সমীর ধর, আগরতলা: লোকসভা ভোট সামনে রেখে ত্রিপুরার রাজনীতিতে ফের জাতিগোষ্ঠীগত মেরুকরণের ইঙ্গিত। এবার কেন্দ্রকে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বাধ্য করতে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই আমরণ অনশনে বসার হুমকি দিলেন ত্রিপুরার রাজবংশের উত্তরাধিকারী, তিপ্রা মথা পার্টির সুপ্রিমো প্রদ্যোতকিশোর মানিক্য দেববর্মা। জরুরি ভিত্তিতে রবিবার আগরতলার মানিক্য কনক্লেভ-এ দলের সব বিধায়ক, স্বশাসিত জেলা পরিষদ সদস্য, দলীয় পদাধিকারী ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর দলের সভাপতি বিজয়কুমার রাংখল জানান, তেলিয়ামুড়ার হাতাইকতর-এ মথা-র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অনশনে বসবেন। এক সাক্ষাৎকারে খোদ প্রদ্যোতকিশোর বলেন, আমি আমার তিপ্রাসাদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না। গত এক বছর ধরে কেন্দ্রের সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছি, দশ-দশদিন করে দিল্লিতে অপেক্ষা করেছি, অনেক অমর্যাদা আর অপমান সহ্য করেছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে আসা এ কে মিশ্রের সঙ্গে সব জনজাতি-ভিত্তিক দল এমনকি বিজেপি-র জনজাতি নেতাদেরও কথা হয়েছে। আশ্বাস মিলেছে। কিছুই করা হয়নি।তিনি বলেন, তিন দিনে উত্তরাখন্ড তৈরির সিদ্ধান্ত হতে পারে, কাশ্মীর তিন ভাগ হতে পারে। ত্রিপুরার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে এতদিন লাগে ? শরীর অসুস্থ, তবুও সামনে থেকেই অনশনে নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন। বলেন, "মৃত্যু হলে ওই হাতাইকতরেই আমার সমাধি হবে। এর জন্য দায়ী থাকবে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার।" প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রদ্যোতকিশোরের তিপ্রা মথা-র কাঁধে ভর করেই বিজেপি ত্রিপুরায় সরকারে ফিরতে পেরেছে। এরপর রাজ্য মন্ত্রিসভায় মথা-র যোগদান নিয়েও জোর জল্পনা চলেছে। বিজেপি ত্রিপুরার দুটি লোকসভা আসনেই দলীয় প্রার্থী দেওয়ার প্রশ্নে অনড় অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতির মোড় ঘুরতে থাকে। মথা-সুপ্রিমো আবার পুরোনো দাবি তুলে বলেন, বিজেপি বা কংগ্রেস যে দলই "সাংবিধানিক সমাধান"-এর লিখিত আশ্বাস দেবে, তাদের সঙ্গেই লোকসভা নির্বাচনে জোট হবে। গত সপ্তাহে হঠাৎ প্রদ্যোতকিশোর প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে করেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা আগের মতো উত্সাহ দেখাননি বলে জানা গেছে। বামেরাও বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আর মথা-র সঙ্গে সমঝোতায় যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না । এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-র সঙ্গেই দর-কষাকষির শেষ রাস্তা হিসেবে "আমরণ অনশন"-এর হুমকি। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ ।