তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হলে বাড়ির কাছে নিয়োগ! প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কারচুপির অভিযোগ
২৪ ঘন্টা | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রদ্যুৎ দাস: বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ভবনে মেধাতালিকায় থাকাদের কাউন্সিলিং শুরু হয়েছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর শীর্ষ আদালতের নির্দেশে নিয়োগপত্র পাবেন বলে খুশি চাকরি প্রার্থীরা। এর মাঝেই অভিযোগ, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হলে বাড়ির কাছে নিয়োগ। আর আম আদমির কপালে বাড়ি থেকে বহু কিলোমিটার দূর। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কাউন্সিলিং নিয়ে বড়সড় অভিযোগ তুলল বিজেপি। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি উড়িয়েছে তৃণমূল। দুই যুযুধান শিবিরের অভিযোগ আর পালটা অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক পদে ৯৫৩৩ জনকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলায় নিয়োগপত্র হাতে পাবেন ১৩৯ জন। তাই বৃহস্পতিবার অনেকেই তাঁদের কোলে সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে নিয়োগপত্র হাতে নিতে এসেছেন। কিন্তু দিন গড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কাউন্সিলিং চলায় কার্যত ফাঁপড়ে পড়েছেন কোলের বাচ্চা নিয়ে আসা মহিলারা। অনেকেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নীচে কেউ আবার ভাড়া করে আসা গাড়িতে বসেই রাতের খাওয়া সেরেছেন। কারণ তাদের নিয়োগ পত্র হাতে চাই। এদিন রাত ১২টা পর্যন্ত নিয়োগপত্র হাতে পাননি নবনিযুক্তরা। তবে সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতেই তাঁদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে। মিনা কুমারী নামে এক নবনিযুক্ত শিক্ষিকা জানালেন, তিনি কাউন্সিলিং-এর জন্য ছোট বাচ্চাকে নিয়ে মালদা থেকে রাতভর জার্নি করে বৃহস্পতিবার ভোরে জলপাইগুড়ি এসেছেন। এখন দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও কাউন্সিলিং শেষ হয়নি। খুব সমস্যায় পড়েছেন তিনি। অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে কাউন্সিলিং নিয়ে বড়সড় অভিযোগ তোলে বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘ। সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য জয়ন্ত কর সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন এটা লোক দেখানো কাউন্সিলিং হচ্ছে। যারা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ তাদের নাম প্যানেলের নিচের দিকে থাকলেও তারা জলপাইগুড়ি শহরের উপকন্ঠে থাকা স্কুল গুলিতে নিয়োগ পাচ্ছে।কিন্তু যারা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ নয় কিন্তু প্যানেলের উপর দিকে নাম থাকলেও তারা বাড়ির থেকে অনেক দূরে নিয়োগ পেলেন। তারা কাউন্সিলিংয়ের সময় তাদের পছন্দের যায়গা চাইলে তাদের বলা হয়েছে এখানে অন্য লোক আগেই নিয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। নব নিযুক্ত শিক্ষকেরা আবার প্রতারণার শিকার হলেন। অপু রায় নামে এক নব নিযুক্ত শিক্ষক জানালেন, কাউন্সিলিং নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নয়। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর বাড়ির কাছে একটি স্কুলে নিয়োগ। সেখানে ভ্যাকেন্সি ছিল। কিন্তু তিনি যখন কাউন্সিলিং বোর্ডে যান তখন তাঁকে বলা হয় ওই স্কুলে ভ্যাকেন্সি নেই। একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাকে বাড়ি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে ময়নাগুড়ির একটি স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। অপরদিকে, বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের স্বজন পোষণের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল প্রভাবিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি স্বপন বসাক বলেন, বিজেপির এহেন দাবি ভিত্তিহীন। কারণ কঠোর পুলিসি নিরাপত্তার মধ্যে আজ এখানে কাউন্সিলিং হয়েছে। তালিকা এখনও প্রকাশিত হয়নি। আর আমরাও কেউ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত নই। তাই এদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।