• অশান্ত মায়ানমার , ভারতীয়দের দ্রুত রাখাইন ছেড়ে চলে যাওয়ার আর্জি জানাল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • দিল্লি, ৭ ফেব্রুয়ারি  ? লাগাতার সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মায়ানমারের রাখাইন। দেশের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধ ও সংঘর্ষে ভেঙে পড়েছে মায়ানমারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভারত, বাংলাদেশে বাড়ছে অনুপ্রবেশ। সম্প্রতি দেশের সংখ্যালঘু জনজাতির সেনাদের সঙ্গে মায়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা সামনে এসেছে।  সেনা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষের হাত থেকে বাঁচতে সীমান্তে ভিড় জমাচ্ছেন মায়ানমারের নাগরিকরা। এই পরিস্থিতিতে এবার ভারতীয়দের জন্য সতর্কবার্তা জারি করল মায়ানমারের ভারতীয় দূতাবাস। রাখাইন প্রদেশে থাকা ভারতীয়দের দ্রুত সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার আর্জি জানাল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।  
    ফের অশান্তির আগুন মায়ানমারে। গত বছরের শেষভাগ থেকেই মায়ানমারে আবার অশান্তির আগুন জ্বলছে। সরকার চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। জেলবন্দি আন সুকির মতো রাষ্ট্রনেতারা। সেনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই শক্তি প্রয়োগ করে বাহিনী। দুই পক্ষের মধ্যে সেই সংঘর্ষ এখনও জারি রয়েছে। মায়ানমারের কয়েক হাজার নাগরিক ইতিমধ্যেই ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও পালিয়ে আসেন বেশ কয়েকজন মায়ানমার সেনা। বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে দেশ। নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন সেখানকার মানুষ। 

     
    এমন অবস্থায় দেশের নাগরিকদের রাখাইনে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। শুধু তা-ই নয়, দেশের নাগরিকদের রাখাইন ছাড়ার কথা বলে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এক নির্দেশিকায় ভারতীয় দূতাবাস জানায় , মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।  এই অবস্থায় সেখানে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।  নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দেখা দিতে শুরু করেছে।  তাই সেখানে থাকা ভারতীয়রা যেন দ্রুত রাখাইন ছেড়ে চলে যান।  পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠার আগেই দেশের নাগরিকদের নিরাপদে ভারতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার। এদিকে ভারত ? মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।  মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একথা জানান তিনি। 
     
    প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের পর থেকেই মায়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বার বার বিদ্রোহ হয়েছে। দেশের প্রধান আন সু-কিকে গ্রেফতার করে মিলিটারি। ক্ষমতা দখল করে তারা। ২০২৩ সালের শেষভাগে দেশে সামরিক শাসন শেষ ও গণতন্ত্র পুনর্স্থাপনের দাবিতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়। রাতারাতি তা হিংসার রূপ নেয়। গত অক্টোবর মাস থেকেই রাখাইন সহ একাধিক রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী এবং মায়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। নভেম্বর থেকে সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ , ‘আরাকান আর্মি’ এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ -র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
     
    নভেম্বর মাসেও কেন্দ্রের তরফে মায়ানমারের এই সংঘর্ষ ও হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সীমান্ত লাগোয়া মণিপুর ও মিজোরামেও এই অশান্তির আঁচ পৌঁছয়। সংঘর্ষের জেরে গত বছরের শেষে মায়ানমার-ভারত সীমান্ত দিয়ে বহু সেনা মিজোরাম ও মনিপুরে প্রবেশ করে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে। পরে তাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠায় ভারত সরকার। অনুপ্রবেশ রুখতেই ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। 
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)