• এগিয়েও হার, সুপার সিক্সের লড়াইয়ে 'প্রাক্তনী'তে বিদ্ধ ইস্টবেঙ্গল...
    আজকাল | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • জামশেদপুর - ২ (রেইতাচিকাওয়া, মানজোরো)ইস্টবেঙ্গল - ১ ( নন্দকুমার)আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক গোলে এগিয়েও হার। ইস্টবেঙ্গলের দুঃখগাথা অব্যাহত। টাটার শহর থেকে খালি হাতে ফিরছে কার্লেস কুয়াদ্রাতের দল। বৃহস্পতিবার জামশেদপুরের কাছে ১-২ গোলে হারল লাল হলুদ। তাও আবার এগিয়ে গিয়েও জোড়া গোল খায়। ৮০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পর শেষ ১০ মিনিটে দু"গোল হজম। ম্যাচের নায়ক জেরেমি মানজোরো। ফ্রিকিক থেকে গোল করে জামশেদপুরকে জয়ে ফেরালেন স্পেনের বংশোদ্ভূত ফরাসি ফুটবলার। নয়ের দশকে রিলিজ করেছিল মার্কিন সুপারহিট সিনেমা "দ্য মাস্ক অফ জোরো।" জোরোর জীবনের সত্যি ঘটনার অবলম্বনে বানানো হয়েছিল এই ছবি। স্পেনের সৈনিকদের বিরুদ্ধে নিজের দেশের লোকজনকে বাঁচিয়েছিলেন জোরো।‌ এদিন ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগে স্প্যানিশ কোচের দলের বিরুদ্ধে জামশেদপুরের "মান" রাখলেন আরেক "জোরো।" রাকিপের ভুলের খেসারত দিতে হল কলকাতার প্রধানকে। জামশেদপুরের দ্বিতীয় গোলের পর সাইডলাইনে রাগত ভঙ্গিমায় ফুটবলারদের দিকে কিছু ইঙ্গিত করতে দেখা যায় কুয়াদ্রাতকে। হওয়াই স্বাভাবিক। সুপার সিক্সের লড়াইয়ে স্বপ্ন দেখিয়েও আশাভঙ্গ। ১৭ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে উঠে এল জামশেদপুর। অন্যদিকে ১৫ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে আট নম্বরেই থাকল ইস্টবেঙ্গল। তবে এই স্কোরলাইন "পোয়েটিক জাস্টিস" বলা যায়। দু"দলই গোলের সুযোগ পেলেও অনেক বেশি দাপট ছিল জামশেদপুরের। প্রথমার্ধে নাকানি-চোবানি খায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচ শেষ করে দিতে পারত খালেদ জামিলের দল। ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায় লাল হলুদ। কিন্তু শেষপর্যন্ত "প্রাক্তনী" কাঁটায় বিদ্ধ ইস্টবেঙ্গল। বদলার ম্যাচে খালেদ, চিমা, সিভেরিওর জয়। দ্বিতীয়ার্ধে চিরাচরিত তুকতাকে ফেরেন জামশেদপুর কোচ। বিরতির পর জার্সি বদল করেন। সঙ্গে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। তাতেই হাতছাড়া হতে বসা ম্যাচ থেকে এল ফুল পয়েন্ট। এবারও আইএসএলে পরপর দুই ম্যাচ জেতা হল না ইস্টবেঙ্গলের। খেলল জামশেদপুর, গোল করল ইস্টবেঙ্গল। জেআরডি টাটা কমপ্লেক্সে প্রথমার্ধের নির্যাস এটাই। গোটা ৪৫ মিনিট ধরে জামশেদপুর ঝড় আঁচড়ে পড়ে লাল হলুদ রক্ষণে। হিজাজি, প্যান্টিচদের নাভিশ্বাস ছুটিয়ে দেয় চিমা, সিভেরিও এবং ইমরান। ত্রিভূজ আক্রমণে কেঁপে যায় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। বিরতিতে অন্তত দু"তিন গোলে এগিয়ে যেতে পারত জামশেদপুর। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাব। পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের পায়ের জঙ্গলে আটকে যায় যাবতীয় আক্রমণ। