• Himachal Rajya Sabha Election : হিমাচলে কি আপাতত গোললাইন সেভ হাত শিবিরের? দিনভর নাটক পাহাড়ি রাজ্যে
    এই সময় | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • জেতা আসন মাত্র ২৫টা তো কী হয়েছে? চেষ্টা তো করা যেতেই পারে! বিজেপির অন্দরে নাকি মঙ্গলবার সারাদিনই এমন আলোচনা চলেছে। কংগ্রেসের ৬ জন বিধায়ক-সহ ৯ জন বিধায়ককে ‘ভাঙিয়ে’ রাজ্যসভার ভোটে নিজেদের প্রার্থী হর্ষ মহাজনকে জেতাতে পেরে আরও আত্মবিশ্বাস বাড়ে গেরুয়া শিবিরে। তখন থেকে বুধবার সারাদিনই চলে কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিয়ে হিমাচল প্রদেশের ক্ষমতা দখল নিয়ে টানটান উত্তেজনা।রটে যায় মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সুখু ‘সরকার বাঁচাতে’ ইস্তফা দিয়েছেন। তবে তিনি নিজেই জানান, কেউ তাঁকে পদত্যগ করতে বলেননি। ও তিনি তেমন কিছু করেননি। তিনি ‘যোদ্ধা।’ অবশেষে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাত শিবির, কারণ প্রয়াত প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং তাঁর পদত্যাগ প্রত্যাহার করে নেন।এ দিন সকালেই ‘বাবাকে দল সম্মান দেয়নি’ দাবি করে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, বীরভদ্রের স্ত্রী প্রতিভা সিং ও ছেলেকে কাজে লাগিয়েই কংগ্রেস ভাঙতে চেয়েছিল বিজেপি। তা আপাতত হলো না। তবে হাত শিবিরের এই ‘স্বস্তি’ কতদিন স্থায়ী হবে, সে প্রশ্ন থাকছেই।মঙ্গলবার থেকেই কংগ্রেস শাসিত হিমাচল প্রদেশে ‘অপারেশন লোটাস’ আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। রাজ্যসভায় বিজেপি প্রার্থী জয়ী হওয়ার পরই রাজ্যপালের কাছে আস্থা ভোটের দাবি জানান হিমাচলের বিরোধী দলনেতা জয়রাম ঠাকুর। সূত্রের খবর, বিজেপি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করে, আস্থা ভোট হলে কংগ্রেস সরকার থাকবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে তারা। কারণ দলীয় বিধায়করা সকলে সরকারকে সমর্থন করছেন না।বিজেপির এই পরিকল্পনাকে তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ‘জনগণের ভোটে জয়ী হয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে হিমাচল প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপি মানুষের রায়কে টাকা দিয়ে কিনতে চাইছে।’ তবে এটুকু বলেই বসে থাকেনি শতাব্দী-প্রাচীন দল। তারা তড়িঘড়ি শিমলা পাঠায় কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ও দলের ‘মুশকিল আসান’ ডি কে শিবকুমার, জয়রাম রমেশ ও ভূপেশ বাঘেল ও ভূপিন্দর সিং হুডাকে।তাঁরা স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন। রমেশ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সরকার বাঁচবেই। নির্বাচিত সরকার এ ভাবে ফেলে দেওয়া যায় না। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। এই আবহেই কংগ্রেস সরকারের সঙ্কট আরও বারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সুখদেব সিং সুখুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন বিক্রমাদিত্য সিং।যদিও তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি সুখু। সংবাধমাধ্যমকে বিক্রমাদিত্য বলেন, ‘আমাদের পিছন ফিরতে হবে এবং দেখতে হবে এই পরিস্থিতি কেন ও কী ভাবে তৈরি হয়েছে।’ তিনি ‘মনে করিয়ে’ দেন ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা। বলেন, ‘প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিং-এর নামেই যে এই ভোট হয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এমন কোনও ব্যানার বা পোস্টার ছিল না, যেখানে তাঁর ছবি ছিল না।’তিনি এ-ও দাবি করেন, ‘গত এক বছরে আমি সরকারের কাজকর্ম নিয়ে একটি কথাও বলিনি। কিন্তু এখন বলতে হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল হিমাচলের মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক, আস্থার সম্পর্ক। সরকার বিধায়কদের অবহেলা করে কাজ করছে। তাঁদের কণ্ঠরোধ করছে।’ পরে অবশ্য বিক্রমাদিত্য ইস্তফা তুলে নিয়ে বলেন, ‘দলের জন্য, মানুষের জন্য থেকে গেলাম।’ঘটনাচক্রে, নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হওয়ার পর সুখবিন্দর সিংকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রথম দাবিদার হিসেবে বিক্রমাদিত্য সিংয়ের মা তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রতিভা সিংকে দেখা হচ্ছিল। অসন্তোষ তখন থেকে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লষকদের অনেকেই।তবে সূত্রের খবর, দুই নেতাকেই বার্তা দেওয়া হয়েছে, যে ভাবেই হোক হিমাচলে সরকার বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী থেকে সরতে হয় হোক। লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনও ভাবেই ওই রাজ্যে ক্ষমতা হারাতে রাজি নয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, দলের অধিকাংশ বিধায়কই নাকি সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী পদে চাইছেন না। দলের বিধায়করা গুরুত্ব পাননা বলেও অভিযোগ। তবে এই নিয়ে আপাতত ‘বিদ্রোহ’-এ ইতি পড়ায় বিশেষ কিছু আলোচনা হয়নি।এ দিকে, বুধবারই বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে হিমাচলে। অধিবেশনের শুরুতেই বিজেপি বিধায়করা অধ্যক্ষ কুলদীপ সিং পাঠানিয়ার কক্ষে গিয়ে শুরু করেন স্লোগান দেওয়া। এরপরই বিধানসভার সচিবালয় থেকে বিজেপির ১৫ বিধায়ককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। অঙ্ক বলছে, এর ফলে আস্থা ভোট হোক আর বিজেপি অনাস্থাই আনুক — কোনও ভাবেই গেরুয়া শিবির ম্যাজিক নম্বরে পৌঁছতে পারবে না।
  • Link to this news (এই সময়)