• অনাহারে মৃত্যু চা শ্রমিকের! অভিযোগ ওড়াল জেলা প্রশাসন
    ২৪ ঘন্টা | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • নারায়ণ সিংহ রায়: অনাহারে চা শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠে এল আলিপুরদুয়ার থেকে। অভিযোগ, অনাহার এবং চিকিৎসার অভাবেই মৃত্যু হয়েছে মধু চা বাগানের শ্রমিক ধনি ওরাওঁ-এর। এই ঘটনায় একদিকে যেমন বাগান কর্তৃপক্ষর ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ঠিক তেমনই প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকারও।২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে একটানা বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে নতুন করে চালু হয় মধু চা বাগান। বাগান শ্রমিকদের কথায়, এখনও অনিয়মিত মাইনে থেকে শুরু করে রেশন সবই। এই পরিস্থিতিতে বহু বাগান শ্রমিককেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

    অভিযোগ করা হয়েছে যে ধনি ওরাওঁ-র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় বাগানের কাজ মিলছিল না। অন্যদিকে, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের লিঙ্ক না থাকায় খাদ্য সামগ্রীও মিলছিল না। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী সহ আত্মীয় পরিজনদের সহযোগিতায় কোনওমতে দিন কাটাচ্ছিলেন ওরাওঁ দম্পতি।স্থানীয়দের মতে খাওয়া দাওয়ায় সমস্যার পাশাপাশি ঘরও ছিল না তাদের। ধনি ওরাওঁ-র মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আশারাণী ওরাওঁ-র ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে।এদিকে ধনি ওরাওঁ-র মৃত্যুর পরই পশ্চিমবঙ্গ চা মজুর সমিতির তরফে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা এলাকা সহ মৃতের বাড়ি পরিদর্শন করেন। তাদের কথায়, ‘মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত না হলেও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং তার স্ত্রীর শারিরীক অবস্থা এটা স্পষ্ট করছে যে অর্ধাহার-অনাহারেই দিন কাটত ধনি ওরাওঁ-র। তার মৃত্যুরও অন্যতম কারণ অনাহার’।বুধবার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের তরফে জানানো হয়, ‘পশ্চিমবঙ্গ চা মজদুর সমিতি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম গঠন করে। আমরা তদন্ত করে দেখি অনাহারই প্রধান কারন ধনি ওরাওঁয়ের। পরিবার বা প্রতিবেশীরা যখন যেভাবে সাহায্য করত সেভাবেই খেতে পেত তারা’। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে জেলা শাসকের কাছে দেখা করতে চাই। কিন্তু তাঁর সময়ের অভাবে অতিরিক্ত জেলা শাসকের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তাদের সমস্ত ঘটনা আমরা বলি। একটা কাজ হয়েছে সেটা হল, মৃত ধনি ওরাওঁ-এর স্ত্রীকে সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। জরুরিকালীন ভিত্তিতে যে ত্রান দেওয়া হয় তা দেওয়া হয়েছে’।বাগান শ্রমিক রাজ কেরকেট্টা জানান, ‘বাগান যখন বন্ধ ছিল তখন পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। বাগান খোলার পর আমরা ভেবেছিলাম হাল হয়ত ফিরবে কিন্তু তা আর হল না’।অন্যদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলিপুরদুয়ার জেলা শাসক আর বিমলা জানান,  ‘গোটা বিষয়টা যেভাবে দেখানো হচ্ছে আদৌ সেরকম নয়। আনাহারে তার মৃত্যু হয়নি। তার শারীরিক সমস্যা ছিল। তার স্ত্রীয়ের খানিকটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগীতা করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তার পরিবার তাতে নিমরাজি। আমরা ধনী ওঁরাওয়ের স্ত্রীকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখারও কথা জানিয়েছিলাম কিন্তু পরিবার রাজি হয়নি। একটি সংস্থাকে গোটা ঘটনাকে এভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্প নিয়ে একাধিকবার আমরা বাগানে যাই। অনাহারের মত ঘটনা কোথাও নেই’।কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা বলেন, ‘বাগান বহুদিন বন্ধ ছিল। আমরাই বিধানসভায় বারবার আওয়াজ তুলে সেই বাগান খুলিয়েছিল। তবে পেমেন্টের একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু অনাহারে মৃত্যু এটা আমার জানা ছিল না। অবশ্যই এটা নিয়ে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার আমরা করব’। 
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)