• ভোটের দায়!‌ সংসদ রামময়
    আজকাল | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • ‌আবু হায়াত বিশ্বাস: দ্বিতীয় মোদি সরকারের শেষ সংসদ অধিবেশন শেষ হয়ে গেল। শেষ দিনটি সংসদ মেতে উঠল রামনামে।‌ অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হল দিনভর। রামমন্দিরের নির্মাণের কৃতিত্ব তাদেরই, দিনভর বোঝাতে চাইল কেন্দ্রের শাসকদল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়া এই কাজ সম্ভব হতনা বলে দাবি করলেন খোদ অমিত শাহ। গত কয়েকমাস ধরে রামনামে যে উন্মাদনা তৈরি করা হচ্ছিল দেশে গেরুয়া শিবিরের তরফে। দ্বিতীয় মোদি সরকারের শেষ বাজেট অধিবেশনেও সেই রামমন্দির নির্মাণের আন্দোলনের কথা মনে করাল শাসক দল। লক্ষ্য, রামনামে ভোটের বাক্সে ফায়দা তোলা। লোকসভা ভোটে যে বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে রামমন্দির, তা স্পষ্ট হয়েছে বিজেপি নেতাদের কথাতেই। সপ্তদশ লোকসভার একেবারে শেষ অধিবেশনে সংসদে ‘রাম’ অস্ত্রে শান দিয়ে সেটাই প্রমাণ করল গেরুয়া শিবির। বিজেপি সাংসদ সত্যপাল সিং এবং শিবসেনার সাংসদ শ্রীকান্ত শিন্ডে লোকসভায় রাম মন্দির নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত পাঁচ বছরের সরকারের কাজকর্মের উল্লেখ করেন তাঁর ভাষণে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার গত পাঁচ বছরে জোর দিয়েছে ‘‌রিফর্ম’‌, ‘‌পারফর্ম’‌ এবং ‘‌ট্রান্সফর্মে’‌।‌ সপ্তদশ লোকসভায় এমন কিছু নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার, যার জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপেক্ষা করেছিল বলেও দাবি করেন মোদি। এদিন তিন তালাক, ৩৭০ প্রত্যাহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। উঠে আসে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রসঙ্গও। রামমন্দির নির্মাণ প্রস্তাবের আলোচনায় লোকসভায় অমিত শাহ বলতে উঠে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে তুলে ধরেন। জানান,‘‌২২ জানুয়ারি আগামী বহু বছরের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হবে। কারণ ওই দিনটি সমস্ত রাম ভক্তদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছিল।’‌ শাহের বক্তব্য, ‘‌রামমন্দিরের ইতিহাসকে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না।‌ রাম ছাড়া ভারত কল্পনা করা যায় না। রাম হলেন এদেশের আত্মা। ভারতীয় সংস্কৃতি ও রামায়ণকে আলাদা করা যায় না। ২২ জানুয়ারি ৫০০ বছরের সংগ্রামের জয় হয়েছে।’‌ তৃতীয়বার ক্ষমতায় মোদি সরকার আসছে বলেও দাবি করেন তিনি। রাম মন্দিরের আলোচনার সময় অনুপস্থিত ছিল তৃণমূল সাংসদরা। রাম মন্দিরের আলোচনায় অংশ নেয়নি সিপিএমও। তবে কংগ্রেস অংশ নিয়েছিল আলোচনায়। দলের তরফে বক্তা ছিলেন গৌরব গগৈ। বলেছেন অধীর চৌধুরিও। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেন, ‘‌রাম রাজ্য’‌- মানে এমন একটি যুগ যেখানে সবাই খুশি থাকে এবং কেউ যেন দুঃখ না পায়। দেশের নিপীড়িত, অনগ্রসর শ্রেণী ও সংখ্যালঘুরা বর্তমানে সুখী কিনা তা নিয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন কংগ্রেস নেতা। তিনি বলেন, ‘‌ভারত একটি ধার্মিক দেশ। আমরা কোনও একটি ধর্মগ্রন্থে নয়, বরং সমস্ত ধর্মের সমতায় বিশ্বাস করি। কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে।’‌ অন্য দিকে, কংগ্রেসকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ প্রতিপন্ন করার চেষ্টাতেও কোনও খামতি ছিলনা পদ্ম শিবিরের তরফে। এদিন বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সারাঙ্গি দাবি করেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে দেশে রামমন্দির তৈরিই হতনা। বিজেপি সাংসদ সত্যপাল সিং লোকসভায় বলেন, ‘‌যেখানে রাম আছে, সেখানে ধর্ম আছে। কংগ্রেসের আজ এই দেশে এই অবস্থা, কারণ তাঁরা ভগবান রামকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।’‌ এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘‌আমি রামকে সম্মান করি, কিন্তু আমি নাথুরামকে ঘৃণা করি।’‌ রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন,‘‌রাম সবার। যখন রামই ভালবাসার বার্তা, তখন তার নামে কেন বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে?‌’ তাঁর বক্তব্য, ‘‌রাম যখন ন্যায়ের প্রতীক, তখন সমাজের প্রধান ব্যক্তিরা কীভাবে রামের নামে শোষিত-বঞ্চিতদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবিচার করতে পারে?’‌‌
  • Link to this news (আজকাল)