুচাষের আরও ক্ষতি হবে। এবং ইতিমধ্যেই চন্দ্রকোনা-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় মাঝারি বৃষ্টিও হয়ে গিয়েছে। আর এসবের জেরে শীত উধাও হয়ে গরম অনুভূত হতে শুরু করেছে। এহেন আবহাওয়া আলু চাষের পক্ষে মোটেও উপযুক্ত নয়, জানাচ্ছেন কৃষকরা।সব মিলিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ঘাটাল মহকুমার কৃষকেরা। কেতুগ্রামের আলুচাষিদের মতো তাঁরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই চলতি বছরে বৃষ্টির জন্য আলুচাষ অনেকটাই পিছিয়ে। ঘাটালে আলু চাষে এ বছর খরচ হয়েছে বিঘে পিছু ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বেশিরভাগ কৃষক চাষ করেছেন ঋণ নিয়ে। রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের।
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)