আজকাল ওয়েবডেস্ক: একদিকে "ক্যাগ রিপোর্ট" নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রকে আক্রমণ, অন্যদিকে নাম না করে রাজ্যে "ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা" নিয়ে কংগ্রেসকে খোঁচা। কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে রেড রোডে ধর্না কর্মসূচি শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার এই কর্মসূচিতে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো একদিকে যেমন ক্যাগ রিপোর্টে "ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট" পাঠানো নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন, তেমনি জানিয়েছেন এই রিপোর্টের প্রতিবাদ করে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এর আগে সাংসদ ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ক্যাগ রিপোর্ট তুলে ধরে অভিযোগ করেন, এই রাজ্য ২ লক্ষ কোটি টাকার কোনও হিসাব দেয়নি। মমতার কথায়, "ক্যাগ রিপোর্টে সব মিথ্যা বলা হচ্ছে। সময়মতো সমস্ত ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পাঠানো হয়েছে। ক্যাগ রিপোর্ট পুরো ভুয়ো রিপোর্ট যে রিপোর্ট লিখেছে বিজেপি।" তাঁর যুক্তি, রিপোর্টে ২০০৩ সালের কথা বলা হয়েছে। অথচ সেইসময় তাঁর দল রাজ্যে ক্ষমতাতেই ছিল না। এই প্রসঙ্গেই তিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, "এর আগে অভিষেককে এমন একটা সময়ের কথা বলে চিঠি দেওয়া হয়েছে যখন অভিষেক জন্মায়নি।" মমতার অভিযোগ, রাজ্যের পাওনা আটকে ক্যাগ নিয়ে কথা। ১০০ দিনের টাকা একমাত্র বাংলারই আটকে রাখা হয়েছে। দুবছর ধরে শ্রমিকদের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। বাংলার আবাসন এবং রাস্তার টাকাও আটকে রেখেছে কেন্দ্র। টাকা আটকে রাখার জন্য জেলে যাওয়া উচিত। তবে তারপরও যে রাজ্য তার নিজের টাকায় ১০০ দিনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছে এদিন সেকথাও জানিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি এদিন কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে করোনার টিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। এদিনও জোট প্রসঙ্গে সিপিএমকে বিজেপির "বন্ধু" বলে উল্লেখ করে নাম না করে রাহুলের সমালোচনা করেন মমতা। মুর্শিদাবাদে বিড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে রাহুল বৈঠকে বসেছিলেন। এদিন মমতা বলেন, "বিড়ি বাঁধতে জানেই না। বসন্তের কোকিল এসেছে। এখন নির্বাচন এসেছে তাই ফটো তুলছে।" কংগ্রেসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কংগ্রেসকে বলেছিলাম ৩০০ আসনে লড়ো। বাকি আসনগুলো আঞ্চলিক দলগুলোকে ছেড়ে দাও। কিন্তু শুনল না। মমতার সন্দেহ, "কংগ্রেস ৪০টা আসন পাবে কিনা জানি না। সব আঞ্চলিক দলগুলিকে এক জায়গায় আনতে পারবে না।" এদিনও অভিযোগ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, "বাংলায় প্রোগ্রাম করতে এসেছে। অথচ আমায় কিছু জানায়নি। প্রশাসনের মাধ্যমে জানলাম।" কংগ্রেসের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেন, বুকের পাটা থাকলে যেন তারা উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে গিয়ে বিজেপিকে হারিয়ে আসে। তাঁর দাবি, মণিপুরের ঘটনার সময় কংগ্রেস সেখানে যায়নি। একমাত্র তৃণমূলই গেছিল। তৃণমূল ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না এই দাবি তুলেই মমতা অভিযোগ করেন, বিজেপি হিন্দুদের সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কংগ্রেস এবং সিপিএম মুসলিমদের সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কেন্দ্রকে আক্রমণ করে ইডির হাতে সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের প্রসঙ্গও তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, "একমাত্র আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেপ্তার করেছে। বিরোধিতা করলেই জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে।" দেশে ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন প্রসঙ্গে তাঁর আশঙ্কা, দেশকে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মানুষের নিজস্ব পছন্দের খাবারের ওপরেও কোপ পড়ছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন মমতা। তাঁর কথায়, "অনেক প্রধানমন্ত্রী দেখেছি। কিন্তু এরকম প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রধানমন্ত্রী দেখিনি।" বৃহস্পতিবারই সংসদে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই উল্লেখ করা হয়নি অভিযোগ করে মমতা বলেন, "মোদি সরকারের অন্তিম বাজেট।" এই ধর্নামঞ্চে নিজে ৪৮ ঘন্টা থাকলেও আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠন ও জেলাকে ধর্না চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।