সহায় পুলিস কর্মী! ১২ বছর পর প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেন প্রতিবন্ধী
২৪ ঘন্টা | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
বিধান সরকার: তুমি আল্লাহর দূত,পুলিস কর্মী সুকুমার উপাধ্যায়কে এই ভাবেই সম্বোধন করেন প্রৌঢ়া আজমিরা বেগম। ব্যান্ডেল ঈশ্বরবাগের বাসিন্দা প্রৌঢ়ার বড় ছেলে সেখ সাইফুদ্দিন গত ১২ বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। তালগাছ থেকে পড়ে কোমর ভেঙে হাঁটা চলার ক্ষমতা হারায় সে। প্রায় ১ বছর কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি সেখানে অস্ত্রোপচার করেও শিরদাঁড়া সোজা হয়নি। তখন থেকেই হুইল চেয়ার সঙ্গী। ক্যাথিডার পাল্টাতে হয় মাসে দু'বার।
বিছানায় শুয়ে থেকে বেডসোর হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা চলছে। কিডনির সমস্যাও দেখা দিয়েছে। সইফুদ্দিনের দূর্দশায় পাশে থাকেনি তার স্ত্রী। তাকে ছেড়ে চলে যায়। মাস দুয়েক আগে চুঁচুড়া হাসপাতালে সইফুদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয় সুকুমারের। সুকুমার উপাধ্যায় চন্দননগর পুলিসের কনস্টেবল। চুঁচুড়ায় চন্দননগর পুলিস হেডকোয়ার্টার পুলিস লাইনে কর্মরত। জেলখানা থেকে আসামী নিয়ে প্রায়ই যেতে হয় হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। সেখানেই সাইফুদ্দিনকে দেখে তার বেদনার কথা শোনেন।তখনই ঠিক করেন কিছু একটা করতে হবে তার জন্য। সুকুমারের এক সহকর্মী মহকুমা শাসকের দেহরক্ষী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। তার সাহায্যে মহকুমা শাসকের সঙ্গে কথা বলে মগড়া বিডিও অফিস থেকে সইফুদ্দিনের জন্য প্রতিবন্দী শংসাপত্র বের করার ব্যবস্থা করেন। সইফুদ্দিনের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না। টাকা দিয়ে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। দিন তিনেক আগে সইফুদ্দিনের অ্যাকাউন্টে প্রতিবন্ধী ভাতার প্রথম কিস্তির টাকা ঢোকে।গত বারো বছরে যা হয়নি পুলিস কর্মী সুকুমারের সাহায্যে তা পূরণ হওয়ায় যারপরনাই খুশি সইফুদ্দিন ও তার মা। প্রৌঢ়া আজমিরার স্বামী সেখ মকবুল যখন মারা যান তাদের তিন ছেলে এক মেয়ে নিতান্তই ছোটো। বড় ছেলে সইফুদ্দিনের বয়স তখন পাঁচ। পরিচারিকার কাজ করে কোনওভাবে ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। পড়াশোনা শেখানে পারেননি অভাবের তাড়নায়। প্রথমে পান্ডুয়ায় বাপের বাড়িতে থাকলেও পরে ব্যান্ডেল ঈশ্বরবাগে চলে আসেন সন্তানদের নিয়ে। রেল লাইনের পারে জলা জমিতে ত্রিপল খাটিয়ে শুরু হয় জীবন যাপন।বর্তমানে মেজো ছেলে দিন মজুরের কাজ করে, ছোটো ছেলে স্থানীয় একটি কারখনায় ঠিকা শ্রমিক। টালির চালার দু কামরা ঘরে মাথা নীচু করে ঢুকতে হয় এমন ঘরে থাকেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তবে বড় ছেলেকে নিয়ে লড়াই থামেনি। প্রায় ত্রিশ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন তবুও বিধবা ভাতাও মেলেনি এমন অবস্থায় ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা কিছুটা হলেও সুরাহা হবে। সইফুদ্দিনের চিকিৎসার জন্য এই ভাতার টাকাটাই কাজে লাগবে।আজমিরা জানান,তিনি উত্তরপাড়ায় পরিচারিকার কাজ করেন। সেখান থেকে সাহায্য পেয়েছেন। ছেলের দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা সেখান থেকেই হয়েছে। সুকুমারের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তার ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত বা রাজনৈতিক দলের কেউ তার খোঁজ নেয়নি। যদিও অনেক বারই দরবার করেছেন প্রৌঢ়া। তাই সুকুমার তার কাছে আল্লাহর দূত।