• মেয়ে মানেই বোঝা, এই ধারনা না বদলালে নির্যাতন চলবে, মত সমাজতত্ত্ববিদের ...
    আজকাল | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • পল্লবী ঘোষ: তিন মাসের শিশুকন্যাকে দেওয়ালে আছড়ে খুন করেছে বাবা, মা। যে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। তবে ডোমকলের ভাতশালার স্থানীয় বাসিন্দারা অতীতেও ঘাতক দম্পতির মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী থেকেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে খবর, তৃতীয় কন্যাসন্তানের খুনের আগে রিন্টু মণ্ডল এবং বেলুয়ারা বিবি চার বছরের ও দুই বছরের দুই মেয়েও চরম শারীরিক নির্যাতন করত। প্রথম কন্যাসন্তানকে মাত্র ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে দিল্লিতে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল রিন্টু। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, যাঁরা রিন্টুর সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, তাঁরা জানতে পেরে পরিকল্পনা ভেস্তে দেন। এখানেই শেষ নয়। বড় মেয়েকে বেধড়ক মারধর করত রিন্টু। এরপর মেজো মেয়ের জন্মের পরেও খুনের চেষ্টা করেছিল দম্পতি। মেজো মেয়েকে একবার মারতে মারতে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল তারা। দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিল খুদে মেয়েটি। স্থানীয়রা এবং রিন্টুর আত্মীয়রা পুলিশকে জানিয়েছেন, সে মাদকাসক্ত। চুরির ঘটনায় আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল। নেশার টাকা জোগাড় করতে না পারলে বেলুয়ারার সঙ্গে নিত্যদিন ঝগড়া, ঝামেলা করত। এর মাঝেই পরপর তিন কন্যাসন্তান জন্মায়। সংসারের খরচ কীভাবে চালাবে, এই চিন্তায় প্রায়শই ঝামেলা করত দুজনে। প্রথম দুই মেয়েকে খুনের চেষ্টা সফল হয়নি। তৃতীয়বার সদ্যোজাতকে আছড়ে মারার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘরেই ফেলে রেখেছিল তারা। নারীর ক্ষমতায়নে রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকারের একাধিক পদক্ষেপের পরেও কন্যাসন্তান খুন, কন্যা ভ্রূণ হত্যার ঘটনায় রাশ টানা যায়নি। একশ্রেণীর বাবা, মায়েদের কাছে মেয়ে সন্তান কেন এখনও "বোঝা" মনে হয়? এ প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্ববিদ বুলা ভদ্রর বক্তব্য, "রাজ্য সরকারের "কন্যাশ্রী", "লক্ষ্মীর ভান্ডার" প্রকল্পের কথা যতটা ছড়িয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ, সুবিধার কথা সাধারণ মানুষ ততটা জানেন না। এ যুগে দাঁড়িয়েও কন্যাসন্তান খুনের ঘটনা ঘটছে কারণ, পরিবারের কাছে মেয়েরা এখনও বাড়তি "বোঝা"। মেয়েদের বিয়ে নিয়ে সব বাবা, মায়েদেরই দুশ্চিন্তা থাকে। একের বেশি কন্যাসন্তান জন্মালেই তাই মুখ কালো হয়ে যায়। কারণ তারা মনে করে, একাধিক কন্যাসন্তানের খরচ বহন করার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই। সাধারণত যে পরিবারে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে এবং আর্থিক দিক থেকে ভাল অবস্থা, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটে না। আমার মনে হয়, যদি সমাজ থেকে যৌতুক দিয়ে বিয়ের কনসেপ্ট তুলে দেওয়া যায়, তাহলে এই ধরনের ঘটনা কমবে। তখন আর কন্যাসন্তানরা পরিবারের "বোঝা" থাকবে না।"
  • Link to this news (আজকাল)