এক সময়ে পড়াতেন! নিজের স্কুলের উদ্বোধনে স্মৃতির সরণি ধরে হাঁটলেন ৬০ টাকার 'দিদিমণি' মুখ্যমন্ত্রী...
২৪ ঘন্টা | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী? হ্যাঁ, তা বলা চলে বইকী! স্মৃতির সরণি ধরে অনেকটাই পিছনে হেঁটে গেলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। এত দীর্ঘ, এত কর্মময়, এত ঘটনাবহুল একটি জীবন-- তারই কোনও এক পর্বে কিছুদিনের জন্য একটি স্কুলে পড়িয়েছিলেন তিনি। তখন সদ্য তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। সংসারে টানাটানি তো ছিলই। তিনি নিজেও তখন ছাত্রী। কিন্তু পড়তে-পড়তেই কিছু রোজগারের লক্ষ্যে পড়াতে শুরু করেছিলেন এই স্কুলে। 'মন্মথনাথ নন্দন গার্লস অ্যান্ড বয়েজ প্রাইমারি স্কুল'।
এরকম ঘটনা তো অনেক বিখ্যাতের জীবনেই ঘটে। কিন্তু নিজের প্রথম তারুণ্যের স্ট্রাগলকে মনে রাখলেও, স্ট্রাগলের ক্ষেত্রটিকে অনেকেই হয়তো এভাবে মনে রাখেন না। মনে রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সেটা সহসা নয়। তিনি নাকি মাঝে-মাঝেই খোঁজ নিতেন স্কুলটির। অবশেষে একদিন সটান ঢুকেও পড়েন সেই চত্বরে। গিয়ে শোনেন, স্কুলটির ভবিষ্যৎ মোটেই উজ্জ্বল নয়, হয়তো বন্ধও হয়ে যেতে পারে এটি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, স্কুলটিকে বাঁচাতে হবে। বাঁচালেনও। তাঁর সেই ভাবনা অনুসরণ করেই তাঁর প্রশাসন ( এক্ষেত্রে কাজটি করেছে কলকাতা কর্পোরেশন) প্রয়োজনীয় সমস্ত কর্মপ্রক্রিয়া যথাসময়ে সমাধা করে। এবং তৈরি হয়ে যায় স্কুলের নতুন ভবন। মর্নিং সেকশনের নাম থাকে 'নন্দন প্রাইমারি'ই, তবে ডে-স্কুলের নাম হয় 'ভবানীপুর মডার্ন স্কুল'। মাধ্যমিক পর্যন্ত এই স্কুল। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল হল এটি। আজ, সেই স্কুলই উদ্বোধন হল। ভবানীপুরে নতুন করে তৈরি করে তোলা সেই স্কুলের উদ্বোধনে এসে স্পষ্টতই নস্টালজিক হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধন করে তিনি বলেন, 'দুতিন বছর আগে পুজোর সময় ঘুরছিলাম। তখনই হঠাৎ করে স্কুল চত্বরে ঢুকে পড়ি। শুনি যে, স্কুলটার হাতবদল ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করি স্কুলটা বাঁচাতে হবে।'অনেক পুরনো দিনের কথা বলেন এদিন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমি যখন এই স্কুলে পড়াতাম, তখন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী ছিলাম। বাবা মারা গিয়েছেন। টানাটানি ছিল। হাতখরচের জন্য করতাম। আমার সঙ্গে ছাত্রদের বয়সের ফারাক খুব বেশি ছিল না-- ওই পাঁচ-ছয় বছরের মতো।' তিনি যোগ করেন, 'আজ অনেকের কথাই মনে পড়ছে। একটা স্মৃতি তো থাকেই। মনে পড়ছে, হরিশ চ্যাটার্জী দিয়ে ঢুকে আমি হেঁটে হেঁটে এই স্কুলে আসতাম।'আরও বলেন, 'ইদানীং মাঝে-মাঝে এসে খবর নিতাম-- কেমন চলছে স্কুলটা। ববিকে দেখাতাম, শোন, এই যে মাঠটা দেখছিস, এখানে একটা স্কুল আছে, শুনছি স্কুলটা থাকবে না। কিছু করা যায় কি? এটুকুই বলেছি। তারপর ওরাই যা করার করেছে। চারকাঠা জমি কিনে পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে এই বিল্ডিংটা তৈরি হয়েছে।'অবশেষে সেই স্কুল নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সংশ্লিষ্ট পাড়াও খুব উল্লসিত। নতুন করে স্কুলটা তৈরি হতে সকলেই খুব খুশি।