• লক্ষ্য প্যারিস অলিম্পিক, বিশ্বের একনম্বরকে হারানোর রহস্য ফাঁস করলেন ঐহিকা...
    আজকাল | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: আগের বছর ঠিক এইসময় জানতেন না আর টেবিল টেনিস ব্যাট হাতে তুলতে পারবেন কিনা। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কোমরে গুরুতর চোট পান। উঠে দাঁড়ানো কষ্টকর ছিল। খেলা তো দূর অস্ত। সেই জায়গা থেকে প্রত্যাবর্তন করে গত বছরই কেরিয়ারের সেরা পর্যায় পৌঁছে যান ঐহিকা মুখোপাধ্যায়। পান অর্জুন পুরস্কার। তার থেকেও বড় বিষয়, বুসানে বিশ্ব টেবিল টেনিস টিম চ্যাম্পিয়নশিপে কেরিয়ারের সেরা জয় তুলে নেন। বিশ্বব়্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে থাকা চীনের সুন ইংশাকে হারান বাংলার টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। বিশ্বের একনম্বর প্যাডলারের বিরুদ্ধে সাফল্যের রহস্য ফাঁস করলেন তিনি। শুক্রবারই শহরে ফিরেছেন। শনিবার বিকেলে ধনুকা ধানশেরি সৌম্যদীপ পৌলমী টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধিত করা হল। বর্তমানে দেশের দুই অর্জুন টিটি খেলোয়াড়ের অ্যাকাডেমিতেই অনুশীলনরত ঐহিকা। বুসানে সাফল্যের পুরস্কারস্বরূপ তাঁর হাতে এক লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন অ্যাকাডেমির কর্ণধার অতুল ধনুকা। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ঐহিকার সতীর্থ সুতীর্থা মুখার্জি। ছিলেন সৌম্যদীপ রায় এবং পৌলমী ঘটকও। বিশ্বমঞ্চে সেরা টিটি খেলোয়াড়কে হারানোর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন ঐহিকা। জানান, তিনি নিজেই একনম্বর প্যাডলারের মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন। বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন। ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর মনে মনে ভেবেছিলেন, বিশ্বের একনম্বর খেলোয়াড়ও মানুষ। তাঁরও দুটো হাত রয়েছে। শেষমেষ হাল না ছাড়ার পুরস্কার মেলে। ঐহিকা বলেন, "ম্যাচের আগের দিন রাতের মিটিংয়ে আমি বলেছিলাম আমি সুন ইংশার বিরুদ্ধে খেলতে চাই। তারপর আমাকে ডি গ্রুপে ফেলা হয়। ওর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলাম। একটুও ঘাবড়ে যাইনি। আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। আমার থেকে যারা ভাল, তাঁদের বিরুদ্ধে খেলতে চাই। খুশি হয়ে প্র্যাকটিস শুরু করি। ডাবলসে চীনের খেলোয়াড়দের হারানোয় আত্মবিশ্বাস ছিল। ম্যাচের শুরুতে আমি কিছু পয়েন্ট পাই। দ্বিতীয় গেম হেরে যাই। আবার তৃতীয় গেম জিতি। তারপর ভাবলাম যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। বিশ্বের একনম্বরও তো রক্তমাংসের মানুষ। দু"জনেরই দুটো হাত আছে। শেষপর্যন্ত আমি ম্যাচটা জিতে যাই।" বিশ্বমঞ্চে ভারতের মেয়েদের দলগত সাফল্য প্যারিস অলিম্পিকের দরজা প্রায় খুলে দিয়েছে। ৫ মার্চ অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার খবর ঘোষিত হবে। তবে আন অফিশিয়ালি টিম হিসেবে ভারতের খেলা নিশ্চিত। প্রি-কোয়ার্টারে পৌঁছনোর জন্য বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে ওপরে উঠে আসায় অলিম্পিকের টিকিট মিলবে। তবে ভারতীয় দলের হয়ে কারা প্রতিনিধিত্ব করবে, সেটা এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। মনিকা বাত্রা, শৃজা আকুলা একপ্রকার নিশ্চিত। আরও দুটো স্পট খালি আছে। সামনে দুটো টুর্নামেন্ট আছে। সেখানে ভাল পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া। সেসব নিয়ে অবশ্য ভাবতে চান না ঐহিকা।‌ সামনেই সিঙ্গাপুর ওপেন। সুতীর্থার সঙ্গে আবার জুটি বেঁধে খেলবেন। আপাতত সেদিকেই ফোকাস। তবে প্যারিস অলিম্পিকের টিকিট পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। ঐহিকা বলেন, "অলিম্পিকের দল ঘোষণার পর প্রস্তুতি শুরু হবে। অবশ্যই আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে। ডব্লিউটিটি টুর্নামেন্ট খেলে যেতে হবে। স্ট্রেন্থ, পাওয়ারে উন্নতি করতে হবে। টিম জানার পর সূচি পরিবর্তন করব। ৪-৫ মার্চ ঘোষণা হওয়ার কথা। অঙ্ক অনুযায়ী আমরা কোটা পেয়ে গিয়েছি।‌ টিটিএফ দল বাছাই করবে। সৃজা, মনিকা এমনিও জায়গা পাবে। আমারও সুযোগ রয়েছে। দলে জায়গা পেলে অলিম্পিক থেকে পদক আনার চেষ্টা করব।" অলিম্পিকের জন্য বিদেশি কোচের দিকে ঝুঁকতে চান না ঐহিকা। ভরসা রাখতে চান সৌম্যদীপ, পৌলমীর ওপর। আগে পরিকাঠামোর অভাব ছিল ভারতে। কিন্তু বর্তমানে সবেতেই উন্নতি ঘটেছে বলে জানালেন বাংলার প্যাডলার। ঐহিকা বলেন, "আমাদের কোচরা খুব ভাল করছে। ক্লাবে সৌম্যদীপ দা, পৌলমী দির মতো প্রাক্তন টিটি প্লেয়ার আছে। আমাদের সাপোর্ট স্টাফ দেওয়া হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে মানসিক, শারীরিক ট্রেনিং চলছে। গত ৩-৪ বছর ধরে সবকিছু ঠিক দিকেই এগোচ্ছে।" মার্চের শুরুতেই সিঙ্গাপুর পাড়ি দেবেন টুর্নামেন্ট খেলতে। তার আগে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে চান। খেলা না থাকলে এভাবেই সময় কাটান সেরেনা উইলিয়ামসের ভক্ত। একইসঙ্গে নিজের জন্য আলাদা সময়ও রাখেন। যখন সিনেমা দেখে, গান শুনে কাটান। তবে অবসর সময় সবচেয়ে পছন্দ বই পড়া। বাবা গৌতম মুখার্জি যখন কার্গিলে ছিলেন তখন থেকেই টেবিল টেনিসে যাত্রা শুরু ঐহিকার। মোটা হয়ে যাচ্ছিলেন বলে মাত্র ৩-৪ বছর বয়সেই মা টেবিল টেনিসে ভর্তি করে দেন। নৈহাটির মিহির ঘোষ অ্যাকাডেমিতে পথ চলা শুরু ছোট্ট ঐহিকার। নৈহাটির সেই মেয়েই এখন অলিম্পিকের পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ছবি: অভিষেক চক্রবর্তী
  • Link to this news (আজকাল)