• উত্তর ভারতের একমাত্র কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে ‘‌অপারেশন লোটাস’‌...
    আজকাল | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • ‌আবু হায়াত বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস সরকার গভীর সঙ্কটে। একদল বিধায়কের ‘‌বিদ্রোহে’ ক্ষমতা হারানোর পথে সুখবিন্দর সিং সুখু সরকার। সঙ্কটের নেপথ্যে বিজেপির ‘‌অপারেশন লোটাস’‌। যদিও বিজেপি শিবির বলছে, কংগ্রেসের নিজেদের বিধায়করা বিদ্রোহ করছে, এতে বিজেপির কোনও হাত নেই।‌ এদিকে, সরকার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ময়দানে নেমেছে হাত শিবির। দলের নেতা ডি কে শিবকুমার, ভুপিন্দর সিং হুডা কথা বলছেন বিধায়কদের সঙ্গে। বিধায়কদের অভিযোগ ও দাবিগুলি শুনে কংগ্রেস সভাপতিকে রিপোর্ট পেশ করবেন তারা। সূত্রের খবর, দুই নেতাকেই বার্তা দেওয়া হয়েছে, যেভাবেই হোক হিমাচলে সরকার বাঁচাতে হবে। এরজন্য যদি সুখবিন্দর সিং সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী থেকে সরতে হয় হোক। লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনও ভাবেই ওই রাজ্যে ক্ষমতা হারাতে রাজি নয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, দলের অধিকাংশ বিধায়কই সুখবিন্দর সিং সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী পদে চাইছেননা। তাঁদের অধিকাংশই অভিযোগ সুখুর বিরুদ্ধে। দলের বিধায়করা গুরুত্ব পাননা বলেও অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের পুত্র সুখু মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বুধবার। এবং তিনি সরাসরি নিশানা করেছেন সুখবিন্দর সিং সুখুকে। তাঁর প্রয়াত বাবার প্রতি মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু বিন্দুমাত্র সম্মান দেখাননি বলে অভিযোগ করেছেন। বাবার মূর্তি বসাতে জমি চেয়ে পাননি। অথচ, মৃত্যুর পরও এই পাহাড়ি রাজ্যে বীরভদ্রই কংগ্রেসের মুখ। মানুষ তাঁর মুখ চেয়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফিরিয়েছিল বলে দাবি করেন বিক্রমাদিত্য। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, কংগ্রেস বিধায়কদের বিদ্রোহের কারণে উত্তর ভারতের একমাত্র রাজ্যটিও হারানোর পথে কংগ্রেস। মঙ্গলবার রাজ্যসভার একটি আসনে ভোট হয় হিমাচলে। বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে অনায়াসে জয় পাওয়ার কথা ছিল অভিষেকমনু সিংভির। কিন্তু দলের ৬ বিদ্রোহী বিধায়কের ক্রস ভোটিংয়ের জেরে তিনি হেরে যান। মোট ৯ জনের ক্রস ভোটিংয়ের জেরেই জেতা আসন হারাতে হয়। বিজেপি প্রার্থী হর্ষ মহাজন জয়ী হন। কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, দলের বিদ্রোহী বিধায়ক, যারা মঙ্গলবার রাজ্যসভার ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন তাঁদের পিছনে রয়েছেন বীরভদ্রের পুত্র বিক্রমাদিত্য। হিমাচলে কংগ্রেসের এই পরিস্থিতির জন্য বিক্রমাদিত্যকে কাঠগোড়ায় তুলছেন তারা। এদিনই বিধানসভার ৬ বিদ্রোহী বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজের আবেদনের শুনানি হয় বিধানসভার স্পিকারের সামনে। দলবিরোধী আইন মেনে এই শুনানি হয়। হিমাচল বিধানসভার স্পিকার কুলদীপ সিং পাঠানিয়া শুনানি শেষে রায়দান সুরক্ষিত রেখেছেন এদিন। এদিকে,কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘হিমাচলে সরকার বাঁচানোই এইমুহুর্তে আমাদের অগ্রাধিকার। কারণ সেখানকার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখান করে আমাদের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। সব বিধায়কের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’‌ একইসঙ্গে জয়রাম ক্রস ভোটিংয়ের বিষয়টি নিয়ে দল কড়া পদক্ষেপ করতে পিছপা হবেনা। এদিকে, সরকার বাঁচাতে সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানো হতে পারে। এদিনই দুপুরে রটে যায় সুখু ইস্তফা দিয়েছেন। পরে অবশ্য সুখু দাবি করেন,‘‌আমি পদত্যাগ করিনি। আমাকে কেউ বলেওনি। আমি শেষ দেখে ছাড়ব। পাঁচ বছর সরকার চলবে।’‌ তিনি জানান, বিজেপির কিছু বিধায়ক নাকি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।এদিকে, রাজ্যসভার ভোটে অপ্রত্যাশিত জয় পেয়েই বিজেপি দাবি তুলেছে মুখ্যমন্ত্রী সুখুর পদত্যাগের। কংগ্রেস সরকার গরিষ্ঠতা হারিয়েছে বলে দাবি তোলে তারা। কংগ্রেস সরকার ফেলতে আস্থাভোটের দাবি জানিয়ে রাজ্যপাল শিবপ্রতাপ শুক্লের কাছে দরবার করে বিজেপি। নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা জয়রাম ঠাকুর। দাবি করেছেন, নীতিগত ভাবে কংগ্রেসের এই রাজ্যে আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। এদিনই হিমাচল বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে হট্টগোল বাধে। বাজেট পাশ করানোর আগেই বিজেপি বিধায়কদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় সুখু সরকারকে। শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলনেতা জয়রাম ঠাকুর-সহ ১৫ জন বিজেপি বিধায়ককে বহিষ্কার করে পাশ করানো হয় বাজেট।
  • Link to this news (আজকাল)