যেন ৫ হাজার শ্রমিকের এক মেয়ে ! বিয়েতে দু-দিন ছুটি চা-বাগান
২৪ ঘন্টা | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
অরূপ বসাক: বাগান মালিক ও বাগান শ্রমিকদের আন্তরিকতার এক আলাদা চিত্র দেখা গেল ডুয়ার্সের রেড ব্যাংক এবং সুরেন্দ্রনগর চা বাগানে। ডুয়ার্সের রেড ব্যাংক ও সুরেন্দ্রনগর চা বাগানের মালিকের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে বেশ কিছুদিন। কিন্তু সেই বিয়ের ভোজ যতক্ষণ নিজের বাগান শ্রমিকদের না খাওয়াবেন ততক্ষণ মন ভাল থাকে না বাগান মালিকের। হ্যাঁ এটাই সত্যি।
দীর্ঘ দুই দশক বাগান বন্ধের পর নতুন মালিক পেয়েছে বাগানের শ্রমিকরা। বাগানে বসে সেই বাগান মালিকের মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ খেলেন বাগানের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা। শুধু তাই নয়। এদিন দুই বাগান ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়। এদিন রেড ব্যাংক চা বাগানের সরকারি রিসর্টে এই ভোজ পর্ব চলল। নিমন্ত্রণের আয়োজনে কোনও খামতি রাখেনি মালিক। মেনুও ছিল বেশ- ভাত, ডাল, সবজি, চিকেন, চাটনি, দই, মিষ্টি। যখন আশেপাশের বাগানে মালিক-শ্রমিকের বিরোধ লেগেই থাকে সেই দিক দিয়ে খোদ মালিকের আন্তরিকতায় আপ্লুত বাগানের শ্রমিকরা। রেড ব্যাংক ও সুরেন্দ্রনগর চা বাগানের মালিক সুশীল পাল ও মৌসুমী পাল বলেন, 'আমার বাগান আমার একটা পরিবার। আর বাগানের শ্রমিকরা আমার পরিবারের সদস্য। তাই আমার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে তাদের না খাওয়ালে মন ভালো থাকে না। তাই আমি ও আমার পরিবারের সদস্য আজ শ্রমিকদের সঙ্গে বসেই খেলাম। এ যেন আমার আলাদা অনুভূতি। আমি সবসময় শ্রমিকদের পাশে এক পরিবারের মত থাকতে চাই।'এদিন স্ত্রী মৌসুমীকে নিয়ে শ্রমিকরা ঠিক মত খাচ্ছে কিনা তার ওপর নজর রেখে চলেন সুশীল বাবু। কারও কিছু দরকার কিনা সেটাও বারবার যাচাই করতে দেখা যায় মালিক দম্পতিকে। সঙ্গে ছিলেন সদ্য বিবাহিত কন্যা সঞ্চিতাও। শ্রমিকরা তাঁকে দু হাত ভরে আশীর্বাদ করে। বুফে সিস্টেমে খাওয়া দাওয়া আয়োজন ছিল। কর্মা তিরকি নামে রেড সুরেন্দ্রনগর চা বাগানের এক শ্রমিক বলেন, 'এক সময়ে আমাদের বাগান শ্মশানের চেহারা নিয়েছিল। কোনদিনও খুলবে সেটাই ভাবিনি। মালিকের মেয়ের বিয়েতে এভাবে খাওয়া দাওয়া হবে এটা তো কল্পনারও অতীত ছিল।'তিনি আরও বলেন, 'গত দেড় বছর বাগান খোলার পর এখন যা পরিবর্তন তা দেখে অনেক সময়ে নিজের চোখেও বিশ্বাস হয় না। ভগবান মালিকের পরিবারের মঙ্গল করুক।' লক্ষ্মী আহির নামে রেড ব্যাংকের এক শ্রমিকের কথায়, 'দিনটি চিরদিন স্মরণে থাকবে। এমন শ্রমিক-মালিক এমন সুসম্পর্ক যে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছেই দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করি।'