• আমরণ অনশন শুরু করেও জরুরি তলবে ফের দিল্লি পাড়ি প্রদ্যোতকিশোরের...
    আজকাল | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • সমীর ধর: বেশ ঘটা করেই বুধবার "আমরণ অনশন" শুরু করেছিলেন। কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যেই আবার জরুরি তলবে দিল্লি উড়ে গেলেন  "বুবাগ্রা"(রাজা) তথা তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোতকিশোর বিক্রম মানিক্য দেববর্মা। বড়মুড়া পাহাড়ে জাতীয় সড়কের পাশে হাতাই-কতরের মঞ্চে ত্রিপুরার শেষ মহারাজা, প্রদ্যোতকিশোরের দাদু বীরবিক্রম কিশোর মানিক্যের বিরাট প্রতিকৃতিতে ফুলমালা দিয়ে অনশন যখন শুরু হয় তখন বেলা দুপুর। অনশনে প্রদ্যোতকিশোরের সঙ্গে বসে পড়েন তিপ্রা মথা-র প্রথম সারির নেতা-নেত্রীরাও। মঙ্গলবারই একবার দিল্লিতে কথা বলে দৃশ্যত হতাশা নিয়ে ফিরেছিলেন। বুধবার এক ঘন্টার মধ্যেই  অনশনস্থল থেকে আগরতলা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় বড়মুড়া-র হাতাই-কতরে নিজের কালো রঙের দামি গাড়ির বনেটের ওপর দাঁড়িয়ে প্রদ্যোতকিশোর বলে গেলেন, এবার দিল্লি থেকে আর খালি হাতে ফিরবেন না। জমায়েত হওয়া কয়েক হাজার উদ্বেলিত জনজাতি নারী-পুরুষ কর্মী সমর্থকের "বুবাগ্রা জিন্দাবাদ" জয়ধ্বনি তখন বড়মুড়ার নীল পাহাড়ের গা থেকে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছিল। ঠিক যেমন করে, ২০১৮-র বিধানসভা ভোটের আগে কাছেরই  খামতিংবাড়িতে দলের দিনের জাতীয় সড়ক অবরোধ থেকে "তিপ্রাল্যান্ড জিন্দাবাদ" ধ্বনির প্রতিধ্বনি ফিরে গিয়েছিল। তখন নেতা ছিলেন এন সি দেববর্মা। তাঁর দল আইপিএফটি পরে বিজেপি মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়। তিনি মন্ত্রী হন। অবশ্য প্রদ্যোতকিশোর আগেই ঘোষণা করেছেন, তাঁর ধন সম্পদ রাজপ্রাসাদ বৈভবের অভাব নেই। কোনো মন্ত্রী হতেও চান না। তাঁর লড়াই নিজের জন্য নয়, তিপ্রাসা বা ত্রিপুরার জনজাতি সন্তানদের সমস্যার স্থায়ী সাংবিধানিক সমাধানের জন্য। সেটা যে কী, স্পষ্ট বলেননি। তবে বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, তাঁদের পরিবারের শাসিত "স্বাধীন" ত্রিপুরা রাজ্য ১৯৪৯ সালে ভারতে যোগ দেওয়ার পর থেকে  তিপ্রাসারা নাকি নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে গেছেন। এর সাংবিধানিক সমাধান করতে হবে। তাঁর ইঙ্গিত, "তিন দিনে পৃথক উত্তরাখন্ড রাজ্য হতে পারে, তিন ঘন্টায় জম্মু-কাশ্মীর তিন ভাগ হতে পারে। ত্রিপুরার ক্ষেত্রে এক বছরেও কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি পালন করছে না।"  কথায় স্পষ্ট, ২০২৩ বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ  প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন উন্মাদনাময় "গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড" ধ্বনিতে তিনি প্রবল অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি ঢেউয়ের মধ্যেও জাতিগত ভোট বিভাজনের পথে বিজেপিকে সরকারে ফিরতে সাহায্য করেছিলেন। এবার লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কী "লিখিত প্রতিশ্রুতি" আসে তার অপেক্ষায় তেলিয়ামুড়ার বড়মুড়াতে "আমরণ অনশন" চালিয়ে যাচ্ছেন মথা-র নেতা কর্মীরা। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, প্রদ্যোতকিশোর যা-ই হাতে নিয়ে আসুন, লোকসভা ভোটের জন্য  পূর্ব ত্রিপুরা জনজাতি সংরক্ষিত আসনে শাসক জোটের পক্ষে জাতি-জনজাতির সমর্থন বিভাজনের ন্যারেটিভ প্রস্তুত করা হয়ে গেছে।
  • Link to this news (আজকাল)