চোখের সামনেই অবৈধ নির্মাণে তৈরি তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়, বিপাকে পুরকর্মীরা
২৪ ঘন্টা | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
নারায়ণ সিংহ রায়: তৃণমূল বনাম তৃণমূল দ্বন্ধে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন পুরকর্মীরা। তড়িঘড়ি অবৈধ জায়গায় তৈরি হল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়লেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের কর্মীরা। শুক্রবার শিলিগুড়ির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাতি কলোনিতে একটি অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে যায় শিলিগুড়ি পুরনিগম। সেখানেই শুরু হয়ে যায় তুমুল বচসা।
পুরকর্মীরা রীতিমতো বিপাকে পড়েন। পুরকর্মীদের চোখের সামনেই অবৈধ নির্মাণে তৈরি হয়ে যায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। শিলিগুড়ি পুর নিগমের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র দেবনাথের বাড়ি। অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে এদিন বাড়িটি ভাঙতে যান পুরনিগমের কর্মীরা। এর আগে তাঁকে একাধিকবার নোটিসও দেওয়া হয়। পুরকর্মী ও পুলিসের উপস্থিতিতেই বাড়ির নীচে তড়িঘড়ি তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয় খোলা হয়।বাড়ি মালিক তথা ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের-সহ সম্পাদক সৌমিত্র দেবনাথের সঙ্গে তুমুল বচসাও শুরু হয় পুরকর্মীদের। সৌমিত্র বাবুর অভিযোগ, 'সমগ্র ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড ধরেই এমন নির্মাণ রয়েছে। আমাদের জমির কোনও পাট্টা নেই, কাজেই প্ল্যান পাস করার কোন জায়গাও নেই। কিন্তু আমাদের ওয়ার্ড বাড়ি নির্মাণ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই। সবাই আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছি। কিন্তু কেউ আমার বাড়িকে ঘিরেই অভিযোগ জমা দিয়েছে। এটা ইচ্ছাকৃত করা হয়েছে।'অন্যদিকে, বাড়িতে তড়িঘড়ি দলীয় কার্যালয় নির্মাণ নিয়ে সৌমিত্র বলেন, 'দলের শীর্ষনেতার অনুমতিতেই এই দলীয় কার্যালয় খোলা রয়েছে। জেলার সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বিষয়টি জানেন। তাকে আমরা সবটা জানিয়েছি। তিনিই মেয়রের সঙ্গে কথা বলে নির্মাণ ভাঙা থেকে রুখলেন।' সৌমিত্রর এমন মন্তব্যে শোরগোল পড়ে যায়। তৃণমূল নেতার বাড়ি বলেই তাহলে রেহাই মিলল অবৈধ নির্মাণের।এ প্রসঙ্গে দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ ফোনে জানান, 'ওনারা আমার কাছে এসেছিলেন৷ আমি জানিয়ে দিয়েছি আইন আইনের পথে চলবে। কর্মীরা তো আমাকে বলবেই, সেটা আমাকে শুনতেই হবে, কিন্তু আইনে অনুযায়ী যা ব্যাবস্থা নেওয়ার সেটাই হবে৷' তবে তৃণমূল কর্মী সৌমিত্র দেবনাথ অভিযোগ থেকে বাদ রাখেননি খোদ দলের বা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমর আনন্দ দাসকে। কাউন্সিলর অমর আনন্দ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি জানান, 'লোক মারফত দশ লক্ষ টাকা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন কাউন্সিলর। নির্বাচনের সময় কাউন্সিলরকে জেতাবার জন্য বহু চেষ্টা করেছি সব দিক থেকে। আজকে আমার বাড়িকেই বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে। বাড়িকে কেন্দ্র করে যে অভিযোগ করেছে তার সঙ্গে মীমাংসায় বসতে চেয়েছিলাম। সেই সময়ই দশ লক্ষ টাকার দাবি তোলা হয়।'এ প্রসঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অমর আনন্দ দাস বলেন, '৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাড়িই রেলের জমি ও সরকারি জমিতে। বংশপরম্পরায় তারা বসবাস করছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী পাট্টার কাজ চলছে। আদালতের কাছ আমার আবেদন এভাবে বাড়ি ভাঙার নির্দেশ একটু বিবেচনা করে দেখার। সৌমত্র দেবনাথের বাড়ি নিয়ে যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছিলেন তার সঙ্গে সৌমিত্র বাবুদের বসিয়ে একাধিবার সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেছি কিন্তু সৌমিত্র দেবনাথ তাতে কর্ণপাত করেননি। তিনি আমার বিরুদ্ধে দশ লক্ষ টাকার যে অভিযোগ করেছে সেটা তাকে প্রমাণ করতে হবে অন্যথায় আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।'অন্যদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব জানান, 'আলোচনা করব। যে পদ্ধতি রয়েছে সেই পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ হবে।'