জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতীয় রাজনীতির প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব লালকৃষ্ণ আডবাণী। আজ, শনিবার তাঁকে 'ভারতরত্ন' দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হল। ঘোষণা করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে খবরটি পোস্ট করেন তিনি। বলেন, এটি তাঁর কাছে খুবই আবেগঘন এক মুহূর্ত। দেশ জুড়ে এই খবরে আনন্দের হিল্লোল পড়ে যায়। সাতানব্বই বছরের আডবাণীকে রাজনৈতিক মতাদর্শনির্বিশেষে, রাজনৈতিকদলনির্বিশেষে সম্মান করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ। ফলে সকলেই খবরটিতে আপ্লুত হন।
লালকৃষ্ণ আডবাণীর জন্ম ১৯২৭ সালের ৮ নভেম্বরে। ১৯৪১ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে যোগ দেন আডবাণী। এইভাবে দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আডবাণী তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেন। এরপর ক্রমে করাচি শাখার প্রচারক হয়ে ওঠেন এবং সেখানে আরও বেশ কয়েকটি শাখাও গড়ে তোলেন।দেশভাগের পরে, আডবাণীকে প্রচারকরূপে রাজস্থানের মৎস্য-আলওয়ারে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে দেশভাগের পরে তখন সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে সেই তপ্ত আবহাওয়ায় ১৯৫২ সাল পর্যন্ত আলওয়ার, ভরতপুর, কোটা, বুন্দি ও ঝালাওয়াড় জেলায় সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। ইতিমধ্যে আরএসএসের সহযোগিতায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৫১ সালে জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করলে তার সদস্য হন আডবাণী।১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আডবাণী। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অটলবিহারী বাজপেয়ীর অধীনে ভারতের সপ্তম উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আডবাণী ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রবীণ নেতা। তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘেরও দীর্ঘদিনের সদস্য। দশম লোকসভা এবং চতুর্দশ লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীও ছিলেন। ২০১৪ সালে মুরলী মনোহর জোশী ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে বিজেপির 'মার্গ দর্শক মণ্ডল'-এর মতো মর্যাদামণ্ডিত পদে ঠাঁই পান আডবাণীও।অধিকাংশ ভারতবাসীর মনে আডবাণী মানেই অবশ্য 'রথযাত্রা' এবং অযোধ্যায় রাজনৈতিক কর্মসূচি। হিন্দুত্ববাদী আদর্শের একীকরণের লক্ষ্যে আডবাণী ১৯৮৭ সালে দেশ জুড়ে শুরু করেছিলেন এক রথযাত্রা। সারা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিল তাঁর সেই কর্মকাণ্ড। এই দীর্ঘ দূরত্বের রথযাত্রা বা মিছিল ঘুরে বেড়িয়েছিল গোটা দেশ।এত বড় রাজনৈতিক জীবন, এত দীর্ঘ এবং ঘটনাবহুল কর্মজীবন! কিন্তু তিনি কি এর যথাযোগ্য পুরস্কার পেলেন? সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল বলে থাকে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সমস্ত যোগ্যতা থাকলেও তাঁর তো আর ক্ষমতার ওই সর্বোচ্চ মসনদে বসাই হল না? হয়তো একথা খানিকটা সত্যও। ২০০৬ সালের এক সাক্ষাৎকারে আডবাণী স্বয়ং বলেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধীদলনেতা হয়ে তিনি নিজেকে আসলে সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীই বিবেচনা করছেন। তবে, দুঃখজনক হল, এর তিনবছর পরে ২০০৯ সালে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সহকর্মীরা কেউ তাঁর পক্ষে ছিলেন না।কিছুই কি পাননি এতদিন? ২০১৫ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'পদ্মবিভূষণ' পেয়েছিলেন। আর এই সাতানব্বই বছরে এসে, ২০২৪ সালে পেলেন 'ভারতরত্নে'র মতো দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান।