মাছ বিক্রেতার পথ আটকে শিক্ষিকার বাড়ি চেনান পরিবারের ১৪ জন সদস্য, তারপর...
২৪ ঘন্টা | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
চম্পক দত্ত: পরিবার বলতে স্বামী ও এক ছেলে,এক মেয়ে। স্বামী নিমাই চন্দ্র পান পেশায় উকিল, আর ছেলে মেয়ে স্কুল পড়ুয়া। আর সবিতা দেবী চন্দ্রকোনা পৌর এলাকারই অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ঘর পরিবার সামলে শিক্ষকতার জন্য স্কুলে যেতে হয় সবিতা দেবীকে। এসবের মাঝেও সবিতা দেবী তার পশু প্রেমের সত্ত্বা বজায় রেখে চলেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মিত্রসেনপুর এলাকার বাসিন্দা বছর ৪৮ এর সবিতা পান।
গত ৮-৯ বছর ধরে মিত্রসেনপুর এলাকার অলিগলি ঘুরে বেড়ানো ১৪ টি বিড়ালের কাছে পরমাত্মীয় ও মাতৃসম স্কুল শিক্ষিকা সবিতা পান। তাদের ভরনপোষণের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, যেভাবে একটা বাচ্চাকে মা যত্ন করে রাখে ঠিক সেভাবেই পাড়ার কাকিমা সবিতা পান। এত সংখ্যক বিড়ালকে যত্ন করে দেখভাল করেন। পাড়ার কাকিমার এহেন পশু প্রেমে মুগ্ধ তারা।সকালে পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রি করতে যান তুফান পাল নামের এক মাছ বিক্রেতা। ওই মাছ বিক্রেতার পার্মানেন্ট কাস্টমার সবিতা দেবী। তবে সবদিন বাড়ির জন্য মাছ না কেনা হলেও নিয়ম করে সকালে মাছ বিক্রেতাকে পৌঁছতে হয় সবিতা দেবীর বাড়ির উঠানে। কারণ প্রতিদিন সকালে ওই মাছ বিক্রেতার কাছ থেকে টাটকা মাছ খেয়ে দিনটা শুরু হয় সবিতা দেবীর এই বিড়াল দলের। ৫০০ গ্রাম থেকে আবার কোনওদিন ১ কেজি অবধি টাটকা মাছ। সবিতা দেবীর দাবি মেনে সকালে আগে ওই বিড়ালগুলিকে পিস করে কেটে খাইয়ে যেতে হয় মাছ বিক্রেতা তুফান পালকে। তার জন্য খরচ বহন করেন সবিতা দেবী।সকালে পাড়ায় মাছ বিক্রেতা হাজির হলেই তার ডাকে সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যায় বিড়ালগুলি। রীতিমতো মাছ বিক্রেতার সাইকেলের সামনে পথ আটকে সবিতা দেবীর উঠান অবধি মাছ বিক্রেতাকে নিজেরাই নিয়ে যায় বিড়ালগুলি। সচরাচর এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় না কোথাও। সকালে সংসারের কাজের পাশাপাশি বিড়ালগুলির খাওয়া দাওয়া সেরে স্কুলে চলে যাওয়া, আবার স্কুল থেকে ফিরে দুধ ভাতের সঙ্গে কোলাকন্দ মাখা সন্দেশ সহকারে কেজি চালের ভাতের থালা বাড়ির উঠানে ধরে সবিতা দেবী একডাক দিলেই একসঙ্গে হাজির হয়ে যায় বিড়ালগুলি।খাবার সেরে আবার পাড়ায় এদিক ওদিক বেড়াতে চলে যায় তারা। রাতে বিড়ালদের জন্য কখনও রুটি আবার কখনও ভাতের বন্দোবস্ত করেন সবিতা দেবী। রাতের খাবার খেয়ে বাইরে খোলা জায়গায় না থেকে সবিতা দেবীর বাড়িতেই সোফায় রাত্রিযাপন বিড়ালগুলির। তবে এরা সবিতাদেবীর বাড়ির কোনও পোষা বেড়াল নয়, পাড়ার অলিগলি ঘুরে বেড়ানো বেড়ালের দল এরা। শুরুর দিকে একজনের সঙ্গে আলাপ হয় সবিতা দেবীর। আর ধীরে ধীরে এই স্কুল শিক্ষিকার পশু প্রেমের টানে এবং পরম আদরযত্নে বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১৪ টি।তবে সবিতা দেবীর পশু প্রেমে কোনও আপত্তি নেই তার স্বামী ও সন্তানদের। তারাও সঙ্গ দেন সবিতা দেবীর এহেন কাজে। এমনটাই জানাচ্ছেন সবিতা পান। তিনি আরও বলেন, ছোট থেকেই পশু প্রেমী, অবলা প্রাণীদের প্রতি একটা টান ছিলই। শুরুতে একটা বিড়াল বাড়ির উঠানে ঘুরাফেরা করতো তাকে আদরযত্ন করে খাওয়াতাম ধীরে ধীরে পাড়ার আরও অন্যান্য বিড়ালগুলি তার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। সকালে মাছ বিক্রেতাকে দিয়ে মাছ খাওয়ানো বাধ্যতামুলক। স্কুল যাওয়ার সময় এক কেজি সরু চালের ভাত সঙ্গে দুধ আর মাখা সন্দেশ মেখে খাইয়ে যেতে হয়। স্কুল থেকে সাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় ওরা ঠিক বুঝতে পেরে যায়,পেছন পেছন চলে আসে।বাড়ি ফিরে ওদের খাওয়ার বন্দোবস্ত করি। রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির সোফায় সকলে একসঙ্গে রাত্রিযাপন করে। শুধু খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব নয় কারও কোনও শারিরীক অসুস্থতা বুঝতে পারলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে থাকেন সবিতা দেবী। স্কুল শিক্ষিকার এহেন পশু প্রেমে মুগ্ধ এলাকাবাসী। যেখানে সারমেয় থেকে বিড়াল ছানা পিটিয়ে মারা বা হত্যার মতো ঘটনা আকছার ঘটতে দেখা যায়, সেদিক দিয়ে চন্দ্রকোনার এই স্কুল শিক্ষিকার পশু প্রেম নজির বলাই চলে।