• পরিবারের বাধা সত্ত্বেও মাধ্যমিকে বসল ফরাক্কার ছাত্রী
    আজকাল | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা থানার আইসি-র প্রচেষ্টায় শনিবার মাধ্যমিক পরীক্ষাতে বসতে পারলেন জেলার প্রত্যন্ত ইমামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর- লাউয়ারহাট গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাহারিমা খাতুন। আজ তাহারিমার ইংরেজি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার পরও ফরাক্কা থানার আইসি-র প্রচেষ্টায় নিজের সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দিলেন তাহারিমা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাহারিমার বাবা রফিকুল শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং মা পপি বিবি, বিড়ি তৈরির কাজ করেন। এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বড় মেয়ে তাহারিমার ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার শখ। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ফরাক্কার ইমামনগর হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করছে তাহারিমা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, "তাহারিমার পড়াশোনার শখ থাকলেও তার বাবা রফিকুল ইসলাম কখনই চাইত না মেয়ে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হোক।" তাহারিমার মা পপি বিবি বলেন,"শুক্রবার রাত থেকেই পারিবারিক অশান্তির জেরে রফিকুল আমাকে প্রচন্ড মারধর করছিল। আমার মেয়ে তাহারিমা তার প্রতিবাদ করলে রফিকুল তাকেও বেধড়ক মারধর করে।" তিনি জানান, "আর্থিক সমস্যা থাকার জন্য রফিকুল চায় না তাহারিমা পড়াশোনা চালিয়ে যাক। আজ সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগেও তাহারিমাকে প্রচন্ড মারধর করে আমার স্বামী। এরপরে তাহারিমা অসুস্থ বোধ করতে শুরু করায় কয়েকজন আত্মীয় স্বজনের পরামর্শে আমি তাহারিমাকে নিয়ে সোজা ফরাক্কা থানায় হাজির হই।"পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাহারিমার বাড়ি থেকে ফরাক্কা থানা প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। এই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে আসতে আসতে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। তবে ফরাক্কা থানার আইসি দেবব্রত চক্রবর্তী গোটা ঘটনার কথা শুনে দ্রুততার সঙ্গে নিজের গাড়িতে তাহারিমাকে বসিয়ে তার পরীক্ষা কেন্দ্র অর্জুনপুর হাইস্কুলে হাজির হন। সেন্টার ইন চার্জ এবং বাকি আধিকারিকদের সাথে কথা বলেন আইসি নিজেই এবং ওই ছাত্রী যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করেন। তাহারিমা-র পরীক্ষা শেষে ফরাক্কা থানার গাড়ি তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছে। থানার ওই শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, তাহারিমা যাতে তার মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলো নির্বিঘ্নে দিতে পারে প্রশাসনের তরফ থেকে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ওই পরিবারকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, রফিকুল যদি ফের পরিবারের সদস্যদের মারধর করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফরাক্কা থানার পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে পপি বলেন, "পুলিশের উদ্যোগে আজ আমার মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারল। পুলিশ আধিকারিকরা যদি না থাকতেন তাহলে আমার মেয়ের এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষাই আর দেওয়া হত না।"
  • Link to this news (আজকাল)