• প্রযুক্তির কারণে সাহিত্যচর্চা কমছে? যা বললেন হর্ষবর্ধন নেওটিয়া ও সন্দীপ ভুতোরিয়া
    আজ তক | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • সাহিত্য আজতকের আগের সেশন তখনও চলছে। তারই মাঝে এসে পৌঁছালেন সৌম্যদর্শন এক ব্যক্তি। গায়ে কালো শাল। চুপিসাড়ে বসে রইলেন দর্শকদের মাঝে, একপাশে। কে বলবেন, ইনিই বাংলা তথা দেশের অন্যতম বড় শিল্পপতি হর্ষবর্ধন নেওটিয়া! অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান। পরবর্তী সেশন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক উদ্যোগের বক্তা। সঙ্গে সমাজকর্মী সন্দীপ ভুতোরিয়া, প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের ম্যানেজিং ট্রাস্টি। সেশনের শুরুতেই হর্ষের কাছে জানতে চাওয়া হল, এত সাধারণ কীভাবে থাকেন?হর্ষবর্ধন: আমি পোগ্রাম চলার সময়ে কাউকে বিরক্ত করতে চাইনি। তাই আলাদা করে দূরে বসেছিলাম। সাহিত্যের সঙ্গে ব্যবসার যোগ কী?

    হর্ষবর্ধন: আমরা রাজস্থানের। ১২০ বছর আগে বাংলায় আমার পূর্বপুরুষরা আসেন যেটা কর্মভূমি, তার সংস্কৃতির সঙ্গে সকলের যুক্ত হওয়া উচিত। আমাদের বাড়িতে সাহিত্য, কলা, শিল্প, দর্শনের চর্চা ছিল। ছোটবেলায় আমাদের যৌথ পরিবারে সকলের আলাদা আলাদা পছন্দ, চিন্তাধারা ছিল।

    ছোটবেলায় খেলতে না গিয়ে আমাকে বিভিন্ন সাহিত্যিকদের সঙ্গে বসতে বলা হত। বিরক্ত হতাম। কিন্তু এখন যেন মনে হয় সেগুলির প্রভাবে আজ অনেক কিছু শিখতে, বুঝতে পেরেছি। 

    সাহিত্য থেকে ব্যবসাক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়েছে?
    হর্ষবর্ধন: সিমেন্ট ছেড়ে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় এসেছিলাম। আমার আর্কিটেকচারে আগ্রহ। সেটাও একটা শিল্প-কলা। আবার হোটেলের ব্যবসায় যখন এলাম। সেখানেও শিল্প-কলার যোগ।ছোটবেলায় নিজে থেকে যেগুলি শিখেছি, সেগুলিই আমি ব্যবসা ক্ষেত্রে লাগানোর চেষ্টা করি। 
    সামাজিক কাজের ক্ষেত্রে সাহিত্যের প্রভাব কী?সন্দীপ: সাহিত্যের আমাদের কাজে বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে। আমরা সাহিত্যিকদের প্ল্যাটফর্ম প্রদান করি।আপনার(হর্ষ নেওটিয়া) সংস্থায় অনেকেই পড়াশোনার পর চাকরি করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য পড়লে ছাত্রদের জীবনে কী প্রভাব পড়ে?

    হর্ষবর্ধন: সাহিত্য একজনের সামগ্রিক গঠনে সাহায্য করে। এটি যে কোনও পেশায়। মহাকাব্য, সাহিত্য যে পড়েছে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কাজের ক্ষমতা উন্নত হয়। অনেকে আজকাল ভাবেন এটি কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা জরুরি। 
    সন্দীপ: আমরা হিন্দু লেখকদের জন্যও ইংরাজী লেখকদের সমান সম্মান শুরু করি। আমরা হিন্দু লেখকদের জন্যও সমান প্ল্যাটফর্ম দেওয়া করি। আমরা এরপর আঞ্চলিক ২২টি আলাদা ভাষায় লেখকদের নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করি। তারা এখন ইংরাজী লেখকদের পেরিয়ে বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। আপনি নিয়োগের সময়ে ইংরাজী ভাষা দক্ষতায় কেমন জোর দেন?

