মধ্যরাতে ডিজির লঞ্চ সফর, সন্দেশখালি কি দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম' বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ!
২৪ ঘন্টা | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
অয়ন ঘোষাল: শনিবার সকালে ইকোপার্কে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। সন্দেশখালি কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে? জানতে চাওয়া হলে দিলীপ ঘোষ বলেন, "ওই জায়গা কোনওদিন কন্ট্রোলে ছিল-ই না। আজ পুলিস আধিকারিক এবং তৃণমূলের নেতারা যাচ্ছেন। বছরের পর বছর ওখানে অত্যাচার হয়েছে। কেউ খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন? আজ মানুষের পিঠ দেওয়ালে থেকে গিয়েছে। তারা রাস্তায় নেমেছেন। রাজীব কুমার গিয়ে বলছেন ৮ দিনে ঠিক করে দেব। এরকম কত ৮ দিন চলে গিয়েছে। ঠিক করেননি কেন? কোথায় ছিলেন? দিনের পর দিন ধর্ষণ, অত্যাচার হয়েছে। থানায় গিয়ে ফিরে এসেছেন। অভিযোগ নেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েতে ভোট লুঠ হয়েছে। ভেড়ি দখল হয়েছে। পুলিস অভিযোগকারীদের থানা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্যে সন্দেশখালির মতো এরকম বহু জায়গা আছে।" রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সন্দেশখালির সঙ্গে নন্দীগ্রামের তুলনা টেনেছেন। এখন সন্দেশখালি কি দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম? সেই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, "নন্দীগ্রাম একটা গেম চেঞ্জার ছিল। এটা দেখেও বহু মানুষ প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাবেন। নন্দীগ্রামের মতো পরিস্থিতি অনেক জায়গায় তৈরি হবে। সাধারণ মানুষ নিজের হাতে ঝাণ্ডা তুলে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নিচ্ছেন। তারা এখন কোনও পার্টিকেই খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মানুষকে নিজের রাস্তা নিজেই খুঁজে নিতে হচ্ছে।"
পাশাপাশি সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের কর্মসূচি প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, "রাজ্যে এরকম বহু এলাকা আছে যেখানে এক-একজন গুন্ডাকে নেতা বানানো হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম শেখ শাহাজাহান। দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনা। নদিয়া। মালদা। মুর্শিদাবাদ। যারা মাফিয়া ছিল তারা নেতা হয়ে গেছে। তারা হাতেখড়ি করেছে সিপিএম-এর আমলে। পরে তৃণমূলের হাত ধরেছে। পঞ্চায়েতের সমস্ত সিট ওদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এরা স্মাগলার। যারা গরু, কয়লা, ফেনসিডিল, সোনা পাচার করে। একটা লোক এমন নয় যে ঠিকঠাক আছে। তারাই তৃণমূলের কিংপিন। তারাই টাকা দেয়। তারাই ভোট করায়। তৃণমূল দলটা এদের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে। তাদের গায়ে হাত পড়ে না। এমন সব জায়গা যেখানে ইডি, সিবিআই চট করে গিয়ে কিছু করতেও পারবে না। সেখানে মানুষ বুঝেছে তাদের ধর্ম-সংস্কৃতি, মানসম্মান রক্ষা করতে গেলে তাদের নিজেদেরকেই রাস্তায় নামতে হবে।" একই দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করেছেন ডিজি রাজিব কুমারের মধ্যরাতের লঞ্চ সফরকেও। তাঁর কথায়, "লোকেট করতে গিয়েছিল? নাকি শাহাজাহানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল? উনি নিজে কীভাবে কোর্ট এবং সিবিআই-এর হাত থেকে লুকিয়ে ছিলেন, সেই ট্রেনিং দিতে গিয়েছিলেন! শাহাজাহানের গায়ে কেউ হাত দেবে না। বলেছে ভরসা রাখুন! কোন পুলিসের ওপর মানুষ ভরসা রাখবে? জমি কেড়ে নিয়ে নোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়ি করা হয়েছে। পুলিস অভিযোগ নেয়নি। সেই পুলিসের ওপর কে ভরসা রাখবে?" প্রসঙ্গত, ১০ মার্চ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় সন্দেশখালি যাবেন বলে ঘোষণা করেছেন। যে প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের চাঁছাছোলা কটাক্ষ, "ওকে কে পাত্তা দেয়। দুধের ছেলেকে কেউ পাত্তা দেয়? দুধের বোতল নিয়ে রাজনীতি করছেন। উনি তৃণমূলের জন্য বড় নেতা হতে পারেন। যারা তৃণমূলের মাধ্যমে করে খায় তাদের জন্য উনি বড় নেতা। কিন্তু বাকি পশ্চিমবঙ্গের কে পোছে ওনাকে? কি অবদান ওনার? কী যায় আসে?" উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে ভোজেরহাটে বিজেপি মহিলা মোর্চাকে আটকায় পুলিস। আটক করা হয় লকেট চট্টোপাধ্য়ায়কে।যে প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, "তৃণমূল ভয় পেয়েছে। পুলিস ভয় পেয়েছে। কারণ ভিতরে সাধারণ মানুষ আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের সাহস বেড়েছে। তারা পুলিসকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। পুলিস হাতজোড় করছে। চোখ রাঙাচ্ছে। ফল হচ্ছে না। বাকি যারা তাদের পাশে দাঁড়াতে ওখানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের আটকানোর চেষ্টা চলছে। বিজেপি শুরু করেছিল। তারপর বাকি বিরোধীরা যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সমস্ত কমিশন গেছে। কিছু একটা লুকোনোর চেষ্টা চলছে।" একইসঙ্গে দিলীপ ঘোষের দাবি, "গত নির্বাচনে ওরা ৪২টা আসন পাওয়ার দাবি করেছিল। ২২-এ নেমেছিল। এবার আগে ঘর সামলাক। তৃণমূলকে অন্যদিকে তাকাতে হবে না। যা শুরু হয়েছে, তাতে এমনিতেই ওরা খালি হয়ে যাবে। ২২টা রাখতে পারবেন তো? কেউ বলছে ১৯, কেউ ১৫। আমার তো মনে হয় আরও এক ডজন সিট কমে যাবে।"