• সরস্বতীর কাছে পুঁটির প্রার্থনা, ওদের 'মানুষ' করো
    আজকাল | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • রিয়া পাত্রমনে পড়ে নগরকীর্তনের পুঁটির কথা? বড় ভালবাসত ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে, একটু কাজল দিতে। এটুকু ইচ্ছার জন্য, আহ্লাদের জন্য কতই না লাঞ্ছনা! এরকম কত পুঁটি রয়েছে আমাদের বাড়িতে, পাড়ায়, শহরে। সময় এগোলেও এখনও সমাজ সার্বিকভাবে প্রস্তুত নয় পুঁটিদের বড় হওয়াকে স্বাগত জানাতে। সমাজকে আরও এককদম এগনোর বার্তা দিতেই এবার উদ্যোগ নিয়েছেন শিল্পী। নিজেকে দেবু বলেই পরিচয় দিতে অভ্যস্ত। আর্ট কলেজের টেক্সটাইল বিভাগে পড়াশোনা করেছেন, এখন রয়েছে নিজের ব্র্যান্ড, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পোশাক পরিকল্পনা করেন। গত কয়েক বছর ধরে একই সঙ্গে পরিকল্পনা করছেন পাড়ার সরস্বতী পুজোর। করোনা কালের সময় থেকেই তাঁর এই উদ্যোগ। হাত মিলিয়েছেন পাড়ার বন্ধুরা, এমনকি পুঁচকেরাও। পাইকপাড়ার ক্যাম্প বাগানে ঘিঞ্জি গলি ধরে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে ঘরের বাইরের আরেক ঘরকে। ওটাই সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল। টালির ছাদের ঘরের এক দেওয়ালকে আদল দেওয়া হয়েছে ঘরের। সামনে সরস্বতী প্রতিমা, লাল পেড়ে হলুদ ঢাকাই পরে। আর মূর্তির দিকে অপলক তাকিয়ে এক মূর্তি। ছলছল চোখ তার, কপালে লাল টিপ। এই সমাজে পুঁটিদের প্রতিনিধি সে, গৌরব। ছোটবেলা থেকেই "যথেষ্টভাবে পুরুষালি" আচরণ না করার জন্য সকলেই তাকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে। "মেয়েদের মত" ঘরকুনো হওয়ার জন্য, বা কথা বলার ধরণ, হাঁটার জন্য, ক্রিকেটের জায়গায় রান্নাবাটি খেলতে চাওয়ার জন্য, বা পাঞ্জাবি না চেয়ে শাড়ি পরতে চাওয়ার জন্য তাকে প্রতিপদে সমালোচনা শুনতে হয়। পুজোর দিন সরস্বতীকে খোলা চিঠি লিখেছে সে। তাতে ভাঙা অক্ষরে লেখা, "ও ঠাকুর,..সব পড়া করেছি, তাও ওরা আমাকে এমা তুই তো মেয়ে মেয়ে কেন বলে? দেওয়ালে রয়েছে ওই চিঠির প্রতিলিপি। ড্রেসিং টেবিলে রাখা হয়েছে লাল টিপ, প্রসাধনী বোতলের রঙ রাখা হয়েছে গোলাপী। কারণ, শিল্পী জানাচ্ছেন,গৌরবের "গৌরী" মনের কাছে এসব কিছু বড় সুন্দর, দৃষ্টি নন্দন। সেই সবকিছুকেই এবারের সরস্বতী পুজোয় ফুটিয়ে তুলেছেন দেবু। কেন এই পরিকল্পনা? তাঁর মতে," নতুন কিছু ভাবতে চাই প্রতিবছর। সরস্বতী পুজো ছোটদের পুজো। চাই ওদের বড় হওয়ার রাস্তা সুন্দর হোক, সুগম হোক।" পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণতা দিতে গান ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাঝে মাঝে রয়েছে ওদের বেড়ে ওঠার রাস্তায় শোনা কটু কথাগুলিও। গানের ভাবনা প্রীতম গুহর, গেয়েছেন দীপ। এই সমগ্র পরিকল্পনায় দেবু পাশে পেয়েছেন বন্ধুদের, আর্ট কলেজের জুনিয়রদের। দেবব্রত, ঋত্বিকা, শরদিন্দু, দেবজ্যোতি, সায়ন, সৌম্যদীপ, শাশ্বত, সন্দীপন, ভাগ্যজিৎরা সব কাজ ফেলে সাহায্য করেছেন তাঁকে। পরিকল্পনা শুনে গুজরাটে বসে গৌরবের মূর্তি বানিয়ে পাঠিয়েছেন অরিৎ, সুদীপ, কৌশল। টাকি থেকে এসে আলপনা দিয়ে গিয়েছেন শুভঙ্কর। পুজোর আচারেও ঘরোয়া ভাবনা, বানানো হয়েছে নাড়ু। কাল সকালেই পুজোয় বসবেন পুরুত ঠাকুর।গৌরব ছলছলে চোখে অঞ্জলি দেওয়ার সময় বলবে, "তুমি একটু ওদের বলে দিও না গো ঠাট্টা যেন না করে।"
  • Link to this news (আজকাল)