জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সন্দেশখালি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সপ্তাহের প্রথম দিনেই রাজ্য রাজনীতির পারদ চড়াল সন্দেশখালি। কেরল সফর কাটছাঁট করে সোমবার সন্দেশখালি যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে কাছে পেয়ে, তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন স্থানীয় মহিলারা। এদিন সন্দেশখালি নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন সাংসদ নুসরত জাহান। তিনি বলেন, 'এই কঠিন পরিস্থিতিতে, লোককে রাগানো বা প্রভাবিত করার থেকে নিজেদের বিরত রাখুন। প্রশাসনকে সাহায্য করুন। রাজ্য সরকার ক্লান্তিহীনভাবে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এই পরিস্থিতিকে রাজনীতির রঙ দেবেন না। আমাদের কাজ আগুন নেভানো, আগুনে ঘি দেওয়া নয়। প্রশাসনকে সাহায্য করুন। তাদের দায়িত্ব পালনে সাহায্য করুন।'
সোমবার সকাল সন্দেশখালি ইস্যুতে এদিন তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য বিধানসভা অধিবেশনও। গায়ে ‘সন্দেশখালি সঙ্গে আছি’ লেখা টি-শার্ট পরে এদিন অধিবেশনে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্য বিজেপি বিধায়করা। স্পিকারের আপত্তি সত্ত্বেও সেই টি-শার্ট খুলতে রানি হয়নি প্রধান বিরোধী দল। এরপর অধিবেশনে সন্দেশখালি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। বেশকিছুক্ষণ হট্টগোলের পর, শাসক দলের আনা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে শুভেন্দু-সহ ৬ জন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। সন্দেশখালি যাওয়ার পথে বাসন্তী হাইওয়ের উপর রাজ্যপালের কনভয় লক্ষ্য করে কয়েক জায়গায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। কিন্তু বোস সন্দেশখালি পা রাখতেই দেখা যায় অন্য ছবি। রাজ্যপালকে উলুধ্বনি-পুষ্পবৃষ্টিতে স্বাগত জানান গ্রামের মহিলারা। কেউ বোসের হাতে রাখি বেঁধে দেন। কেউ আবার সটান তাঁর পায়ে পড়ে যান। শাহজাহান-শিবু-উত্তমদের বিরুদ্ধে, রাজ্যপালের হাতে লিখিত অভিযোগও তুলে দেন মহিলারা। পরে ধামাখালি ফিরে সাংবাদিক বৈঠকে বোস বলেন, তিনি দোষীদের শান্তি নিশ্চিত করতে কোনও কসুর করবেন না। এদিন সন্দেশখালি যাওয়ার পথে বিজেপি বিধায়কদের বাস আটকায় পুলিস। সায়েন্স সিটির কাছে, বাসন্তী হাইওয়ের মুখেই আটকে দেওয়া হয় বিজেপির বাস। প্রতিবাদে বাস থেকে নেমে পুলিসের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি বিধায়করা। যদিও ঠাস বাসেই বসে থাকেন শুভেন্দু। সেখানে বসেই দফায় দফায় রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিরোধী দলনেতা। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাস থেকে নেমে, অন্য বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে রাস্তায় বসে পড়েন শুভেন্দু। কিছুক্ষণ স্লোগান দেওয়ার পর, ফের সন্দেশখালি চলোর ডাক দিয়ে ফিরে যান বিরোধী দলনেতা। সন্দেশখালিকাণ্ডের আঁচ এবার দিল্লিতে। স্থানীয় মহিলারা বাংলায় যা বলেছেন, হিন্দি ও ইংরেজিতে তা তর্জমা করে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এদিন বিজেপি-র সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, 'বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলেরা গুন্ডারা দেখে আসে, কাদের বাড়ির মেয়ে সুন্দরী, কোন মেয়েদের বয়স কম। তাঁদের স্বামীদের বলা হয়েছে, তুমি স্বামী হতে পার, কিন্তু তোমার কোনও অধিকার নেই। মহিলারা বলেছেন, নিয়ে চলে যাবে রাতের পর রাত। যতক্ষণ তাঁদের মন না ভরবে, ততক্ষণ তোমার রেহাই নেই'।স্মৃতির আরও বক্তব্য, 'আমরা নাগরিক হিসেবে কি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করব? এই ব্যক্তিটি কে, যাঁর বিরুদ্ধে সন্দেশখালির মহিলারা গণধর্ষণের অভিযোগ করছেন? এখনও পর্যন্ত সবাই ভাবছিল, শেখ শাহজাহান কে? এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে জবাব দিতে হবে, কোথায় শেখ শাহাজাহান? মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়, আপনি রাজনৈতিক লাভের জন্য তফশিলি জাতি, মৎস্যজীবী পরিবার ও কৃষক সম্প্রদায় ও তাদের মহিলাদের সম্মান নষ্ট করেছেন'।তৃণমূল হাত তুলে নেওয়ার পর উত্তম সর্দারকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিস। কিন্তু এখনও অধরা শেখ শাহজাহান ও তার আরেক শাগরেক শিবপ্রদাস হাজরা। ক্ষোভে ফুঁসছে সন্দেশখালি। এই ক্ষোভ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার শাগরেদ উত্তম-শিবুর বিরুদ্ধে। ক্ষোভ পুলিস-প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়েছে। আরামবাগের পথে ডুমুরজলায় মন্তব্য মমতার। যে কেউ যেতেই পারেন। রাজ্যপালের সফর বললেন মমতা। এই পরিস্থিতিতে সন্দেশখালিতে শ্লীলতাহানির অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিল রাজ্য মহিলা কমিশন। সোমবার সন্দেশখালি যান কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে বেশ কয়েকজন স্থানীয় মহিলার সঙ্গে কথাও বলেন। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দাবি, নির্যাতন বা হেনস্থার মত অভিযোগ পেলেও, সন্দেশখালি ঘুরে শ্লীলতাহানির কোনও অভিযোগ তাঁর কানে পৌছয়নি।