• সন্দেশখালি সামাল দিতে পারবে রাজ্য সরকার'
    আজকাল | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • বিভাস ভট্টাচার্য: কোথাও রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি। আবার কোথাও গাছের ডাল জড়ো করে রাস্তায় আগুন। উদ্দেশ্য, পুলিশকে বাধা দেওয়া। নেতৃত্বে পুরোপুরি গ্রামের মহিলারা। আরও বড় হচ্ছে কি সন্দেশখালির আন্দোলন? না দেখা যাচ্ছে লালগড়ের ছায়াও? শুক্রবার দুপুরের পর সেই প্রশ্নই উঠে এসেছে। বাম আমলে পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএম ও পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগে শুরু হয়েছিল প্রতিবাদ। ২০০৭-০৮ সালে ঝাড়গ্রামের রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে শুরু হয়েছিল স্থানীয়দের প্রতিবাদ। যা প্রথমে গ্রাম্য বিবাদের "মোড়কে" ফেলার চেষ্টা হলেও পরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। যেটা প্রথমে ধিকিধিকি করে জ্বলছিল সেটাই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। গোটা রাজ্য জুড়ে পড়ে তার প্রভাব। কলকাতা থেকে বুদ্ধিজীবীরা গিয়ে দাঁড়ান আন্দোলনকারীদের পাশে। একটা সময় এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় বাম সরকার নিয়ন্ত্রণ আর রাখতে পারেনি। এই দুই আন্দোলনের মধ্যে একটা বিষয়ে যথেষ্টই মিল রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিল স্থানীয় স্তরে কিছু সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে। যেখানে ছিল দাদাগিরি ও বঞ্চনার অভিযোগ। ক্ষোভের আগুন এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডের বাড়ি ভাঙচুর করেন গ্রামবাসীরা। এলাকাছাড়া হয়ে যায় অনুজ-সহ আরও কয়েকজন সিপিএম নেতা। একেবারেই কোনঠাসা হয়ে পড়ে সিপিএম। তৈরি হয় লালগড় আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা। রাজ্য জুড়ে লালগড় আন্দোলনকারীদের সমর্থনে পথে নামেন বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও। সন্দেশখালির দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখানেও বিক্ষোভ বিশেষ কয়েকজনকে ঘিরেই। এক নম্বরে যদি শেখ শাহজাহান থাকে, তবে দুই এবং তিন নম্বরে অবশ্যই শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দার। যাদের সঙ্গে শাসকদলের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ উঠে এসেছে। এদের মধ্যে শেষের দু"জন গ্রেপ্তার হলেও প্রথমজন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই একই অভিযোগ। ন্যায্য পাওনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে তাকে ভয়ের লাঠির সামনে মাথা নামাতে বাধ্য করা। বিশেষত শাহজাহান, শিবু এবং উত্তমের দিকে জমি দখলের অভিযোগের সঙ্গে রয়েছে গরীব মানুষের পাওনা থেকে বঞ্চিত করা।মহিলাদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে।সন্দেশখালির আন্দোলনের বর্তমান গতিপ্রকৃতি এটাই ইঙ্গিত করে, মানুষের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছিল যা এখন বাইরে এসেছে। যার প্রমাণ, এদের সম্পত্তির ওপর মানুষের রাগের বহিঃপ্রকাশ। এদের সম্পত্তিতে আগুন লাগানো থেকে ভাঙচুর সবই হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার নিজে এলাকায় দু"বার গেলেও বা বঞ্চিতদের জন্য অভিযোগ গ্রহণের শিবির তৈরি করা হলেও ক্ষোভ কিন্তু এখনও প্রশমিত করা যায়নি। বারবার পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস যোগানোর চেষ্টা করা হলেও সন্দেশখালিতে এখনও সেই আশ্বাস পুরোপুরিভাবে মানুষের মন ছোঁয়নি। যার প্রমাণ, প্রতিদিন বাড়তে থাকা গন্ডগোল।স্বীকার করা হোক বা না হোক, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্যের শাসকদল এইমুহূর্তে সন্দেশখালিতে "ব্যাকফুটেই" আছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই আন্দোলন কতদিন চলবে বা আগামীদিনে আরও বড় হয়ে উঠতে পারবে কিনা। লালগড় আন্দোলনের নেপথ্যে উঠে এসেছিল মাওবাদীদের সক্রিয় যোগদানের বিষয়টি। তাঁরাই টেনে নিয়ে গেছিলেন এই আন্দোলন। সন্দেশখালির আন্দোলনে এখনও সেরকম কিছু জানা যায়নি। কিন্তু সেই প্রশ্নটার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে, একদিনে এই আন্দোলনের জমি তৈরি হয়নি। শাসকদলের স্থানীয় মুষ্টিমেয় কয়েকজনের লুটেপুটে খাওয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভটা অনেকদিন ধরেই ছিল। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এখন। দেখার বিষয়, শাসকদল কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়। ক্ষোভকে মর্যাদা দিয়ে মেনে নিয়ে না পুলিশের হাতে আরও লম্বা লাঠি তুলে দিয়ে?
  • Link to this news (আজকাল)