প্রদ্যোত দাস: এই প্রথম ঘুড়ির উৎসব তিস্তা পাড়ে! আজ জলপাইগুড়ির এই ঘুড়ি-উৎসব জেলার স্থানীয় সংস্কৃতিতে এক আলাদা মাত্রা এনে দিল। একদিকে সরস্বতী পুজো, অন্য দিকে, ভ্যালেন্টাইনস ডে। এর উপর ঘুড়ি-উৎসব যেন উপরি পাওনা জলপাইগুড়িবাসীর। ছোট থেকে বড় সবারই উপরি পাওনা হয়ে রইল এই ঘুড়ি-মুহূর্ত। এক সময় তো সকলের চোখ আকাশের দিকে কখন ঘুড়ি ভো কাট্টা হয়! সেই ঘুড়িই আবার তুলে নিয়ে এসে নতুন মাঞ্জায় নতুন করে আকাশে ওড়ানো যায়। সব মিলিয়ে এদিন তিস্তা পাড়ে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘুড়ি ওড়ানোকে কেন্দ্র করে জলপাইগুড়িবাসীর অনেকেরই শৈশবের স্মৃতি ভেসে উঠল। জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর ধারের অবারিত নীল আকাশ। আজ, সরস্বতী পুজোর দিনেই এই নীল আকাশে উড়ল রঙ-বেরঙের হরেক ঘুড়ি।এক সময়ে পাড়ার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার ফাঁকে সুযোগ পেলেই মাঠে-ময়দানে ঘুড়ি নিয়ে ছুটত। এখন এর উল্টো। ছেলেমেয়েরা স্মার্ট ফোন নিয়েই সময় কাটায়। কিন্তু বাইরের আনন্দ পেলে এই একলা আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। আজ ঘুড়ি ওড়ানোর এই আয়োজনে সেই উপলব্ধিই হল অনেকের। নতুন প্রজন্মকে এই অনাস্বাদিতপূর্ব অনাবিল আনন্দ দিতে এই ঘুড়ি ওড়ানো উৎসবের আয়োজন করেছে জলপাইগুড়ি প্রকৃতিপ্রেমী সংস্থা।স্থানীয় দুই ঘুড়ি কারিগর নিখিল বিশ্বাস ও নাথুরাম বাউল বলেন, ছোটবেলায় নিজের হাতে ঘুড়ি তৈরি করে উড়িয়েছি। এবার ঘুড়ি উৎসবের জন্য ঘুড়ি তৈরি করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। জানা গিয়েছে, মোট ৫০০টি ঘুড়ি থাকছে-- পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গা, ময়ূরপঙ্খী, মুখপোড়া, চাপরাশ, চৌরঙ্গী ইত্যাদি। এছাড়াও ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে তৈরি বড় উড়োজাহাজ ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি, বক্স ঘুড়ি, ঝাপ ঘুড়ি, ঢোল ঘুড়ি। ঢোল ঘুড়ি লম্বায় ৫ ফুট, চওড়ায় দুফুট। জলপাইগুড়ি প্রকৃতিপ্রেমী সংস্থার কনভেনার দীপাঞ্জন বকসি বলেন, চিনা মাঞ্জা ও প্লাস্টিকের মাঞ্জা আমাদের এই ঘুড়ি উৎসবে নিষিদ্ধ। করলা নদীর স্বচ্ছতা বজায় রাখার পাশাপাশি জলপাইগুড়ির জুবিলি পার্ক-সংলগ্ন তিস্তা নদীর ধারের পশু পাখি ও মানুষজনের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, সেকথা মাথায় রেখেই পুরো আয়োজনটা করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব সুতো দিয়ে ওড়ানো হবে ঘুড়ি। এবং প্লাস্টিক নয়, সবই থাকবে কাগজের ঘুড়ি।