মায়ের গয়না বিক্রির টাকায় ক্রিকেট! ফিফটির পর স্যালুট কি কার্গিল যোদ্ধার জন্য'
২৪ ঘন্টা | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাঁচির জেএসসিএ ইন্টারন্য়াশনাল স্টেডিয়ামে চলছে ভারত-ইংল্য়ান্ড চতুর্থ টেস্ট। রবিবার অর্থাৎ আজ তৃতীয় দিনের দুপুরে শিরোনামে একজনই ক্রিকেটার। তিনি গোটা বিশ্বকে ব্য়াট হাতে বুঝিয়ে দিলেন যে, তিনি আগামীর সেই নায়ক যিনি বাইশ গজে থাকতে এসেছেন। কথা হচ্ছে ধ্রুব জুরেলকে (Dhruv Jurel) নিয়ে। বছর তেইশের আগ্রার উইকেটকিপার-ব্যাটারের। তিনি ব্য়াট হাতে ত্রাতার ভূমিকায় উত্তীর্ণ হতে না-পারলে, রাঁচি টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসের স্কোর নিয়ে লেখার মতো কোনও সুযোগ থাকত না। ব্রিটিশদের প্রথম ইনিংসে করা ৩৫৩ রানের জবাবে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায় ৩০৭ রানে। ইংল্য়ান্ড যে মাত্র ৪৬ রানের লিড নিতে পেরেছে। তার সিংহভাগ কৃতিত্ব প্রাপ্য এই ধ্রুবরই।রাজকোট ছিল ধ্রুবর জীবনের প্রথম টেস্ট। সরজরাফ খানের সঙ্গেই তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়। রাজকোটে ধ্রুব আউট হয়েছিলেন ৪৬ রানের ইনিংসে। ব্য়াট হাতে জ্বলে না উঠলেও, উইকেটকিপিংয়ে মাতিয়ে ছিলেন তিনি। তবে রাঁচিতে ধ্রুবর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছিল অত্যন্ত কঠিন। জীবনের দ্বিতীয় টেস্টে তিনি যখন ব্য়াট করতে নেমেছিলেন তখন ভারতের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৬১ রান। কিছুক্ষণের মধ্য়ে তা হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১৭৭। ধ্রুবকে কিন্তু টলাতে পারেননি ব্রিটিশষ বোলাররা। কুলদীপ যাদবকে সঙ্গে নিয়ে ৭৬ রানের যুগলবন্দি করেন তিনি। এর সঙ্গেই বেন স্কোটকসদের অভিধানে জুড়ে দেন 'ফ্রাস্টেশন' শব্দটি। ধ্রুব এদিন ১৪৯ বলে ৯০ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন। সাতে নামা ব্য়াটার হাঁকান ৬টি চার ও ৪টি ছয়।মন্থর গতিতে ব্য়াট চালানো শুরু করেছিলেন। গিয়ার বদলের খেলায় সংযমী থেকেই হয়ে ওঠেন আগ্রাসী। ইংল্য়ান্ড বোলারদের সুযোগ পেয়েই দেন বেদম প্রহার। গতকাল ৩০ রানে অপরাজিত থাকা ধ্রুব এদিন যখন জীবনের প্রথম টেস্ট ফিফটি করেন, তখন সাজঘরে বসা অধিনায়ক রোহিত উঠে দাঁড়িয়ে তালি দিয়ে সাধুবাদ জানান। আর ধ্রুব যখন আউট হয়ে ফেরেন। তখন প্রতিপক্ষের প্রাক্তন ক্য়াপ্টেন ও ৩১ টেস্টের মালিক জো রুট তাঁর পিঠ চাপড়ে দেন। যে ব্রিটিশ ব্য়াটারকে এই প্রজন্মের সেরাদের দলেই রাখা হয়। রুটের সার্টিফিকেট নিয়েই মাঠ ছাড়েন ধ্রুব। ড্রেসিংরুমে এগিয়ে আসার সময়ে, ভারতীয় দলের সতীর্থদের থেকে পান স্ট্যান্ডিং ওভেশন। ধ্রুব এদিন হাফ-সেঞ্চুরির পর সেল্য়ুট সেলিব্রেশন করেছেন। যা নিয়ে বিস্তর চর্চাও হয়েছে। কারণ ধ্রুবর স্য়ালুটেও রয়েছে ইতিহাস। ধ্রুবর বাবা নেম সিং ভারতীয় সেনার প্রাক্তন হাবিলদার। যিনি কার্গিল যুদ্ধে লড়েছেন। একটা সময়ে বাড়ির লোক ধ্রুবর ক্রিকেট খেলার খরচ সামলাতে পারছিলেন না। তাঁরা চেয়েছিলেন ছেলে খেলা ছেড়েই দিক। ধ্রুবর মা তাঁর একমাত্র সোনার চেইন বিক্রি করে ছেলেকে প্রথম ক্রিকেট কিট কিনে দেন। কারণ ধ্রুব জেদ করে নিজেকে বাড়ির শৌচাগারে বন্ধ করে রেখেছিলেন। এই ধ্রুবই মাত্র ১৩ বছর বয়সে আগ্রা ছেড়েছিলেন ক্রিকেটের টানে। ক্রিকেট নিয়েই বাঁচেন তিনি। ধ্রুব ১৬টি প্রথম শ্রেণির (৮৩৬ রান), ১০টি লিস্ট এ (১৮৯ রান) ও ২৩টি টি-২০ ম্য়াচ (২৪৪ রান) খেলেছেন। ধ্রুব আইপিএল খেলেন রাজস্থান রয়্য়ালসের হয়ে।