সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: পশ্চিমবঙ্গ বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের গ্রাউন্ডে প্রবেশ করতেই একদিকেই নজর গেল। ৪১তম মহিলা সিনিয়র স্টেট বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল চলছিল তখন। কোর্টে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সাত ফুটের একটি চেহারা। ছোটবেলায় একটা কথা শুনতাম, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে। পুনম চতুর্বেদিকে দেখে এই কথাটাই মনে এল। আর পাঁচটা মেয়ের থেকে তিনি আলাদা। কারণ উচ্চতায় তিনি সাত ফুট। অর্থাৎ ভারতের তো বটেই, এশিয়ার সব থেকে লম্বা বাস্কেটবল খেলোয়াড়। কার্যত তিনি ভারতের সবচেয়ে লম্বা মেয়েও। রেলওয়ের হয়ে জাতীয় বাস্কেটবল খেলতে এসেছেন কানপুরের ২৮ বছরের মেয়েটি। স্মৃতি উস্কে দিলেন সাত আটের দশকে কলকাতায় জাতীয় বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে খেলতে আসা বিহারের দীর্ঘকায় খেলোয়াড় সুনীল পান্ডা বা অনিল শ্রীবাস্তবের। তবে দু"জনেই পুরুষ। একটি মেয়ের সাত ফুট উচ্চতা মুখের কথা নয়। কলকাতার মানুষ ভিড় জমায় শুধুমাত্র পুনমকে দেখার জন্য। এদিন বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের কোর্টে এক বৃদ্ধা পুনমকে দেখে অবাক। বলেই ফেললেন, "কি ঢাঙ্গা রে বাবা, এ যে দেখি তালগাছকেও হার মানাবে!" তবে জীবন সংগ্রাম সহজ ছিল না পুনমের। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁর উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি হয়ে যায়। তারপর তাঁকে খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত করার কথা ভাবেন তাঁর বাবা। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ এই জায়গায় তিনি। পুনম বলেন, "ক্লাস টেনে পড়ার সময় আমার উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি হয়ে যায়। আমার বাবার এক বন্ধু আমাকে কোনও খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেয়। তারপর কানপুরের গ্রিনপার্কে যাই। সেখানে আমাকে বিক্রম স্যার বাস্কেটবল খেলার পরামর্শ দেন। তারপর ট্রায়াল দিই। সেখান থেকে দু"বছর আগ্রাতে ছিলাম। তারপর উইমেন্স ন্যাশনালে অংশ নিই। ২০১১-২০১৯ পর্যন্ত ছত্তিশগড়ে ছিলাম। জুনিয়র ন্যাশনাল, সিনিয়র ন্যাশনাল খেলি। ২০১৯ সালে কলকাতায় ইস্টার্ন রেলওয়েতে যোগ দিই।" এশিয়ান গেমসে অংশ নিয়েছিলেন। আগামীতে নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্য নেই। একটাই মন্ত্র, ভাল খেলে যাওয়া। পুনম বলেন, "আমি ভাল খেলতে চাই। হাতে বল এলেই বাস্কেট করতে চাই। এশিয়ান গেমসে খেলেছিলাম। যে টুর্নামেন্টেই খেলি, সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আরও সাফল্য চাই।" কলকাতায় এসে মুগ্ধ। পরিবেশও খুব ভাল লেগেছে তাঁর। পুনম বলেন, "কলকাতায় খেলতে ভাল লাগছে। এত লোক এসেছে দেখতে। এটাই দারুণ।" কানপুরের বাস্কেটবল প্লেয়ার জানান, সাতবছর আগে ব্রেন টিউমার হয়েছিল তাঁর। সেই জীবনযুদ্ধ জয় করে এগিয়ে চলেছেন তিনি। যাবতীয় প্রতিকূলতার মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব রাখাই তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই প্রসঙ্গে পুনম বলেন, "আমার শরীর এখন ঠিক আছে। চড়াই-উতরাই চলতেই থাকে। সবারই হয়। এটার নামই জীবন। তবে সব পরিস্থিতিতে পজিটিভ থাকাই আসল চ্যালেঞ্জ।" বাবা, মা, ভাইদের নিয়ে সংসার। বাবা, ভাই উত্তর প্রদেশের পুলিশে চাকরি করে। এমনিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনমের। তবে কোথাও গেলে সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রথমে এই বিষয়টিতে লজ্জা পেলেও এখন এটাই তাঁর হাতিয়ার। জানেন, বাকিদের থেকে এখানেই আলাদা তিনি।