'মানুষকে ভালো রাখতে দিদির উপর বিশ্বাস রাখলাম...' আরামবাগে একই মঞ্চে মমতা-দেব!
২৪ ঘন্টা | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সুতপা সেন: বেশ কয়েকদিন ধরেই শোনা গিয়েছিল রাজনীতি ছাড়বেন দেব। তবে শনিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে সেই সিদ্ধান্তে বদল আনেন দেব। জানা যায় যে ফের ঘাটাল কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হবেন তিনি কারণ তাঁর একটি আবেদন মেনে নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কী সেই আবেদন? সোমবার আরামবাগের কালিপুর ময়দানে হুগলি জেলার পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে জানা গেল দেবের কোন কথা মেনে নিয়ে তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে হাজির ছিলেন দেব।
এদিন দেব বলেন, 'আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম, দিদির হাত ধরে। আমি রাজনীতিতে থেকে গেলাম, দিদির হাত ধরে। আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, কারণটাও বলব। আমি খুব স্পষ্ট কথা বলতে ভালোবাসি। আমি ঘাটালের মানুষের জন্য ফিরলাম। ঘাটালের মানুষদের দীর্ঘদিনের লড়াই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। আমি সেই কারণেই আবার ঘাটালে ফিরলাম। আমি জানি না ২০২৪ সালে কে থাকবে, কে জিতবে। মানুষ যাঁকে ভালোবাসবে, মানুষ যাঁকে বিশ্বাস করবে, তাকেই ভোট দেবে। আমার কাছে দিদির আবেদন, আমি ১০ বছর ধরে কেন্দ্রের সঙ্গে লড়েছি যাতে ওরা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মঞ্জুর করে, কিন্তু ওরা করেনি। ২০২৪ সালে আমি জিতব কি, জিতব না, আমি জানি না। যেই জিতুক, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানটা যেন আপনার হাত ধরেই হয়, এইটুকু আবেদন রাখব। আমি মানুষের ভালোর জন্য, মানুষকে ভালো রাখার জন্য আমি দিদির উপর বিশ্বাস রাখলাম। দীর্ঘ ১০ বছর কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, আশাভঙ্গ হয়েছি। আমার বিশ্বাস, ২০২৪ সালের পর রাজ্য সরকার ঘাটালের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ করবে'।দেবের সেই আবদার রাখলেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, 'এখান থেকে পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষকে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হলো। এর আগে বিভিন্ন জেলার প্রায় ষোলো লক্ষ মানুষকে পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও আটকানোর এর জন্য ২৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। জমি রক্ষা আন্দোলন এর কথা মাথায় রেখে সিঙ্গুরে একটি মনুমেন্ট তৈরি করা হলো প্রায় ৭ কোটি টাকা খরচ করে। এটা কৃষকদের জন্য একটা শ্রদ্ধার্ঘ্য। অনেকে ভাবেন দিদি শুধু বলে। দিদি শুধু বলে না, দিদি করে দেখায়'।ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে দেব আমাকে বলেছে। আমি ইতিমধ্যেই আমার মুখ্য সচিব ও সেচ দফতরের সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা আমরা করবো। ১৭ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে। আমরা আমাদের টাকা দিয়ে কাজ করছি। ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা লাগবে। কিন্তু দেব যখন আমার কাছে চেয়েছে, দিদি ভাইকে ফেরাবে এমনটা তো হতে পারে না। আমরা এটা স্টেপ বাই স্টেপ করবো।পৃথিবীর যে কোনো রাষ্ট্র, যে কোনো রাজ্যকে আমি উন্নয়ন দিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারি। আমাদের এত টাকা ওরা দেয়নি'। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, শীঘ্রই যেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা শুরু করা হয়, যাতে আগামী তিন-চার বছরে সেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সাফল্য পায়। পাশাপাশি দেবের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেব আমি তোমার আবদার রেখেছি। এখন তুমিই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের চ্যাম্পিয়ন।' দেবের কাছে মিষ্টি খাওয়ানোর আবদার করার পরেই মমতা বলেন যে ফেলু মোদকের মিষ্টি খেতে ভালোবাসতেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তাঁর জন্য হুগলী থেকেই মিষ্টি ও মালপোয়া নিয়ে যেতেন তিনি ও প্রাক্তন সাংসদ আকবর আলি খন্দকার।