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে গতিশীল ফুটবলে বিপক্ষের রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টি করলেও গতির বিরুদ্ধে গিয়ে বিরতির ঠিক আগের মুহূর্তে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে ক্লেইটনের শট প্রতিহত হওয়ার পর নন্দকুমার বল পান। ঠান্ডা মাথায় জামশেদপুর কিপার টিপি রেহনেশের পায়ের মাঝখান দিয়ে বল জালে রাখেন। ইস্টবেঙ্গলের উইঙ্গার বল পাওয়ার আগে ক্লিয়ার করার সুযোগ ছিল মৈরামের কাছে। তার ভুলেই গোল হজম করে জামশেদপুর। তবে আগাগোড়াই দাপট ছিল খালেদ জামিলের দলের। ম্যাচের ৬ মিনিটে পেনাল্টি পেতে পারত জামশেদপুর। ইমরানকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন হিজাজি। নিশ্চিত পেনাল্টি। কিন্তু রেফারি ক্রিস্টাল জন জামশেদপুরের আবেদনে কর্ণপাত করেনি। ম্যাচের ১২ মিনিটে শাননের পাস থেকে মানজোরোর শট বাইরে যায়। দু"মিনিটের মধ্যে আবার সুযোগ। ম্যাচের ১৪ মিনিটে ইমরানের কোনাকুনি জোরালো শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। একের পর এক আক্রমণ আঁচড়ে পড়ে লাল হলুদ রক্ষণে। কিন্তু তেমনই নষ্টের বহর। ম্যাচের ২৯ মিনিটে ইমরানের শটে কোনওক্রমে পা ছোঁয়ান হিজাজি। তারপর সিভারিওর শট ব্লক করেন শৌভিক। সদ্য ইস্টবেঙ্গল থেকে জামশেদপুরে যোগ দিয়েছেন সিভেরিও। পুরনো দলের বিরুদ্ধে গোল করতে মরিয়া ছিলেন। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে চিমার শট বাঁচায় প্রভসুখন গিল। পরের মুহূর্তেই সিভেরিওর হেড বাঁচান লাল হলুদ কিপার। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ঝাঁঝ বেশি ছিল হোম টিমের। শুধু গোল‌ পেতে দেরী হয়। নীচে নেমে ডিফেন্ড করতে দেখা যায় ক্লেইটনকেও। এদিন চার বিদেশি নিয়ে শুরু করেন কুয়াদ্রাত। ফরমেশন ৪-২-৩-১। রিজার্ভে ফেলিসিও ব্রাউন। রক্ষণে হিজাজির সঙ্গে জুড়ে দেন প্যান্টিচকে। শুরুর দিকে কয়েকটা ভাল সেভও করেন। অভিষেক ম্যাচে লাল হলুদ জার্সিতে গোলও পেতে পারতেন। কিন্তু তাঁর হেড বাঁচান লাকরা।‌ শেষ ১০ মিনিট বাদ দিলে দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা সংগঠিত ফুটবল খেলে ইস্টবেঙ্গল। গতি কমিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগও ছিল। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে নিশুর ক্রস থেকে বিষ্ণুর হেড পোস্টে লাগে। আরও দু"একটা সুযোগ তৈরি হলেও গোল আসেনি। প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা উন্নতি করলেও শেষপর্যন্ত শেষরক্ষা হয়নি। দুই সুপারসাবের যুগলবন্দিতে ম্যাচে সমতা ফেরে। ৮১ মিনিটে ১-১ করে জামশেদপুর। নিখিল বালার ক্রস থেকে হেড রেইতাচিকাওয়ার। ম্যাচের ৬৫ মিনিটের মাথায় ভাস্কুয়েজকে তুলে ফেলিসিওকে নামান কুয়াদ্রাত।‌ কিন্তু নজর কাড়তে পারেননি দীর্ঘ চেহারার বিদেশি। ম্যাচের অন্তিমলগ্নে জেরেমি মানজোরোর ফ্রিকিক থেকে করা গোলে তিন পয়েন্ট ঘরে তোলে জামশেদপুর। বক্সের ঠিক মুখে চিমাকে ফাউল করেন রাকিপ। ফ্রিকিক দেন রেফারি। মানজোরোর ফ্রিকিক ক্লেইটনের মাথা ছুঁয়ে গোলে ঢুকে যায়। 
  • Link to this news (আজকাল)