    হর্ষবর্ধন: এটা সত্যি যে ইংরাজীর কাজ করার মতো বলার ক্ষমতায় আমরা যোগ দিই। কিন্তু যেহেতু আমাদের ব্যবসায় লেনদেন, গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ, অ্যাকাউন্ট মেনটেনের জন্য ইংরাজী লাগে। আর সেই কারণেই ইংরাজীর ন্যূনতম প্রয়োজন লাগে। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যাঁদের ইংরাজী ভাষায় জোর নেই, তাঁদের অনেকেই ভাল কাজ করেন। 

    ইংরাজী শেখার ফলে কি হিন্দি সাহিত্য বিপদে পড়ে?
    সন্দীপ:  সাহিত্য রুচি। ইংরাজী ভাষা শিখলে হিন্দি সাহিত্য দূর্বল হওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি সাহিত্যই রুচিভিত্তিক। সাহিত্য ও ভাষা আলাদা।

    বাংলায় উদ্যোগ জগতে সাহিত্য ও খেলার প্রভাব
    হর্ষ: আমার সম্পূর্ণ কর্মজীবনের কেন্দ্র বাংলা। অন্য রাজ্যে কেমন সেটা হয় তো জানি না। কিন্তু এটা জানি, এখানকার মানুষের একটা শিল্পের প্রতি ঝোঁক, শ্রদ্ধা আছে। আমার মনে হয় মহারাষ্ট্রেও এটা আছে। প্রতিটি রাজ্যেই এটা আলাদা-আলাদা স্তরে। বিহারে আবার যেমন সরকারি চাকরির জন্য় প্রচেষ্টা করা সেখানকার বিশেষত্ব। দক্ষিণ ভারতে যেমন আবার অঙ্ক করার প্রবণতা বেশি। তাই সেখানে আইটি-র দৌড় প্রথম শুরু হয়। 

    এটা বিশ্বের নিয়ম, প্রতিটি স্থানের ধরণের উপরেই সেখানকার শিল্প, ব্যবসা নির্ভর করে। বাংলায় যেমন ধরুন যে দুর্গাপুজো হয়, তার থেকে বড় শিল্প প্রদর্শনী বিশ্বের খুব কম জায়গাতেই হয়। 

    আগামিদিনে যুবসমাজ কীভাবে সাহিত্য পড়বে?
    সন্দীপ- আমার মনে হয় সেটা এখনকার যুবসমাজ সেটা ভালভাবেই জানে। ওদের ভাবনা অত্যন্ত দ্রুত হারে এগিয়ে চলেছে। আপনি ওদের ভাবনার সঙ্গে দ্রুত হারে এগোতে পারবেন না। আমি বিশ্বের বিভিন্ন অল্পবয়সীদের দেখে বলছি, ওরা একটা ভিন্ন স্তরেই এগোচ্ছে। যুবসমাজ নিজে থেকেই শিখছে, নিজেদের মতো করে এগিয়ে চলেছে। 

    প্রযুক্তি আসার পর সাহিত্যের বিকাশ হবে না রোধ হবে?
    সন্দীপ- এখনও, এই যুগেও তো যুব কবি আসছেন কত! কবিতার যে শিল্প, এই নতুন প্রযুক্তি, যেমন ইনস্টাগ্রামে কুমার বিশ্বাসের ফলোয়িং দেখুন। উনিও তো নিজের প্রতিভা কে এভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। 

    হর্ষ- ডিজিটাল মিডিয়া তো সত্যিই দুনিয়া বদলে দিয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে কোনও সেভাবে ক্ষতি হচ্ছে, তা নয়। তবে একটি হয় তো সমস্যা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে ধৈর্য্য কমে যাচ্ছে। আগে একটি চিঠি লিখতাম, ট্রাঙ্ক কল করতাম, অনেক বেশি সময় লাগত। আর এখন একটা SMS করলেও তার জবাব পেতে একটু দেরি হতেই আমরা অধৈর্য্য হয়ে পড়ি।
  • Link to this news (আজ তক)