• ভারতের জার্সিতে খেলার সুযোগ না পেলে, আবার ট্রেনে ট্র্যাক প্যান্ট বিক্রি করতে চেয়েছিলেন সরফরাজ...
    আজকাল | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজকোটে তৃতীয় টেস্ট শুরুর ঠিক আগে অনিল কুম্বলের থেকে টেস্ট ক্যাপ নেওয়ার সময় কান্না চেপে রাখতে পারেননি সরফরাজ খান। আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তাঁর বাবা এবং স্ত্রীও। টুপি হাতে পাওয়া মাত্র বাবা নওশাদের কাছে ছুটে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন সরফরাজ। তিনি একসময় বলেছিলেন, "দেশের হয়ে অভিষেক হওয়ার দিন, আমি সারাদিন কাঁদব।" দিন গড়াতেই ইংল্যান্ডের বোলারদের কাঁদিয়ে ছাড়েন সরফরাজ। অভিষেক টেস্টে ৬৬ বলে ৬২ রানের দাপুটে ইনিংস খেলেন। যেভাবে খেলছিলেন, রানআউট না হলে বড় রান পেতে পারতেন। তবে তাঁর রান দলকে তিনশোর গণ্ডি পেরোতে সাহায্য করে। বিভিন্নভাবে তাঁকে পরীক্ষার মুখে ফেলার চেষ্টা করে ইংল্যান্ডের বোলাররা, তবে সব বলের জবাব ছিল তাঁর ব্যাটে। যেমন একের পর এক হার্ডল পেরিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন, তেমনই এদিন ইংলিশ বোলারদের বাধা টপকে অর্ধশতরানে পৌঁছে যান। তবে যাত্রাটা একেবারেই সহজ ছিল না। আবেগ এবং অধ্যাবসার জলজ্যান্ত উদাহরণ সরফরাজ।প্রায় গত ১৫ বছর ধরে ভোর পাঁচটায় উঠে ক্রস ময়দানে সাড়ে ছয়টায় প্র্যাকটিসে যান। ধূলোয় ভরা পিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করতেন। যেদিন যেতে পারতেন না, সেদিন বাড়ির সামনে বাবার তৈরি পিচে ভাই মুশিরের সঙ্গে প্র্যাকটিস করতেন। তাঁর বাবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা থ্রো ডাউন করতেন। টাকার বিনিময়ে দল খুঁজে নিয়ে আসতেন যাতে ছেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে পারে। হার-জিত নির্বিশেষে গোটা ইনিংস ব্যাট করতেন সরফরাজ। খানদের জীবনযাত্রা সহজ ছিল না। একসময় ট্রেনে লজেন্স এবং শশা বিক্রি করতেন তাঁর বাবা নওশাদ। আজমগড় থেকে চলে আসার পর ট্রেনে ট্র্যাক প্যান্ট বিক্রি শুরু করেন। ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ না পেয়ে একদিন সরফরাজ তাঁকে বলেন, "আব্বু, যদি ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ না পাই, আমরা আবার ট্রেনে ট্র্যাক প্যান্ট বিক্রি শুরু করতেই পারি।" আজ হয়তো সেদিনের স্মৃতি ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার ব্যাট করার জন্য চার ঘণ্টা প্যাড পরে বসেছিলেন সরফরাজ। শেষপর্যন্ত যখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে, স্নায়ু ধরে রেখে নিজের সেরাটা দেন। বাবা-ছেলের কাছে এটা স্বপ্নের মুহূর্ত। দিনের শেষে সরফরাজ বলেন, "আমি চার ঘন্টা প্যাড পরে বসেছিলাম। মনে মনে নিজেকেই বলছিলাম, আমি এতদিন ধৈর্য ধরে রেখেছি, আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা। বাবার সামনে ভারতের জার্সিতে খেলা আমার স্বপ্ন ছিল। প্রথমে বাবা মাঠে আসতে রাজি ছিল না। কিন্তু কয়েকজন অনুরোধ করায় আসে এবং এই স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থাকে। আমার মনে হচ্ছে কাঁধ থেকে অনেকটা বোঝা নেমে গেল। বাবার চেষ্টা বৃথা যায়নি।" পরে জানা যায়, সরফরাজের মুম্বইয়ের টিমমেট সূর্যকুমার যাদবের অনুরোধেই রাজকোটে আসে তাঁর বাবা। আজকের সকালটা অন্যান্য দিনের মতোই শুরু হয় সরফরাজের। দাঙ্গলের টাইটেল সং শুনেই দিন শুরু হয় মুম্বইয়ের ব্যাটারের। এই গানটির সঙ্গে লড়াই এবং অনুপ্রেরণা জড়িয়ে আছে, যা সরফরাজের জীবনের প্রতিচ্ছবি। এই জায়গায় পৌঁছতে কালঘাম ছুটে যায় তাঁর। প্রথমে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে একটানা সাফল্যের পরও তিন মরশুম অপেক্ষা করতে হয়। ২০২২ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে দলে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু সিনিয়র প্লেয়াররা দলে ফিরতেই তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়। চাউর হয়ে যায়, পেস এবং বাউন্সে স্বচ্ছন্দ নয় সরফরাজ। আইপিএলে তার প্রমাণ মেলে। মাঝে বেশ কয়েকবার বীতশ্রদ্ধ হয়ে যায় বাবা-ছেলে। কিন্তু ছেলেকে বারবার একটি শায়েরি শোনান নওশাদ। যা ধৈর্য ধরার এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখার বার্তা দেয়। আজ সব লড়াই সার্থক। টেস্টে এই রূপকথার অভিষেক ধরে রাখতে পারলে, আর ট্র্যাক প্যান্ট বিক্রিতে ফিরতে হবে না। বরং, তাঁর ট্র্যাক প্যান্ট এবং জার্সি শুধু ট্রেনেই নয়, দেশের বিভিন্ন মার্কেটে রমরমিয়ে বিক্রি হবে। 
  • Link to this news (আজকাল)