• ভবানীপুরে নবরূপে স্কুলের উদ্বোধন ‌করলেন মমতা
    আজকাল | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • দীপঙ্কর নন্দী:‌ কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ভবানীপুরে কাঁসারিপাড়ায় মন্মথনাথ প্রাইমারি স্কুলে পড়াতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অনেক বছর কেটে গেছে। পরে সেই স্কুল উঠে যেতে বসেছিল। ভগ্নদশা এই স্কুলের পাশ দিয়ে একদিন ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে করে যাওয়ার সময় তাঁকে বলেন, ‘এই স্কুলে আমি পড়াতাম। স্কুলের অবস্থাটা দেখেছিস? তোরা যদি দায়িত্ব নিয়ে স্কুল সংস্কার করে দিস, তাহলে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের খুব উপকার হবে।’ মমতাকে ফিরহাদ বলেন, ‘হ্যঁা দিদি, স্কুলের কাজ শুরু হবে। আপনি কোনও চিন্তা করবেন না।’ মমতা তখন বলেন, ‘আমার দলের ছেলেরা খুব বাধ্য, আমি যখন কোনও কথা বলি সেটা রাখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।’ স্কুলের কাজ শুরু হয়ে গেল। মাথা তুলে দাঁড়াল পাঁচতলা স্কুলভবনটি। নাম দেওয়া হল ভবানীপুর মডার্ন স্কুল। দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলটির ভবন নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫ কোটি টাকা। মমতা বলেন, ‘কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট হয়ে বিশুদের গলি দিয়ে ভবানীপুর পাঠাগারের পাশ দিয়ে স্কুলে আসতাম।’ কলকাতা ও মফস্সলে পাড়ার অনেক রাস্তাকে বিভিন্ন মানুষের বাড়ির নামের গলি হিসেবে বলার চল রয়েছে। অনেকটা সেভাবেই ‘বিশুদের গলি’ বলে উল্লেখ করলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ আমার কাছে জানতে চান, আমি এত রাস্তা চিনি কীভাবে। আমি চিনব না তো কে চিনবে? আমি তো রাস্তা, গলি ঘুরে বেড়াতাম। আজকে এই স্কুলটি নতুনভাবে হওয়ায় আমার খুব ভাল লাগছে। আমার এক চেনা ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে চন্দননগরে। আজকের অনুষ্ঠানে দেখছি সেই চেনা ছাত্রীকে।’ আবেগতাড়িত হয়ে মমতা বলেন, ‘কত ছাত্রী বিদেশে চলে গেছে। আমার একজন সিনিয়র শিক্ষিকা, তিনিও মারা গেছেন। যা–ই হোক, ববিকে বলেছি স্কুলের সামনে একটা সুন্দর মাঠ করে দিতে। ওখানে মাল্টিজিমেরও ব্যবস্থা থাকবে।’ বক্তব্য পেশের পর মমতা স্কুলের সরস্বতী প্রতিমাকে প্রণাম করেন। স্কুল ঘুরে দেখে এসে তিনি বলেন, ‘আমি স্কুলের ভেতরটা দেখে মুগ্ধ। খুবই আকর্ষণীয় হয়েছে স্কুলটি। কম্পিউটার আছে, ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। আগামী দিনে এই স্কুল থেকেই বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হবে।’ দিদিমণিদের গল্প শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন যাঁরা পড়ান, তাঁদের সকলকে তিনি ডাকেন মঞ্চে। এখন শিক্ষক–শিক্ষিকা ৯ জন। তাঁদের নিয়ে স্কুল দেখতে যান। পাশাপাশি তিনি আরেকটি জিনিস মনে করিয়ে দেন, ২৫ বছর আগে তাঁর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করা হয়েছে। বলেন, ‘এলাকার স্বাধীন সঙ্ঘে চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছিলাম। আমি যখন মারা যাব তখন যেন মনে থাকে আমার চোখ দুটো দান করা হয়েছে।’ বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘৫ লক্ষ সরকারি চাকরি রেডি করে রেখেছি। কিন্তু সবসময় বিজেপির লোকেরা চাকরি আটকে দিচ্ছে। শকুনের মতো তাকিয়ে আছে, কখন আমি কর্মসংস্থানের কথা বলি। ওদের ভাষা এমন, যাতে শব্দদূষণ হচ্ছে। আমরা ভেদাভেদ করি না। অধিকার যার যার নিজস্ব, কে কী ধর্ম পালন করবে, তা নিয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করি না। ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটির সঙ্গে যৌথভাবে এই স্কুলটি যদি চালানো যায়, তাহলে অনেক সুবিধে হবে। দক্ষিণ কলকাতার শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নতি হবে।’ অনুষ্ঠানে উপচে পড়েছিল ভিড়। বক্তব্য পেশ করেন ব্রাত্য বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন মালা রায়, কাজরী ব্যানার্জি, অসীম বসু। মমতা বারবার এলাকার কার্তিক মান্নার নাম করে বলেন, তাঁর অবদান ভোলার নয়।
  • Link to this news (আজকাল)