দখল ও দূষণ থেকে মুক্ত হয়ে কবে স্বমহিমায় ফিরবে লক্ষ্মণ সেনের দিঘি'
২৪ ঘন্টা | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শ্রীকান্ত ঠাকুর: কথিত আছে, রাজা লক্ষ্মণ সেনের আমলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বেশ কয়েকটি বড় জলাশয় বা দিঘি খনন করা হয়। তার মধ্যেই এই তপন দিঘি অন্যতম। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী তপন-অঞ্চলে পানীয় জল ও চাষের জলের সমস্যা দীর্ঘকালীন এবং এলাকার কৃষিজমিতে চাষের জল ও পানীয় জলের সুবিধা করতেই এই দিঘি খনন করান লক্ষ্মণ সেন। এমনকি, এই দিঘিতেই তিনি তর্পণ করতে আসতেন বলেও জনশ্রুতি।
প্রায় ৮৪ একর জমিতে পরিব্যাপ্ত এই জলাশয়। তপন গ্রামের মধ্যস্থলে অবস্থিত এই দিঘি-এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা স্থানীয় প্রায় সাড়ে চারশো একর জমিতে চাষের জল এবং মৎস্যচাষিদের ভরসার জায়গা। সরকারি ব্যবস্থাতেই এই সমস্ত কাজগুলি এতদিন হয়ে এসেছে। কিন্তু ২০১২ সালে রাজ্যে পালাবদল হতেই তপন দিঘিকে ঘিরে তৎকালীন বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা প্রথমে দুটি রিসর্ট তৈরি করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই রিসর্ট বন্ধ হয়ে যায়।এরপর ২০১৯ সালে এই তপন দিঘিকে ঘিরেই বড় প্রকল্প গ্রহণ করে রাজ্য সরকার। প্রথম দফায় বরাদ্দ হয় ৩৭ কোটি টাকা। তবে কী প্রকল্প? প্রকল্পের উদ্দেশ্য কী? কী কী করা হবে?-- এ বিষয়ে কোনও ওয়ার্ক অর্ডার বা ওয়ার্ক শিডিউল প্রকল্প-এলাকায় কখনোই টাঙানো হয়নি। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কবে হবে? প্রকল্পের উদ্দেশ্য কী? সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনিক মহলেও সেভাবে স্পষ্ট ধারণা নেই কোনও আধিকারিকের। অথচ বিগত প্রায় পাঁচ বছর ধরে তপন দিঘির চারপাশে বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ হয়েছে। প্রথম দিকে কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ হলেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। বেশ কিছু নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০১৯ সালে ৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু হয় এবং এই প্রকল্পের আওতায় প্রথমেই দিঘির চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এবং এর আগেই ৮৩ একর দিঘির পাড় বেহাত হয়েছে অনেকটাই। দখল করে নিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সে দখল মুক্ত করা যায়নি বরং ঘুরপথ দিয়ে দিঘির জমি হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক একর। সীমানা প্রাচীর দেওয়ার ফলে এখন জমিতে জল দেওয়ার যে প্রকল্প তা-ও বন্ধ রয়েছে। মাছ চাষ এখন আর স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ করতে পারেন না। অভিযোগ, দিঘিতে জল ঢোকা বা বেরনোর রাস্তা আর রাখা হয়নি, ফলে দিঘির বিভিন্ন জায়গায় চড়া পড়েছে, জল নেই। দিঘির সৌন্দর্য বাড়াতে মাটি তোলার কাজও বন্ধ রয়েছে। শুধু একের পর এক কংক্রিটের বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে দিঘির পাড় জুড়ে। দ্রুত দিঘি সংস্কার করে জলাশয়কে কংক্রিটমুক্ত করা হোক, ফিরিয়ে দেওয়া হোক তপন দিঘির পুরনো সৌন্দর্য-- এমনই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।অবশ্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অম্বরীশ সরকার জানিয়েছেন, এই প্রকল্পটি রাজ্য মৎস্য দফতরের পরিচালনায় অ্যাগ্রো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট করছে। একসঙ্গে অনেকগুলি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ট্যুরিজমকে যেমন এই প্রকল্পের মাধ্যমে আকৃষ্ট করা হবে, তেমনই জলাশয়ে মাছ চাষ এবং সেই মাছকে সংরক্ষণের জন্য আধুনিক মানের ফ্রিজারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নির্মাণকাজের ৮০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু কবে এই প্রকল্প শেষ হবে, তা পরিষ্কার করে বলতে পারেননি সহকারী সভাধিপতি।স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, উন্নয়ন হোক, কিন্তু তা প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে। তপন দিঘির মতো বড় জলাশয় যাতে তার পুরনো রূপ ফিরে পায় সেই দাবিতেই সোচ্চার স্থানীয় বাসিন্দারা।