• চা বাগানে কীটনাশক ব্যবহারের অভিনব পদ্ধতি
    আজকাল | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অতীশ সেন, ডুয়ার্স: এক কাপ গরম চা"য়ে চুমুক দিয়ে আমাদের সাধারণত সকাল হয়। কারণে অকারণে চা পান করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও এই চায়ে চুমুক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের অজান্তে অনেক সময় আমরা বিষপান করে থাকি। সাধারণ কাঁচা চা পাতা প্রস্তুতির অনেকগুলি স্তর পেরিয়ে তবেই "চা" অসাধারণ হয়ে ওঠে। চা প্রস্তুতির এই ধাপ গুলির মাঝে কোনও স্তরেই চা পাতাকে জল দিয়ে ধোয়া, পরিস্কার করা বা চা পাতায় লেগে থাকা কীটনাশক দূরকরার কোনও প্রক্রিয়া করা হয় না। ফলে চা বাগানে ব্যবহৃত কীটনাশক খুব সহজেই আমাদের চায়ের কাপ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সাধারণত তা সহ্যসীমার মধ্যে থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে এর কুপ্রভাব দেখা দিতে পারে। এরই সঙ্গে প্রকৃতি, পরিবেশে, বন্য জন্তু থেকে নদীর বাস্তুতন্ত্রেও এই কীটনাশক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যা কমাতে এবং চা নিরাপদ করে তুলতে চা বাগানগুলি টি বোর্ড অনুমোদিত কম বিপজ্জনক কীটনাশকের ব্যবহারের পাশাপাশি পোকা রুখতে বিকল্প পদ্ধতির দিকে ঝুঁকেছিল। এবার ডুয়ার্সের বেশ কিছু চা বাগানে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অভিনব পদ্ধতি নিতে দেখা গেল। তারা চা গাছের বদলে বাগানে থাকা ছায়া প্রদানকারী গাছ বা "শেড ট্রি"তে কীটনাশক স্প্রে করছেন। এতে চা পাতায় কীটনাশকের প্রভাব যেমন কমছে, তেমনি "লুপার" পোকার আক্রমণ রুখতে এই পদ্ধতি বিশেষ কার্যকরী হয়ে উঠছে বলে জানা গিয়েছে। চা বাগানে সাধারণ লুপার, হেলোপেলটিস, লাল মাকড়সা, গ্রিন ফ্লাই সহ বিভিন্ন শোষক পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। গেন্দ্রাপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার প্রীতম বড়ুয়া জানান, কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করার জন্য শেড ট্রির গায়ে পেঁচানো হয় রঙ বেরঙের প্লাস্টিক, তাতে লাগানো হয় আঠা। আর এই মরণ ফাঁদেই ঝাঁপিয়ে পড়ে চা গাছের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন শোষক পোকা ও পতঙ্গ। সাধারণত চা গাছের শোষক পোকা হেলোপেলটিস রোখার জন্য নীল রঙ এর প্লাস্টিক এবং অন্যান্য শোষক পোকা, লাল মাকড়শা রোখার জন্য হলুদ প্লাস্টিকে আঠা লাগিয়ে চা বাগানের শেড ট্রি তে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও ছোট ছোট খুপরি ঘর বানিয়ে তার ভেতরের দেওয়ালে আঠা লাগিয়ে রাতে তাতে আলো জ্বালিয়ে পোকাদের আকৃষ্ট করা হয়। লুপার ক্যাটারপিলারকে এই আঠা বা আলোর ফাঁদ দিয়ে খুব সামান্যই রোখা যায়। লুপার এক ধরনের মথ, এগুলি সাধারণত ছায়া গাছে ১৫ থেকে ২০ ফুটের মধ্যে ডিম পাড়ে। পিউপা গুলি সরু সুতোর মতো জাল বানিয়ে শেড ট্রি থেকে ঝুলে চা গাছে নেমে আসে। রাতে এগুলি চা বাগানে নেমে পাতা খেয়ে শেষ করে দেয়। দিনে আবার সেগুলি শেড ট্রি"তে আশ্রয় নেয়। এর ফলে চা গাছে কীটনাশক স্প্রে করেও অনেক সময়েই লুপার এর বংশবিস্তার ও তাদের আক্রমণ রোখা যায় না। লুপার রুখতে ছায়া গাছে স্প্রে করার এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর হচ্ছে বলেই প্রীতম বাবু জানান। টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন এর গবেষক ড: বুদ্ধদেব দাস জানান লুপারের আক্রমণ রুখতে ছায়গাছে অনেক উঁচু পর্যন্ত কীটনাশক স্প্রে করাটা খুবই কার্যকরী। টি.আর.এ"এর সুপারিশ মেনে বিভিন্ন চা বাগান এই পদ্ধতি গ্রহণ করা শুরু করেছে।
  • Link to this news (আজকাল)